দেশে প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩৩০৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছেন ২১ জন৷
করোনা ভাইরাসের চিহ্নিত পাঁচটি ক্লাস্টারের (এক জায়গায় কম দূরত্বে অনেক রোগী) দুইটি রাজধানীতে৷ যদিও ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার বেশিভাগ এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর ৫৬ শতাংশ ঢাকার বাসিন্দা৷
বুধবার রাত পর্যন্ত ঢাকার অন্তত ৫৪টি জায়গা সীমিত আকারে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে৷ ওইদিন নতুন শনাক্ত ৫৪ রোগীর মধ্যে ৩৯ জনই ঢাকার৷
ঢাকার মিরপুর ও বাসাবোকে আগেই ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইইডিসিআর৷ মূলত গত ২১ ও ২২ মার্চ মিরপুরের টোলারবাগে পরপর দুইজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর দেশে সামাজিক সংক্রমণ শুরুর বিষয়টি নজরে আসে৷ কারণ, মারা যাওয়া দুজনের কারো বিদেশ ভ্রমণ বা প্রবাসী কারো সংস্পর্শে আসার রেকর্ড ছিল না৷ ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পরপরই টোলারবাগ লকডাউন করে দেওয়া হয়৷ সেখানে বুধবার পর্যন্ত ১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে৷
রাজধানীর অন্যান্য এলাকাও কম-বেশি সামাজিক সংক্রামণ শুরু হয়ে গেছে৷ বিভিন্ন এলাকায় রোগী শনাক্ত হচ্ছে৷
দেশে দেশে চলছে লকডাউন৷ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে বলা হচ্ছে বাসায় থাকতে৷ কিন্তু এই অবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় কী! দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/PantherMedia/D. Cervoহোম অফিস করুন, বা ছুটিই কাটান, স্বাভাবিক নিয়ম থেকে বের হয়ে গেলে শরীর-মনে তার বাজে প্রভাব পড়তে পারে৷ ফলে শরীরের ঘড়ি ঠিক রাখার জন্য সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, স্নান করা, খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/PantherMedia/D. Cervoএই সময়ে কেবল শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকা দরকার৷ তাই শুধু সুস্বাদু নয়, বরং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম, এমন খাবার বেশি করে খান৷
ছবি: Imago/Frank Sorgeবাসার বাইরে যেতে হচ্ছে না বলেই ইচ্ছেমতো রাত জাগা বা দেরি করে ওঠা আপনাকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে৷ ফলে ঠিক সময়ে ঘুমাতে যান, ঠিক সময়ে উঠুন৷ ঘুম যাতে পর্যাপ্ত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিন৷
ছবি: Imago/Stylbruch/Y. Fischerবাসার বাইরে বের না হওয়া মানে স্বাভাবিক হাঁটাচলাও বন্ধ হয়ে যাওয়া৷ ফলে বাসাতেই ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিন৷ প্রয়োজনে ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে নতুন কিছু যোগাসনও শিখে নিতে পারেন৷ এতে শরীর থাকবে চাঙ্গা, মন থাকবে ফুরফুরে৷
ছবি: Reuters/R. Casilliবাইরে গিয়ে সশরীরে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলেও অনলাইনেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিন৷ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমরা এমনিতেই অনেক বেশি পরস্পরের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত৷ এর পুরো সুবিধা নেয়ার সময় এখনই৷
ছবি: picture-alliance/PhotoAlto/F. Cirouঅনেকের অনেক ধরনের শখ থাকে৷ কেউ বাগান করতে পছন্দ করেন, কেউ গান গাইতে, কেউ ছবি আঁকতে৷ এ সময়ে নিজেকে আরো ঝালিয়ে নিন৷ লকডাউন শেষ হতে হতে হয়তো আপনি দক্ষ শিল্পী হয়ে উঠতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen নারায়ণগঞ্জ পরিস্থিতি
ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ১১২ জন রোগীর মধ্যেও ১৩ জন ছিলেন নারায়ণগঞ্চের৷ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা জানান, ‘‘অনেকগুলো জেলাতেই আমরা যখন রোগী চিহ্নিত করছি তখন দেখছি যে তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে গেছেন৷’’
