ফ্রান্সের লিয়ঁ শহরের মাঝে এক দম্পতি নিজেদের বাড়িটিকে স্বপ্নের মতো সাজিয়েছেন৷ নিজেদের তৈরি অভিনব ওয়ালপেপার প্রতিটি ঘরকে ভিন্ন চরিত্র দিয়েছে৷ অতীত ও বর্তমানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে তাঁরা পরিবর্তনের উদ্যোগে সাহস জোগাচ্ছেন৷
বসার ঘরের মূলমন্ত্রই হলো জঙ্গলের মধ্যে থাকার অনুভূতি৷ চারিদিকে গাছপালার মোটিফ ও সবুজের ছড়াছড়ি৷ দেওয়াল থেকেই সব কিছুর সূচনা৷ স্ত্রী লোরঁস-এর সঙ্গে পাট্রিক যে ওয়ালপেপার তৈরি করেন, তা মোটেই প্রথাগত শৈলির নয়৷ পাট্রিক শাভান বলেন, ‘‘কারখানায় একই রকম ডিজাইন কাজে লাগিয়ে বড় আকারে ওয়ালপেপার উৎপাদন করা হয়৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে অত্যন্ত জনপ্রিয় দেওয়ালের প্যানোরামা চিত্রের ঐতিহ্য অনুযায়ী আমরা ওয়ালপেপার তৈরি করার চেষ্টা করি৷ সেগুলিতে সম্পূর্ণ একটা দৃশ্য দেখা যেতো এবং হাতে করে খোদাই করা হতো৷ এক কম্পিউটার সফটওয়্যারের সাহায্যে আমরা একঘেয়ে ডিজাইন এড়িয়ে যেতে পারি৷ প্রত্যেকটি জায়গার নিজস্ব কাহিনি শোনানো উচিত৷''
ওয়াল পেপার দিয়ে স্বপ্নের জগত
03:46
পাট্রিক শাভান নিজের বাড়িতেই নতুন আইডিয়া পরীক্ষা করে দেখেন৷ ২০ বছর ধরে তিনি সেখানে বসবাস করছেন এবং নিত্যনতুন আইডিয়া কার্যকর করছেন৷ ১৫০ বর্গ মিটার বিস্তৃত গোটা বাড়ির প্রতিটি ঘরের নিজস্ব এক থিম বা বিষয় রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ঘরের বিষয় ভারতের পন্ডিচেরি শহর৷ আমরা ভারতে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকাল থেকে প্রেরণা নিয়েছি৷ তাই রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও ময়ূর শোভা পাচ্ছে৷''
বাড়ির পিছনের বাগান থেকে আসল প্রকৃতি ও লিয়ঁ শহরের দৃশ্য দেখা যায়৷ বছরের যে কোনো সময় পাট্রিক ও তাঁর কুকুর বুলি এখানে সময় কাটাতে পছন্দ করে৷ শহরে থাকলেও তাঁর মনে হয় তিনি যেন গ্রামে রয়েছেন৷
চারিদিকে কৌতুকের ছোঁয়া, একেবারেই ক্লান্তিকর নয়৷ পাট্রিক শাভান নিজের চার দেওয়ালের মাঝে যা খুশি করতে পারেন৷ কারো কাছে বিষয়টি বাড়াবাড়ি মনে হলেও এটাই তাঁর বাড়ির আকর্ষণ৷ তিনি বলেন, ‘‘একটি বাড়িকে জীবন্ত থাকতে হয়৷ আমার বিশ্বাস, বাড়ি হলো তার বাসিন্দাদের ব্যক্তিত্বের বহির্প্রকাশ৷ এই বাড়ি আমাদের বাঁচার আনন্দের প্রতিফলন ঘটায়৷ মানুষ হিসেবে আমরা অতিথিদের স্বাগত জানাতে চাই৷ আশা করি আমাদের ঘর সাজানো দেখে তা অনুভব করা যায়৷''
এখানে থাকার অর্থ স্বপ্নের জগতে পাড়ি দেওয়ার মতো৷ পাট্রিক শাভানের বাড়ি শহরের মাঝে অভিনব এক মরুদ্যানের মতো, যা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সাহস জোগায়৷
গ্যোনা কেটেল্স/এসবি
যে বাসায় ‘ভালোবাসা’ বাসা বাঁধে
যাঁরা নতুন বাসা খোঁজেন, অনেকেই চান এলাকাটি হবে সবুজ, বাসা হবে খোলামেলা, থাকবে আলো-বাতাস৷ কিন্তু কেন এই চাওয়া? এর কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে ? হ্যাঁ, এর কারণই মনোবিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে৷
ছবি: Constantin Meyer
আরামদায়ক আসবাবপত্র
অনেক বাসার ফার্নিচারগুলো হয় বেশ ভারি এবং কোণাগুলো শক্ত ধরনের৷ এমন আসবাবপত্র দেখে অতিথির কাছে নাকি বিরক্তিকর মনে হয় বা তাঁদের তেমন পছন্দ হয় না৷ তবে এর উলটো হলে অর্থাৎ সোফা , টেবিল, চেয়ার ইত্যাদির কোণা গোল ধরনের বা হালকা বাঁকানো হলে, অতিথিদের অনুভূতি হয় ইতিবাচক, তাঁদের বেশ ভালো লাগে৷হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক সমীক্ষা থেকে তথ্যটি জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid/R. Powers
সূর্যের আলো মন ভালো করে
ভোরের আলো যখন বিছানায় এসে আছড়ে পড়ে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়, সে অনুভূতি কার না ভালো লাগে? শুধু তাই নয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালের স্নায়ুবিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক করা এক গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, যাঁরা ঘরে দিনের আলো বেশি পায়, তাঁদের ঘুম যেমন ভালো হয়, তেমনি সারাদিন তাঁরা আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন৷
বাসার জিনিসপত্র এলোমেলো থাকলে ঘুম থেকে উঠে তা দেখে অনেকেরই খারাপ লাগে৷ তেমনি সারাদিনের কাজের পর বাইরে থেকে এসেও ঘরে ঢুকেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়৷ ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবার বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের করা এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে এ কথা জানা যায়৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Kalaene
সবুজ রং এত প্রিয় কেন ?
