প্রযুক্তির সহায়তায় নয়, বাসার প্রিন্টারে ছাপানো জাল নোট নিয়ে গাড়ি কিনতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এক জার্মান নারী৷ গাড়ির ডিলার পুলিশে দিয়েছেন তাঁকে৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির কাইজার্সলাউটেয়ার্ন শহরে এমন ঘটনা অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে৷ শুক্রবারের এই ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ৷
গাড়ি কিনতে এসে দোকানিকে ১৫ হাজার ইউরোর জাল নোট গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন ২০ বছর বয়সি ওই নারী৷ কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে ধরা পড়তে হয় তাঁকে৷
সাধারণ প্রিন্টারে সাধারণ কাগজে ইউরোর নোট ছাপানোর কাণ্ড বের করতে বেশি সময় নিতে হয়নি পুলিশকে৷ ওই নারীর বাসায় গিয়ে ১৩ হাজার ইউরোর পরিমাণের তরতাজা জাল নোট পায় পুলিশ৷
জার্মানি ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ (বিকেএ) জানিয়েছে, জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ার শাস্তি কমপক্ষে এক বছরের জেল৷ এখন পর্যন্ত ওই নারীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনেননি প্রসিকিউটররা৷
পেশাদার নোট জালকারীরা সাধারণত উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করেন৷ এমনকি অনলাইনে জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়৷ কিন্তু সেসব দিকেও যাননি ওই নারী৷
পুলিশ জানিয়েছে, জার্মানিতে বেশি জাল হয় ৫০ ইউরোর নোট৷ ২০১৮ সালে মোট ৫৪ হাজারটি নোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে৷ এসব ঘটনায় ৯৯ হাজার ৯০০টি নোটে অর্থের পরিমাণ ছিল ১৭ মিলিয়ন ইউরো৷
ইউরো ব্যাংকনোট কিভাবে তৈরি করা হয় জানেন?
ইসিবি, অর্থাৎ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নতুন ৫০ ইউরোর নোট বাজারে ছাড়ছে, যা জাল করা আরো বেশি শক্ত হবে৷ কিন্তু আসল নোট তৈরি হয় কিভাবে?
ছবি: Giesecke & Devrient
নরম তুলো থেকে হার্ড ক্যাশ!
ইউরো ব্যাংকনোট তৈরির আসল উপাদান হল কার্পাস তুলো৷ এভাবে তৈরি নোট কাগজের নোটের চেয়ে বেশি টেকসই হয় – এমনকি ভুল করে ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে ফেললেও ভিজে ‘তুলোট’ হয়ে যায় না!
ছবি: tobias kromke/Fotolia
তুলো থেকে মণ্ড হয়ে কাগজ
তুলো ব্লিচ করে, ধুয়ে, পাল্প বা মণ্ড তৈরি করা হয় – যার ফর্মুলা টপ সিক্রেট৷ তারপর একটি সিলিন্ডার মোল্ড যন্ত্র দিয়ে মণ্ডটি কেটে কাগজের লম্বা লম্বা ফালি করে ফেলা হয়৷ এর মধ্যেই কিন্তু সেই কাগজে ভবিষ্যৎ ইউরো নোটের একাধিক নিরাপত্তা চিহ্ন বসানো হয়ে গেছে, যেমন জলছাপ ও সিকিউরিটি থ্রেড৷
ছবি: Giesecke & Devrient
নোট জাল করা রোখা
ইউরো ব্যাংকনোটে দশটি বিভিন্ন নিরাপত্তা চিহ্ন রাখা হয়েছে৷ তার মধ্যে একটি হলো এক ফয়েল অ্যাপ্লিকেশন, যা একটি বেসরকারি ছাপাখানায় নোটের কাগজের ওপর বসিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: Giesecke & Devrient
জালিয়াতরাও কিছু কম যায় না
নোট জাল করা যতই কঠিন হোক না কেন, জালিয়াতরা তবু হাজার হাজার জাল নোট বাজারে ছাড়তে পেরেছে৷ ২০০২ সালে ইউরো আসা যাবৎ গতবছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি জাল নোট ধরা পড়েছে৷ সারা বিশ্বে প্রায় ন’লাখ জাল ইউরো নোট ঘুরছে, বলে ইসিবি-র ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ইউরো নোটে যার আঁকা ছবি
ইউরো ব্যাংকনোটগুলি ডিজাইনের দায়িত্ব রাইনহোল্ড গ্যারস্টেটারের উপর ন্যস্ত৷ সাবেক ডয়েচে মার্ক বিদায় নেবার আগে তার শেষ সিরিজ গ্যারস্টেটারের অঙ্কণশৈলীর পরিচয় বহণ করছে৷ এখনও প্রতিটি ইউরো নোটের উপর ইউরোপীয় স্থাপত্যের কোনো একটি বিশেষ যুগের নিদর্শন থাকে৷ পাঁচ ইউরোর নোটে যদি কোনো সুপ্রাচীন খিলানে ঢাকা পথ দেখা যায়, তো পাঁচশ’ ইউরোর নোটে দেখা যাবে একটি ইস্পাতের সেতু৷
ছবি: Getty Images/AFP
প্রতিটি নোটই অনন্য
কেননা প্রতিটি নোটের নম্বর আলাদা৷ সেই নম্বর দেখলেই বোঝা যায়, ইউরোপের প্রায় এক ডজন সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ছাপাখানার মধ্যে কোন ছাপাখানায় এই বিশেষ নোটটি ছাপা হয়েছে৷ তারপর সেই নোটগুলিকে একটি বিশেষ সূত্র অনুযায়ী বিভিন্ন ইউরো দেশের মধ্যে বেঁটে দেওয়া হয়৷
ছবি: Giesecke & Devrient
একটি পাঁচশ’ ইউরো নোটের দাম
নোটের বান্ডিলগুলোকে বেঁধে শ্রিঙ্ক-ব়্যাপ করে বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ একটি ব্যাংকনোট তৈরির খরচ পড়ে সাত থেকে ষোলো সেন্ট৷ নোটের ডিনমিনেশন বা মূ্ল্য যতো বেশি হবে, বানানোর খরচও সেইরকম বেশি হবে৷
ছবি: Giesecke & Devrient
দাম নয়, খরচ কমানো
আগে সব দেশের নিজের ট্যাঁকশাল ছিল৷ আজকাল জার্মানির ফেডারাল বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জার্মানির বাইরেও নোট ছাপতে দেয়৷ ২০১৫ সালে জার্মান মুদ্রণ সংস্থা গিজেকে ডেভ্রিয়েন্ট মিউনিখে তাদের ছাপাখানা বন্ধ করে, কেননা লাইপজিগে তো বটেই, এমনকি মালয়েশিয়াতেও নোট ছাপানোর খরচ কম৷
ছবি: Giesecke & Devrient
পুরনো বাতিল করে নতুন
২০১৩ সালে নতুন পাঁচ ইউরোর নোট চালু করা হয়৷ ২০১৫ সালে আসে নতুন দশ ইউরোর নোট৷ এরপর ২০১৬-য় এসেছে নতুন ২০ ইউরোর নোট৷ ২০১৭-য় নতুন ৫০ ইউরোর নোট৷ ২০১৮-য় আসছে ১০০ আর ২০০ ইউরোর নতুন নোট৷ আর ২০১৯ সালে নাকি ৫০০ ইউরোর নতুন নোট বেরনোর কথা – অবশ্য তার আগেই যদি ৫০০ ইউরোর নোট বাতিল না করা হয়৷