বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দুই বছর আগে জার্মানিতে একটি আইন কার্যকর হলেও তা বেশি কাজে আসেছ না বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
নারী অধিকার গোষ্ঠী টেরে ডেস ফেমেস-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, ''ওই আইন কার্যকরের পর থেকে প্রতি সপ্তাহেই জার্মানিতে বাল্যবিয়ে হচ্ছে৷ এই আইনের কার্যকারিতা নগণ্য৷''
বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ২০১৭ সারের ২২ জুলাই এ সংক্রান্ত আইন কার্যকর করে জার্মানি৷ নতুন আইনে বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয় ১৮ বছর৷
পরিসংখ্যান তুলে টেরে ডেস ফেমেসের গবেষণায় বলা হয়েছে, এই আইনটি কার্যকর হওয়ার পর সারা দেশে কমপক্ষে ৮১৩টি বাল্যবিবাহ নিবন্ধিত হলেও এর মধ্যে মাত্র ১০টি বাতিল করা হয়েছে৷ এই আইন অনুযায়ী, কম বয়সের কারো বিয়ে দেয়া হলে আপনাআপনি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা৷
টেরে ডেস ফেমেসের বিশেষজ্ঞ মনিকা মিশেল বলেন, ‘‘পরিসংখ্যানগুলো সংকলন করা খুব কঠিন ছিল৷ আমরা বিশ্বাস করি, পরিসংখ্যানগুলোর চেয়ে বাল্যবিবাহের আসল সংখ্যা আরো অনেক বেশি৷ আমাদের ধারণা হলো, প্রতি সপ্তাহান্তেই জার্মানিজুড়ে বাল্যবিবাহ হচ্ছে৷''
এসআই/এসিবি (কার্স্টেন কিনিপ)
যেসব দেশে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ইউনিসেফ-এর ‘স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন’ রিপোর্টে বিভিন্ন দেশের বাল্যবিবাহের হিসাব রয়েছে৷ মেয়েদের বয়স ১৮ হওয়ার আগে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ হিসেবে গণনা করে ইউনিসেফ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/P. Hatvalne
নাইজার (৭৬%)
ইউনিসেফ বলছে, আফ্রিকার এই দেশটিতেই বাল্যবিবাহের হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷ সেখানে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৫৷ তবে এটি পরিবর্তন করে ১৮ করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার পেছনে দরিদ্রতা একটি অন্যতম বড় কারণ হিসেবে কাজ করে৷ এছাড়া বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লে সামাজিকভাবে যে হেনস্তার শিকার হতে হয়, তা এড়াতেও মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার৷
ছবি: picture alliance/Godong
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (৬৮%)
দ্বিতীয় স্থানে থাকা এই দেশটিতে মেয়েদের বিয়ে করার বা দেয়ার বৈধ সর্বনিম্ন বয়স ১৮৷ তবে বাবা-মা ১৩ বছর বয়সি মেয়েরও বিয়ে দিতে পারেন, যদি আদালত অনুমতি দেয় কিংবা মেয়েটি যদি গর্ভবতী হয়৷ বাবা-মায়ের অনুমতি সাপেক্ষে তার চেয়েও কমবয়সি মেয়েদের বিয়ে দেয়া বৈধ সেখানে৷
ছবি: Reuters
চাড (৬৮%)
২০১৫ সালের জুনে চাডের সংসদে পাস হওয়া অর্ডিন্যান্সে, মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৮ করা হয়েছে৷ এছাড়া বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িতদের জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/O.Cicek
মালি (৫৫%)
মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর৷ তবে শরিয়া আইন অনুযায়ী ১৬ বছরের কমবয়সি মেয়েদেরও বিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ কমবয়সি মেয়েদের সাধারণত দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে থাকে বেশি বয়সি পুরুষরা৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ (৫২%)
মেয়েদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ১৮, ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১৷ তবে সম্প্রতি পাস হওয়া একটি আইনে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিবেচনায় ১৮ বছরের কম বয়সিদেরও বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বুর্কিনা ফাসো (৫২%)
২০ থেকে ২৪ বছর বয়সি নারী, যাদের বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে, তাদের সংখ্যা ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউনিসেফ৷ ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে৷ বুর্কিনা ফাসোতে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার ১০ শতাংশ৷ আর ১৮ বছরের কমবয়সিদের ক্ষেত্রে হারটি ৫২ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/P.Parrot
গিনি (৫২%)
মা-বাবা’র অনুমতি নিয়ে বা না নিয়ে ১৮ বছরের ছেলে কিংবা মেয়ে সেখানে বিয়ে করতে পারেন৷ দেশটিতে যার যতজন অল্পবয়সি স্ত্রী আছে তার সামাজিক মর্যাদা তত বেশি বলে ধরে নেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. von Trotha
দক্ষিণ সুদান (৫২%)
চরম দারিদ্র্য, যুদ্ধ, দেশের অস্থির পরিবেশ, শিক্ষিতের হার কম হওয়া, মেয়েদের শিক্ষার সুযোগের অভাব - এসব নানা কারণে আফ্রিকার সবচেয়ে নবীন দেশটিতে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ অল্প বয়সি মেয়ে ও তাদের পরিবার মনে করে, বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M.Elshamy
মোজাম্বিক (৪৮%)
মেয়েদের জন্য বিয়ের বৈধ সর্বনিম্ন বয়স ১৮৷ তবে পরিবারের সম্মতিতে ১৬ বছর বয়সিরাও বিয়ে করতে পারে বা তাদের বিয়ে দেয়া যায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/S.Mohamed
ভারত (৪৭%)
মেয়েদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ১৮, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১৷ দেশটিতে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়েদের মধ্যে বিয়ের হার প্রায় ১৮ শতাংশ৷ ভারতের অনেক সমাজে মেয়েদের অর্থনৈতিকভাবে বোঝা মনে করা হয়৷ বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সেই বোঝা স্বামীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যায় বলে মনে করে অনেক পরিবার৷