1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাস্তবায়নই বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ জুন ২০১৮

প্রতিবছর যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, সংশোধিত বা প্রকৃত বাজেট তার চেয়ে গড়ে ২০ ভাগের মতো কম৷ এবারের বাজেট সবচেয়ে বড় বাজেট৷ কিন্তু অর্থবছরের শেষ দিকে বোঝা যাবে প্রকৃত বাজেট কত টাকার৷ তাই বাজেট বাস্তবায়নই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷

ছবি: bdnews24.com

এবারের প্রস্তাবিত বাজেট চার লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার৷ এরমধ্যে উন্নয়ন বাজেট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকার৷ আর অনুন্নয়ন বা রাজস্ব বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা৷

বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, যা চলতি বাজেটের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেশি৷ চলতি বাজেটের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির গড়হার বেশি ধরা হয়েছে,  ৫ দশমিক ৬ শতাংশ৷

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আয় ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা৷ মোট ঘাটতি ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা৷

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)-তে  বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা৷ চলতি বাজেটে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা৷ প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা থেকে ঋণ ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা৷ বাকি তিন হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে৷

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার হলেও সংশোধিত বাজেট ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার৷ সংশোধিত বাজেটের সঙ্গে তুলনা করলে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৯৩ হাজার কোটি টাকা বেশি, যা শতকরা হিসেবে ২৫ ভাগ বড়৷

এবারে প্রস্তাবিত বজেটে করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই বছরে আড়াই লাখ টাকা রাখা হয়েছে৷

এবারের বাজেটে ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগলকে করের আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩৫ শতাংশ উৎসে কর প্রস্তাব করা হয়েছে৷

লিপস্টিক, ক্রিমের মতো আমদানি করা প্রসাধন সামগ্রীর ওপর কর বাড়ানো হলেও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ আমদানি, দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোন, মোটর সাইকেলের ওপর কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ সিগারেটের ওপর কর বেড়েছে সামান্য৷ কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে ব্যাংকিং খাতের জন্য৷ খরচ বাড়বে অনলাইন কেনাকাটায়৷ এতদিন অনলাইনে (ই-কমার্স) কেনাকাটায় ক্রেতাকে কোনও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হতো না৷ প্রস্তাবিত বাজেটে ভার্চুয়াল ব্যবসায় বা অনলাইন কেনাকাটায় ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী৷ দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিতে বরাদ্দ বাড়ছে৷ মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর পাঁচ হাজার টাকা করে ‘বিজয় দিবস ভাতা’ পাবেন৷ দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে প্রায় ১১ লাখ দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী৷ আর এবারই সার্বজনীন পেনশনের উদ্যোগ নেয়া হবে৷

এটি দেশের ৪৭তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৮তম এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের দ্বাদশ বাজেট৷ ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে এবারের বাজেট সংসদে উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী৷

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে ইতিবাচক পদক্ষেপ আছে: ড. মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-র অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত বাজেটের কাঠামোর দিকে তাকালে দেখা যায় বাজেটের আকার জিডিপির ১৭-১৮  শতাংশের একটা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে৷ কিন্তু এই বাজেটের অর্থায়ন গত বছরের মতোই অংকের হিসেবে মেলানোর চেষ্টা আছে৷ যেমন, রাজস্ব খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ শতাংশ৷ কিন্তু চলতি বাজেটের শেষে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা হলো ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ৷ বাজেটে এই দ্বিগুন রাজস্ব আদায়ের কাঠামোগত পরিকল্পনা আমরা দেখছি না৷ তাহলে এখানে তো বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাওয়ার কথা৷ সরকার কিভাবে সেটা পুরণ করবে৷ সরকার বলছে সঞ্চয়পত্র নয়, এবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মেটানো হবে৷ কিন্তু  ব্যাংকিং খাতের এখন যা অবস্থা, তাতে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারকে সেই সাপোর্ট কি দিতে পারবে?’’

তিনি বলেন, ‘‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির খাতে প্রস্তাবিক বাজেটে ইতিবাচক পদক্ষেপ আছে৷ আর সার্বজনীন পেনশন কাঠামো এবার ঘোষণা করা হবে৷ কর্পোরেট করহার কমানোর যে দাবি ছিল তা শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে কর কমানোয় সীমবদ্ধ হলো৷ ফলে এর বাইরের ব্যবসায়ীরা এর থেকে কোনো সুবিধা পাবেন না৷ তবে সরকার ফার্মাসিউটিক্যালসহ দেশীয় শিল্পের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘প্রতিবছরই বাজেট বাস্তবায়নে যে ঘাটতি তা কাটানোর কোনো উদ্যোগ নাই৷ বাজেটে এ নিয়ে  নতুন আইনের তালিকা দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু যাঁরা বাস্তবায়ন করবেন, তাঁদের সক্ষমতার জায়গা একই রয়ে গেছে৷’’

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা কিছু নেই: ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

এদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় বাজেট প্রস্তাব করলেন৷ কিন্তু এটার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে আমাদের জানা দুর্বলতাগুলো কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি কিনা তার ওপর৷ করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো দরকার ছিল, তা হলো না৷ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বাড়ানো হলেও এটার সঠিক বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে দরিদ্র মানুষের কল্যাণ৷ এটা নির্বাচন বা যে কারণেই করা হোক, আমি মনে করি ইতিবাচক৷ দেশীয় শিল্পের জন্য প্রণোদনা আছে৷ কিন্তু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা কিছু নাই৷ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আগের মতোই৷ এই খাতে বরাদ্দ বড়ানো দরকার৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এবারের বাজেটে একান্ন হাজার কোটি টাকা শুধু সুদের জন্যই ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে৷ এটা সঞ্চয়পত্রের সুদ৷ অভ্যন্তরীণ ঋণের কারণে এই সূদ দিতে হবে৷ এটা চলতে থাকলে অর্থনীতিকে এর ফল ভোগ করতে হবে৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই বাজেটে অনেক দিক ব্যালেন্স করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ কিন্তু অতীতের দুর্বলতা দূর না হলে এই বাজেট বাস্তবায়নই হবে বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