আসছে কঠোরতম লকডাউন
২২ জুলাই ২০২১কিন্তু জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন, "শিথিলতা আর বাড়ছে না। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকেই কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে।” তার মতে, "এবার শুধু কঠোর নয়, কঠোরতম লকডাউন হবে। কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে না, এমনকি রপ্তানীমুখী শিল্প আর কলকারখানাও এই লকডাউনে বন্ধ থাকবে। মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।”
সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের কথা মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরীঘাটে বৃহস্পতিবার ছিল ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। আবার রাজধানী ছেড়ে গ্রামেও ফিরছেন অনেকে। একই চিত্র মানিকগঞ্জ-রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ফেরীঘাটেও। শিমুলিয়া ঘাটে দায়িত্ব পালন করা বিআইডব্লিউটিসি এর সহ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বললেন, প্রায় সব লঞ্চ ও ফেরি চালু রয়েছে। তারপরও যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথের জন্য বরাদ্দ ১৯টির মধ্যে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। আর ৮৭টি লঞ্চের মধ্যে চলাচল করছে ৮৬টি। মহামারীতে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের বিধান থাকলে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া পদ্মা উত্তাল হওয়ায় ফেরিগুলো কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
সকাল ৯টার গাড়ি ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে সাতক্ষীরা থেকে। সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের যাত্রী মিরপুর সিরামিক ও খাদিম সিরামিকসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবু তোরাফ নয়ন বিকেল ৪টার দিকে ডয়চে ভেলেকে বলেন, সাতক্ষীরা থেকে যশোর পৌঁছতেই আড়াই ঘন্টা লেগেছে। রাস্তায় প্রচুর গাড়ির চাপ। তার মধ্য দিয়েই দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছেছেন আরও ঘন্টাখানেক আগে। গুগল ম্যাপে তিনি দেখেছেন ঘাট থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে আছেন। গত এক ঘন্টায় আধা কিলোমিটারের মতো গাড়ি এগিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কয়টা নাগাদ ঢাকায় পৌঁছতে পারবেন তা অজানা।
এদিকে গাবতলীতে বাড়িমুখী মানুষের চাপও বেড়েছে। ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম জানালেন, "বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মানুষের চাপ রয়েছে। বহু শ্রমজীবী মানুষ ঈদের সময় কাজ করেছেন, এখন বাড়িতে ফিরছেন। প্রতি ঘন্টায় আমাদের গাড়ি রয়েছে। তারপরও মানুষকে সিট দিতে পারছি না।” কুষ্টিয়া যাওয়ার জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করা একটি পোশাকের দোকানের বিক্রয়কর্মী মহিদ উদ্দিন বললেন, "কাল থেকে তো সব ১৪ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় থেকে কী করব? তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি। লকডাউন শেষ হলে আবার ফিরে আসব। মালিক এই কয়দিন বিনা বেতনে ছুটি দিয়েছেন। বলেছেন, আবার সব স্বাভাবিক হলে যখন দোকান খুলবে তখন আসতে।”
এত দুর্ভোগ ঠেলে যে মানুষ ঢাকায় ফিরছেন, শিথিলতা দু'একদিন বাড়ানোর কোন চিন্তা সরকারের ছিল কি-না? জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, "কোরবানির ঈদের জন্য নয় দিন লকডাউন শিথিলের পর শুক্রবার থেকে পুনরায় বিধি-নিষেধগুলো আরোপ হবে, এই সিদ্ধান্ত তো আগেই দেওয়া হয়েছিল। যারা বাড়ি গেছেন তারা নিশ্চিত হয়েই গেছেন। যারা বাড়ি গেছেন তাদের এখন ফেরার প্রয়োজন কী? সবকিছুই তো বন্ধ থাকবে। ফলে তারা তো ৫ আগস্টের পর আসলেই পারেন। এই দুই সপ্তাহ কঠোরতম অবস্থানে আমরা থাকব। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এর বিকল্প নেই।” শুক্রবার ভোর থেকেই পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা মাঠে নামবেন বলেও জানান তিনি।
গত জুন মাসে যেখানে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছিল, সেখানে জুলাইয়ের ২০ দিনেই দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জুনে মারা গেছেন, এক হাজার ৮৮৪ জন। সেখানে জুলাইয়ের ২০ দিনেই সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
কখনও শিথিলতা, কখনও কঠোরতা, এভাবে লকডাউন করে কী কোন লাভ হচ্ছে? জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এতে কোন লাভ হচ্ছে না। এবারও যে কঠোর লকডাউন দেওয়া হবে তাতে সংক্রমণ কমবে না। আক্রান্তদের আইসোলেশনে পাঠাতে না পারলে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। এখন যারা গ্রামে গিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে এলেন বা সংক্রমিত হয়ে এলেন তাকে আপনি কঠোর লকডাউনে যেখানে থাকতে বললেন সেখানে তিনি সংক্রমণ ছড়াবেন। ধানমন্ডির লোক হয়ত গুলশানে গিয়ে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন না। কিন্তু ধানমন্ডিতে তো ছড়াচ্ছেন। ফলে টেস্ট বাড়িয়ে আক্রান্ত মানুষদের আগে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর তাদের কোয়ারান্টাইনে পাঠাতে হবে। এতে কষ্ট হবে, কিন্তু ফলও পাওয়া যাবে।”