ঘণ্টায় প্রায় তিনশ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাহামাসের গ্রেট আবাকো ও গ্রান্ড বাহামা দ্বীপে তাণ্ডব চালিয়েছে পাঁচ মাত্রার হারিকেন ডোরিয়ান, যা আটলান্টিক অঞ্চলের দ্বিতীয় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Espinosa
বিজ্ঞাপন
রোববার রাতে আবাকো দ্বীপের এলবো কে এলাকা দিয়ে ডোরিয়ান স্থলভাগে উঠে আসে৷ এসময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হওয়া আকারে ৩৫৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল বলে রয়টার্স জানিয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে৷, হারিকেনটি আঘাত হানার পর প্রবল ঝড়ো হওয়ার সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে ১৮ থেকে ২৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূল প্লাবিত হয়৷ এর তাণ্ডবে বহু ঘরের ছাদ উড়ে গেছে, জলোচ্ছ্বাস আর প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক জায়গা৷
ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়
ছবিঘরে ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী আটটি ঝড়ের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অ্যাটলান্টিকের হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুন এবং ভারত মহাসাগরের সাইক্লোন নামে পরিচিত৷ সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: Getty Images
২০০৮: নার্গিস (মিয়ানমার)
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস৷ ২০০৮ সালের মে মাসে যেটি মিয়ানমারে আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়৷
ছবি: Hla Hla Htay/AFP/Getty Images
১৯৯১ সাল: বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেটি ২৯শে এপ্রিল ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হেনেছিল৷ সমুদ্রের পানির উচ্চতা পৌঁছে গিয়েছিল সাত মিটার উঁচুতে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছিল উপকূলের অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ৷
ছবি: AFP/Getty Images
১৮৭৬: দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ
১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বরিশালের বাকেরগঞ্জে৷ সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৭৫: নিনা টাইফুন, চীন
যদিও চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, তবুও ১৯৭৫ সালের ৩১ শে জুলাই চীনের হেনান প্রদেশে টাইফুন নিনার ভয়াবহতা সব ঝড়কে পেছনে ফেলে দেয়৷ ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Zc
১৮৮১ সাল: হাইফোং, ভিয়েতনাম
১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ভয়াবহ টাইফুন আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ৩ লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/J. Aznar
১৯৩৭ এবং ১৮৩৯ সাল: ভারত
১৭৩৭ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ধেয়ে এসে কলকাতায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড়৷ বেশিরভাগ ইউরোপীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় তিন লাখ মানুষ৷ কিন্তু সেসময় কলকাতায় মাত্র ১০ হাজার মানুষ বসবাস করত৷ তাই এই সংখ্যাটি নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে৷ ১৮৩৯ সালের নভেম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশের কোরিঙ্গা এলাকায় বিধ্বংসী ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত তিন লাখ মানুষ৷ নষ্ট হয়েছিল ২৫ হাজার জাহাজ৷
ছবি: Reuters
১৯৭০ সাল: ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ
বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে৷ ১৯৭০ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন৷ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে এক লাখই ছিলেন জেলে৷
ছবি: Getty Images
7 ছবি1 | 7
হারিকেনটির গতিপথ বিশ্লেষণ করে এনএইচসি বলছে, গ্রেট আবাকো দ্বীপ ও গ্রান্ড বাহামা দ্বীপে তাণ্ডব চালিয়ে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাতের মধ্যে এটি ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে৷
পাঁচ ধাপের সাফির-সিম্পসন উইন্ড স্কেলে ডোরিয়ানকে প্রাণসংহারী পাঁচ ক্যাটাগরির হারিকেন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত ডোরিয়ান হারিকেন হিসেবে থেকে যাবে বলে ধারণা করছে এনএইচসি৷
হারিকেন ডোরিয়ানের তাণ্ডবে অনেক বাড়ির অর্ধেক পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে৷ পুরো দ্বীপ ছেয়ে গেছে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ধাতুর খণ্ড ও ছিন্ন কাঠের টুকরায়৷ বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ৭০০ দ্বীপের অধিকাংশেই বিদ্যুৎ চলে গেছে৷