মার্চেলো বারেংগি ইটালির এক অতিবাস্তববাদী শিল্পী৷ লেড পেন্সিল থেকে শুরু করে অ্যাক্রিলিক রং দিয়ে যে কোনো বস্তুর অবিকল প্রতিকৃতি আঁকেন মার্চেলো, কফির কাপ থেকে দা ভিঞ্চির মোনা লিসা অবধি!
বিজ্ঞাপন
আসল কথা: আদত বিষয়বস্তুর প্রতিটি খুঁটিনাটি এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যে, কোনটা বাস্তব আর কোনটা ছবি, তা যেন আলাদা না করা যায়৷ যেমন একটা পাঁচ ইউরো-র নোটের ছবি: একটু কোঁচকানো-মোচকানো, কিন্তু দেখলে মনে হবে যেন – আসল টাকা! দর্শকরা ভাববেন: ফটো না হাতে আঁকা ছবি? মার্চেলো বলেন, ‘‘আসলে এর পেছনে আঁকার কোনো বিশেষ পদ্ধতি নেই৷ এই আঁকার কায়দাটাকে বলে হাইপাররিয়ালিজম বা অতিবাস্তববাদ৷ চেষ্টাটা হল, একটা জিনিসের সব খুঁটিনাটি যতোটা বিশদ করে সম্ভব আঁকা৷ তার ফলে পুরো ছবিটা একটা নিজস্বতা পায়৷''
ইটালির মানুষ মার্চেলো বারেংগি-র নানা প্রতিভা আছে৷ তিনি আঁকেন ফটো থেকে, কিংবা সরাসরি বস্তুটিকে সামনে রেখে৷ বস্তুটির নিখুঁত প্রতিকৃতি আঁকতে দৃশ্যত তাঁর কোনো কষ্টই হয় না৷ মার্চেলো-র ভাষ্যে, ‘‘আমি মোটা পিচবোর্ডের কাগজের ওপর আঁকি৷ আঁকি বিভিন্ন ধরনের রং-তুলি দিয়ে: খুব গাঢ় জলরং থেকে শুরু করে লেড পেন্সিল কিংবা রং পেন্সিল দিয়ে৷ সবশেষে সাদা অথবা কালো অ্যাক্রিলিক রং দিয়ে ছবির কিছু খুঁটিনাটি আরো স্পষ্ট করে দিই৷''
আঁকার গোটা প্রক্রিয়াটা ভিডিও-য় ধরে রাখেন মার্চেলো৷ কম্পিউটারে ফিল্মটা কাটতে কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে৷ ধীরে ধীরে ত্রিমাত্রিক এফেক্ট-টা দেখতে পাওয়া যায়: আলো আর ছায়ার খেলা, ড্রইং-এর ভাষায় পার্ফেক্ট শেডিং৷
প্রতি সপ্তাহে এইভাবে একটি ভিডিও সম্পূর্ণ করে ইউটিউবে দেন মার্চেলো৷ ইউটিউবে-র বিজ্ঞাপন থেকে যা আয় হয়, তাতে ৪৫ বছর বয়সি মার্চেলো-র ভালোই চলে যায়৷ অনেক ভিডিও হাজার-হাজার, এমনকি লক্ষ-লক্ষ ক্লিক পায়৷ মার্চেলো বলেন, ‘‘আমি অতোটা প্রত্যাশা করিনি৷ বিশেষ করে যখন অতীতে অনেকে আমাকে বলেছিলেন: ‘তোর আঁকা এমন কিছু নয়৷' কয়েকজন আমাকে আঁকা ছেড়ে দেবার পরামর্শও দিয়েছিলেন৷ আজ হঠাৎ আমার ছবিগুলো সারা বিশ্বের মানুষদের ভালো লাগছে – আমাকে সেটা সত্যিই চমকে দিয়েছে৷''
বছরের সেরা ছবি
আলোকচিত্র সাংবাদিকদের সেরা ছবি বাছাই করে প্রতি বছরই ঘোষণা করা হয় ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অ্যাওয়ার্ডস’৷ এক লক্ষ ছবি থেকে ১৮টি ক্যাটেগরিতে ৫৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে এ বছর৷ সেখান থেকে কিছু ছবি দেখুন আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/John Stanmeyer/World Press Photo
জন স্ট্যানমেয়ার - জিবুতি
‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অ্যাওয়ার্ডস’-এ সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন স্ট্যানমেয়ারের তোলা একটি ছবি৷ আফ্রিকার দেশ জিবুতির প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু মানুষ মুঠোফোনে কথা বলার জন্য কত মরিয়া, অথচ তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে তাঁরা উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা থেকে কত বঞ্চিত – তা-ই ফুটে উঠেছে ছবিতে৷ জোছনা রাতে সবাই আকাশের দিকে মুঠোফোন বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, এভাবেও যদি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়!
