সেপ্টেম্বরেই মার্কিন মধ্যস্থতায় ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় আরব দেশ বাহরাইন৷ দুই দেশই ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে মনে করে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার তেল আভিভের বেন গুরিও বিমানবন্দরে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দেলআতিফ আল-জায়ানিকে নিয়ে বিশেষ বিমান অবতরণ করে৷ সেখানে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি আশকেনাজি৷
ইহুদি রাষ্ট্রটিতে এটিই বাহরাইনের কোনো মন্ত্রীর প্রথম সফর৷ বাইরাইনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বিএনএ প্রকাশিত সংবাদে আল-জায়ানি এই সফরকে দুই দেশের মধ্যে ‘পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কৌশলগত শুরু’ বলে মন্তব্য করেছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে৷ এখন সময় হয়েছে গ্রহণোযোগ্য সমাধানের জন্য নতুন নীতি খোঁজার৷’’
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশকেনাজি এক টুইটে এই সফরকে এই অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার এক নতুন যুগ বলে উল্লেখ করেছেন৷
বুধবার জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে বৈঠক করবেন বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রয়ভেন রিভলিন আবু ধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়াদ আল-নাহিয়ানকে ইসরায়েল সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ আল-নাহিয়ানকেই আরব আমিরাতের ‘অঘোষিত’ শাসক বলে মনে করেন অনেকে৷
সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ হোয়াইট হাউজে মার্কিন মধ্যস্ততায় বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তি সই হয়৷ ফিলিস্তিন ইস্যুতে গ্রহণযোগ্য সমাধান না হলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এতদিন এই নীতিতেই অটল ছিল৷ তবে বাহরাইন ও আমিরাতের চুক্তির পর বেশ কিছু আরব দেশের ইসরায়েল বিষয়ে নতুন নীতি গ্রহণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷
এডিকে/কেএম (এপি, এএফপি)
গত সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন..
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত, বাহরাইনের চুক্তি
ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের ঐতিহাসিক চুক্তি হোয়াইট হাউসে সই হলো। ইসরায়েল লাভবান হলো। বিক্ষোভ প্যালেস্টাইনে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
দীর্ঘ বিরোধের অবসান
কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধের অবসান। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তিতে সই করল ইসরায়েল। কূটনৈতিক,সম্পর্ক গড়ে তুলবে তারা। চুক্তিতে সই করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আমিরাতের বিদেশ মন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন আল নেহয়ান এবং বাহরাইনের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জায়ানি।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
ট্রাম্পের সভাপতিত্ব
হোয়াইট হাউসে চুক্তি সই হয়েছে। সভাপতিত্ব করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ভোটের আগে এই চুক্তি তাঁর অন্যতম তুরুপের তাস। ট্রাম্প বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভোর হলো। এই চুক্তি ঐতিহাসিক।'' তার আশা, বাকি আরব দেশগুলিও আমিরাত ও বাহরাইনকে অনুসরণ করবে।
ছবি: Getty Images/A. Wong
উচ্ছ্বসিত নেতানিয়াহু
এতদিন আরব দুনিয়ায় কার্যত একঘরে ছিল ইসরায়েল। এ বার আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হবে। তাই উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি আরব-ইসরায়েল সংঘাত চিরতরে শেষ করে দিতে পারে। তাই এই চুক্তি ঐতিহাসিক। শান্তির ভোর হলো। তার মতে, করোনা নামক অতিমারির দিন শেষ হবে, কিন্তু আজ যে চুক্তি হলো, তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি থাকবে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
খুশি আমিরাত, বাহরাইন
নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আমিরাতের বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল যে শান্তির পথ বেছে নিয়েছে এবং প্যালেস্টাইনের এলাকা দখল করবে না বলেছে, তাতে তিনি খুশি। কয়েক দশক ধরে বিভাজন ও সংঘাতের পর শান্তি ফিরল। ইতিহাসের গতি পরিবর্তন হলো। খুশি বাহরাইনও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
খারিজ করল প্যালেস্টাইন
হোয়াইট হাউসে যখন এই চুক্তি সই হচ্ছে, তখন প্যালেস্টাইনে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষ করে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইসরায়েল যে এলাকা দখল করে রেখেছে, তা ছেড়ে না দিলে শান্তি আসবে না। প্যালেস্টাইন এই চুক্তিকে খারিজ করে বলেছে, তাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে।
ছবি: Reuters/M. Salem
বিরোধে সৌদি, ইরান, তুরস্ক
এই চুক্তির বিরোধিতা করে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি আরব, ইরান এবং তুরস্ক। সৌদি আরব বলেছে, তারা প্যালেস্টাইন সমস্যার প্রকৃত সমাধান চায়। তাদের দাবি, স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে তার রাজধানী করতে হবে। ইরান ও তুরস্কও চুক্তির বিরোধী। এই চুক্তিতে শুধু নতুন করে প্যালেস্টাইনের এলাকা দখন না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ছবি: Reuters/T. Brenner
লাভ কতটা
এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, এই চুক্তির ফলে লাভ খুব বেশি হবে না। কারণ, এমনিতেই ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সংঘাত একেবারেই কমে গিয়েছিল। লাভটা হলো, তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হলো। ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন দেশের একটাই লক্ষ্য, ইরানের প্রভাব কমানো। সে জন্যই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
ছবি: Reuters/T. Brenner
ট্রাম্প কতটা সুবিধা পাবেন
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি করিয়ে ট্রাম্প তার ক্ষমতা দেখাতে পারলেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এর ফলে ভোটের আগে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলো বলে তারা মনে করছেন। এর সুবিধা কি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাবেন? ট্রাম্প-বিরোধীরা মনে করছেন, তার ভাবমূর্তি করোনা ও কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার ফলে যে জায়গায় নেমেছে, সেখান থেকে ওঠার আশা কম।