সতেজ সবুজ রং মানুষের অনুভূতিকে করে ইতিবাচক আর তার সৃজনশীলতাকে দেয় আরো বাড়িয়ে৷ সবুজ মাঠ, প্রান্তর বা বনে কিংবা জঙ্গলে বেড়াতে গেলে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটির পর মন শান্ত হয়, এ কথা হয়তো অনেকেই জানেন৷ এ রকম সবুজের মাঝে গেলে মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যেই মানুষের মানসিক চাপ কমে যায়৷ এমন প্রমাণই পেয়েছেন অ্যামেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এর মনোবিজ্ঞনীরা৷
ছবি: Imago/U. Roth
সবুজ রং ঘরে রাখুন
বাড়িতে ঢোকার সময় প্রথম যে দেয়ালটি চোখে পড়ে, তার রং যদি সবুজ হয়, তাহলে বাসায় ঢোকার সময়ই অতিথিরা ভালো বোধ করেন৷ অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য করিডোরের রং সবুজ করার পরামর্শটি পাওয়া গেছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক সমীক্ষা থেকে৷ গবেষণায় আরো জানানো হয়েছে, ভালো অনুভূতি জন্ম দেয়ায় সবুজের পরেই নীল এবং হলুদ রংয়ের স্থান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
প্রকৃতিকে ঘরে আনুন
বসার ঘরে গাছ রাখুন, কিচেনের জানালায় সবজি বা ধনেপাতা, পেঁয়াজকলি, পুদিনাপাতা এসব লাগাতে পারেন৷ এতে চোখ, মন দুটোই ভালো থাকবে আর কমাবে মানসিক চাপ৷ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, সবুজ দেখার পর তাঁদের ধৈর্যের উন্নতি হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Mastrovito
নীল বেডরুম
যদিও অনেকে বলে থাকেন নীল নাকি বেদনার রং, তবে নেদারল্যন্ডসে করা সমীক্ষায় জানা গেছে, বেডরুমের জন্য ব্যবহার করতে পারেন নীল রংয়ের চাদর, বালিশের কাভার, নীল ছবি.... ৷ কারণ, নীল মনকে শান্ত করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lacerda
লাল বা কালো রং বাড়ি সাজানোর জন্য নয়!
যদিও লালকে ভলোবাসার রং বলা হয়, তবে এই গবেষণাটিতে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের কারো এই দুই রংয়ের কোনো জিনিস দিয়ে বাসা সাজানো পছন্দ নয়৷
ছবি: fischer-cg.de/Fotolia
হলুদ আনন্দের রং
হলুদ রং দেখলেই প্রথমে বেশ আনন্দ হয় তা ঠিক, তবে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, ঘরের ফার্নিচার বা বড় কিছুর জন্য হলুদ রং তাঁদের পছন্দ নয়৷ তবে দাঁত ব্রাশ, তোয়ালে, কফি কাপ বা ফুলদানির মতো জিনিস হলুদ রং হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Helga Lade Fotoagentur
আলোয় ভরা
পরিচ্ছন্ন ছিমছাম আর আলো ঝলমলে বাসায় থাকতে যে কোনো মানুষই ভালো বোধ করেন৷ সুন্দর ঝকঝকে, আরামদায়ক, গোছানো আর সবুজ মনোরম পরিবেশের যে কোনো বাসায় ‘ভালোবাসা’ ধরা দেবেই৷ হোক সে বাসা ছোট বা বড়৷