1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একটি বাসযাত্রা...

সুলাইমান নিলয়
১১ জুলাই ২০১৭

সকাল সাড়ে আটটা৷ স্পট: সায়েন্স ল্যাব মোড়৷ পরপর দু'টি গাড়িতে উঠতে পারল না মেয়েটি৷ অতি কষ্টে তৃতীয় গাড়িতে উঠল৷ এটিসিএল-এর গেটে ঝুলে ঝুলে উঠে একটু জায়গা করে দাঁড়ালো মেয়েটি৷

Bangladesch Verkehrschaos in Dhaka
ছবি: DW/M. Mamun

উঠার পর ‘দেইখেন পইড়া যাইবেন' বলতে বলতে মেয়েটিকে ‘নিরাপত্তা' দিতে উনি এগিয়ে আসতে লাগলেন৷ দাঁড়ালেন, মেয়েটিকে ঘেঁষে৷ অন্যদিক থেকে এগিয়ে এলেন আরো দু'জন পুরুষ৷

মেয়েটি একজনকে হাত সরাতে বলে৷ এরপরই উপরে যেতে চায়৷ পুরুষদের একজন বললেন, ‘‘লোকাল বাস, উইঠ্যা এত লাফাঙ্গা আচরণ করেন কেন? আইজ কাইলকার মেয়েগুলা যা হইছে না!''

‘নিরাপত্তা' নিতে অনিচ্ছুক হতবাক মেয়েটি এরপর কিছু বলতেও পারছে না৷

এমন সময় গেটে ঝুলে থাকা অন্য একটি ছেলে বলল, ‘‘ভাই আপনারা একজনকে ঘিরে তিনজন দাঁড়িয়ে আছেন৷ পথ তো পুরো বন্ধ হয়ে গেছে৷ উপরে জায়গা আছে৷ আপনারা যান, নয় তো আমাকে যেতে দেন৷''

এক পুরুষের জবাব, ‘‘এইডা লোকাল বাস৷ এইভাবেই যাইতে হইবো৷ আমরা সামনেই নামবো৷ উপরে যাওন যাইবো না৷''

ছেলেটির জবাব, ‘‘লোকাল বাস মানে কি উপরে জায়গা রেখে গেটে ঝুলে থাকা? অন্যকে উপরে যেতে না দেয়া? আর এটা ঠিক লোকাল বাস না৷ এটা কাউন্টার গাড়ি৷ আপা, চেষ্টা উপরে যাওয়ার চেষ্টা করে দেখেন৷''

সুলাইমান নিলয়, সাংবাদিক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমছবি: privat

ছেলেটির সঙ্গে ওই তিন পুরুষের ঝগড়া লেগে যায়৷

এক পর্যায়ে মেয়েটি আরেকটু ভেতরে গিয়ে দাঁড়াতে পারে৷ পরে নেমেও পড়ে শাহবাগে৷ সামনে নামতে চাওয়া তিন ‘পুরুষ' তখনো ব্যস্ত খিস্তি খেউরে৷

সেই সময় একজন ‘পুরুষ' হেল্পারকে ডেকে বললো, ‘‘ওই মিয়া, বাস কি তোমার বাপের? এই মাইয়া ভাড়া না দিয়া নাইম্যা গেছে৷ দেইখ্যাই বুঝছিলাম, মাইয়াডা ফালতু...৷''

আবার সরব হলো ছেলেটি, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এক পুরুষের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো, ‘‘ভাই আপনি ভাড়া দিছেন?'' 

পুরুষ: হ্যাঁ দিয়েছি৷

ছেলেটি: কার কাছে দিয়েছেন?

পুরুষ: এই যে ওনার কাছে (হেল্পারকে দেখিয়ে)৷ 

ছেলেটি: ভাই, এটা তো কাউন্টার গাড়ি৷ টিকেট করে উঠতে হয়৷ টিকেট করে উঠলে মালিকের কাছে টাকাটা পৌঁছে৷ মালিক মানে বুঝছেন তো? যে ব্যক্তি বাপের টাকায় বা নিজের টাকায় গাড়িটা কিনছে৷ মেয়েটা ঠিকঠাক মতো টিকেট করেই গাড়িতে উঠছিল৷

পুরুষ: আপনি মিয়া বেশি বাড়াবাড়ি করতেছেন৷ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরে হেল্পারের দিকে দৃষ্টি দিয়ে) এই মিয়া, মাইয়া মানুষ উঠাও কেন পুরুষ মানুষের গাড়িতে?

ছেলেটি: ভাই, আপনি যাবেন, তারা যাবে না? আর গাড়িটা কেমনে পুরুষের হইলো? নারীদেরকে না নিলে তারা কিভাবে যাবে, কী করবে?

পুরুষ: তারা পরের গাড়িতে আসবে৷ গাড়ির কি অভাব?

ছেলেটি: এখন তো অফিস টাইম৷ সব গাড়িতেই ভীড়৷ এত কিছু না বলে পুরুষরা ভালো হয়ে গেলেই তো হয়৷

পুরুষ: ভিড় থাকলে বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হবে৷ তাইলেই তো সমাধান৷

ছেলেটি: ভাই, বাসায় কি আপনি রান্না করেন, নাকি ভাবি? বাচ্চাকে স্কুলে কে নেয়? রাতে ফিরে আবার রান্না, সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা; আপনিই সামলান? পুরুষরা এত ভালো হয়ে গেছে?

পুরুষ: আরে ভাই, আপনি আরো ফালতু৷ উল্টাপাল্টা কতা কন৷ ভালো হইতে কন! পুরুষ না আপনে? জানেন না যে, না চাইলেও বাসে মেয়েদের গায়ে হাত-পা লেগে যায়!

ছেলেটি: হিসাবটা তাহলে এই৷ ঠিকই কইছেন, আপনারই তাহলে হাত পা লেগে গিয়েছিল৷

সুলাইমান নিলয়ের লেখাটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

সুলাইমান নিলয় বর্তমানে উন্নয়ন পেশাজীবী হিসেবে কাজ করছেন৷ তার আগে দীর্ঘদিন আইন সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