বাসের কয়েকটি খালি সিটের একটি ছবিকে ‘বোরকা পরা নারী' মনে করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে নরওয়েতে৷ ছবিটি একটি অভিবাসন বিরোধী ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দেয়ার পর বোরকা নিয়ে হিংসাত্মক মন্তব্যে ভরে গেছে৷ ছবিটি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি দৃষ্টি কেঁড়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও৷ ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ানসহ বড় বড় সব পত্রিকা ফলাও করে ছেপেছে খবরটি৷ অনেক টেলিভিশনও এ নিয়ে রিপোর্ট করেছে৷
নরওয়ের যে গ্রুপটিতে ছবিটি পোস্ট দেয়া হয়েছিল সেটি অভিবাসন বিরোধী৷ গ্রুপের নামটি ইংরেজি করলে দাঁড়ায় ‘ফাদারল্যান্ড ফার্স্ট', আর বাংলায় ‘জন্মভূমি আগে'৷
ছবিটিতে একটি বাসের ছয়টি খালি সিটের ছবি এমনভাবে নেয়া হয়েছে, দূর থেকে একে বোরকা পরা নারী বলেই মনে হয়৷ কিন্তু ভালো করে দেখলে স্পষ্ট হয় বিষয়টি৷
কিন্তু ঐ গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্যই ভালো করে না দেখে মন্তব্য করতে শুরু করেন৷ বেশিরভাগ মন্তব্যই নেতিবাচক ও বর্ণবাদী৷
ছবিটি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে শত শত মন্তব্য পড়তে থাকে সেখানে৷ কেউ বলছেন, ‘খুবই ভীতিকর, নিষিদ্ধ করা উচিত, তুমি জানো না এর ভেতরে কী আছে....অস্ত্রও থাকতে পারে!' অন্য অনেকেই একে ‘আতঙ্ক' ও ‘উদ্বেগজনক' বলে মন্তব্য করেছেন৷
দেশটির এক সাবেক রাজনীতিবিদের চোখে ভুলটি ধরা পড়ে৷ তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে সবাই জানতে পারে ঘটনাটি৷
একটি ভুল ছবিকে দেখে এমন মন্তব্যে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন৷ বোরকা ও মুসলিমদের নিয়ে অভিবাসন বিরোধী নরওয়েজিয়ানদের এমন ঢালাও মন্তব্যেরও সমালোচনা হয়েছে৷
গেল কয়েক বছর ধরেই নরওয়েতে অনেক বেশি সংখ্যক মুসলিম অভিবাসীরা আসছেন৷ এতে ক্ষুব্ধ দেশটির জনগণের অভিবাসন বিরোধী অংশটি৷
এই ছবিটি গেল বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপ জুড়ে আলোচিত পোশাক বিতর্ককেও উসকে দিয়েছে৷ এরই মধ্যে নারীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে মহাদেশটির কোথাও কোথাও৷
শুধু বোরকাই নয়, মুখ ঢেকে থাকে এমন কোনো মাস্ক বা অন্য কোনো কাপড় পরাও নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Schuh
9 ছবি1 | 9
আপনি কি মনে করেন বোরকার সঙ্গে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের কোনো যোগ আছে? লিখুন নীচের ঘরে৷