ছবি: Reuters/John Stanmeyer/World Press Photo
গোরান টমাসেভিচ - সিরিয়া
গোরান টমাসেভিচ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলোকচিত্রী৷ তিনি জিতেছেন ‘স্পট নিউজ ক্যাটেগরি’-তে সেরা ছবির পুরস্কারটি৷ অনেক সময় অকুস্থলে গিয়ে ছবি তোলা খুব ঝুঁকিপূর্ণ৷ গত ৩০ জানুয়ারি টমাসেভিচ ছবিটি তুলেছেন সিরিয়ায় গিয়ে৷ দামেস্কে তখন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা৷ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল, ছবি দেখেই বোঝা যায়৷
ছবি: Reuters/Goran Tomasevic/World Press Photo
টেইলার হিকস - নাইরোবি
যুদ্ধবাজরা কখনোই হয়তো মানুষের ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবে না৷ তা-ই যদি ভাবা হতো তাহলে কী ছবির এই মা-কে তাঁর এবং সন্তানের জীবন বাঁচাতে এভাবে আত্মগোপন করতে হয়! টেইলার হিকস ছবিটি তুলেছেন ২০১৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর৷ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির ওয়েস্টগেট শপিং মলে সেদিন অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীরা অতর্কিত হামলা চালায়৷ হামলায় ৭২ জন মারা যায়৷ এ ছবির জন্য ‘নিউজ স্টোরিজ ক্যাটেগরি’-তে দ্বিতীয় সেরা হয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Tyler Hicks/World Press Photo
ফিলিপে লোপেস - ফিলিপিন্স
এ ছবিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে৷ মানুষগুলো ফিলিপিন্সের৷ গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ফিলিপিন্সের বেশ বড় একটি অংশ৷ ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়, গৃহহারা হয় লাখো মানুষ৷ ছবিতে টোলোসা শহরবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে দেখা যাচ্ছে৷ ছবিটি তুলেছেন বার্তা সংস্থা এএফপির ফরাসি সাংবাদিক ফিলিপে লোপেস৷
ছবি: Reuters/Phillipe Lopez/World Press Photo
পিটার হলগারসন - সুইডেন
এ বছর ‘স্পোর্ট-ফিচার ক্যাটেগরি’-তে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে এই ছবি৷ ক্যানসারে ভুগে মারা গেছেন সুইডেনের জিমন্যাস্ট নাদজা কাসাদেই৷ মৃত্যুর আগে তাঁর এই ছবিটি তুলেছিলেন পিটার হলগারসন৷ এটিই তাঁর জীবনের শেষ ছবি৷
ছবি: Reuters/Peter Holgersson/World Press Photo
স্টিভ উইন্টার - যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভ উইন্টার এ ছবির জন্য জিতেছেন ‘নেচার স্টোরিজ ক্যাটেগরি’-র সেরার পুরস্কার৷ গভীর রাতে লুকিয়ে তুলতে হয়েছে এই ছবি৷ লস অ্যাঞ্জেলেসের গ্রিফিথ পার্কে তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি পুমা৷ চাঁদের আলোয় হিংস্র প্রাণীটির পেছনে দেখা যাচ্ছে সুউচ্চ কিছু অট্টালিকা৷
ছবি: Reuters/Steve Winter/World Press Photo
6 ছবি1 | 6
বারো বছর বয়সে মার্চেলো বারেংগি: এটাও একটা ড্রয়িং, তাঁর ছেলেবেলার ফটো থেকে আঁকা৷ সেই বারো বছর বয়সেই আঁকার দিকে মন ছিল৷ পরে তিনি মিলান-এর একটি আর্ট স্কুলে পড়াশুনা করে গ্র্যাফিক আর্টিস্ট বা অঙ্কণশিল্পী হন, কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সে পেশাও ছেড়ে দেন৷ মার্চেলো-র ব্যাখ্যা, ‘‘সময়টাই খারাপ ছিল৷ সে আমলে প্রথম কম্পিউটার গ্র্যাফিক্স ওঠে, যার ফলে বহু অলঙ্করণ শিল্পী তাদের জীবিকা হারান৷ বিশ বছর পরে পরিস্থিতি আজ বদলে গেছে৷ হাতে করে কী করে আঁকতে হয়, কম্পিউটারে কাজ করে করে অনেক গ্র্যাফিক আর্টিস্ট তা ভুলেই গেছেন৷''
মার্চেলো আজ মিলান-এর কাছে একটি ছোট্ট শহরে বাস করেন এবং সেখান থেকেই কাজ করেন৷ এখানে তিনি তাঁর অতিবাস্তববাদী, ত্রিমাত্রিক ছবি আঁকার জন্য অপরিমিত বিষয়বস্তু খুঁজে পান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি স্রেফ আমার বাড়িতে কিংবা সুপারমার্কেটে ঘুরে দেখি, কী চোখে পড়ল৷ যেমন এই কফির কাপগুলো: এগুলো আগেই এঁকেছি৷ ফলমূল, দৈনন্দিন কাজের জিনিস অথবা একটা কর্কস্ক্রু৷ আমার কাছে এ সবই আঁকার মতো৷''
পুরনো যুগের নামীদামী শিল্পীদের নিখুঁত নকল করে থাকেন মার্চেলো৷ যেমন দা ভিঞ্চির মোনা লিসা৷ তারও আছে এক মার্চেলো সংস্করণ!