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল এই নারায়ণগঞ্জেই৷ গত ৭ এপ্রিল সাত জন নতুন রোগী শনাক্তের পর এই জেলা লকডাউন করে দেওয়া হয়৷ ডাক্তার, নার্স এবং ওয়ার্ডবয়সহ এই জেলার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ৪৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন৷ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷
নারায়ণগঞ্জের জামতলার বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক আফসার বিপুল ডয়চে ভেলেকে জানান, লকডাউন ঘোষণার পর রাস্তায় মানুষ এখন কম৷ কিন্তু তার আগে সাধারণ ছুটির মধ্যে তিনি রাস্তায় বা বাজারে প্রচুর মানুষ দেখেছেন এবং তাদের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা তাঁর চোখে পড়েনি৷
‘‘বাসায় আমার মা অসুস্থ৷ ওনার কথা মাথায় রেখে গত সাত/আট দিন বাসা থেকে একদমই বের হইনি৷ বাসা থেকেই অফিস করছি৷ মাঝে একদিন ছোট ভাই নিচে নেমে কিছু জরুরি বাজার করে এনেছে৷ স্ত্রীর ওষুধ শেষ হয়ে গেছে, মায়েরটা শেষের পথে৷ কি করবো বুঝতে পারছি না৷’’
নারায়ণগঞ্জের অবস্থা ভালো না এবং সেখানে অনেক মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত জানিয়ে এই সাংবাদিক আরো বলেন, ‘‘আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷ তবে হয়তো মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি৷ পরশুদিন আমার বাসার পাশে একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন৷ দাফনও করোনার যথা নিয়ম মেনে হয়েছে৷ কিন্তু ওনার করোনা টেস্ট করা হয়নি বলে শুনেছি৷
‘‘এখানে আমার বন্ধু আরো কয়েকজন সাংবাদিক আছেন৷ তারাও একই কথা বলছেন৷ নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হওয়ার এখানে অনেক শ্রমিক বাস করেন৷ এই লকডাউনে তাদের কি অবস্থা হবে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন৷ সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দরিদ্রদের ত্রাণ দিচ্ছে৷ কিন্তু লকডাউনের কারণে আপাতত তাদের কাজ অনেকটা থেমে আছে৷’’
করোনা সংকটের মধ্যে এলাকায় মশার উৎপাতও গত কয়েক দিন ধরে বেড়েছে বলে জানান তিনি৷
ব়্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই মুহুর্তে নারায়ণগঞ্জের প্রবেশ পথ ও বাহির পথ পুরোপুরিভাবে লক করা, শুধুমাত্র জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট যানবাহন ছাড়া আমরা কাউকে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছি না। র্যাব প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গিয়ে জনগনকে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিরুৎসাহিত করছে, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে, কিছু লোককে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা আশানুরূপ সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ আলেপ উদ্দিনের৷ তিনি বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জ শিল্পনগরী এবং অতি ঘনবসতিপূর্ণ৷ পাশাপাশি এ জেলায় ভাসমান লোকের সংখ্যাও অনেক বেশি। র্যাব এর পক্ষ থেকে আমরা কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করেছি যা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাত্রিকালীন সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি। পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। তবে ত্রাণ সরবরাহ আরো বাড়ানো প্রয়োজন।’’
শামীমা নাসরিন/কেএম
ভারতে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। কী ভাবে সময় কাটাচ্ছেন বাঙালি তারকারা? তাঁদের অন্দরমহলে ঢুঁ মারলো ডয়চে ভেলে।
ছবি: bdnews24.com
তিনি একাধারে অভিনেত্রী আবার পরিচালক। তবে লকডাউনের বাজারে আবৃত্তিকারের ভূমিকায় অপর্ণা সেন। অনলাইনে প্রায় প্রতিদিন কোনও না কোনও বাংলা কবিতা আবৃত্তি করছেন তিনি। একই সঙ্গে পড়ে শোনাচ্ছেন সেই কবিতার ইংরেজি অনুবাদ।
ছবি: bdnews24.comকলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি পরিচিত বুম্বা নামে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নিজেই নিজের বিজ্ঞাপন। লকডাউনের কয়েক দিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেছেন তিনি। ফলে ১৫ দিন নিজেকে সকলের থেকে আলাদা করে রেখেছিলেন। চারতলার বাড়ির একটি তলায় সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন তিনি। এমনকী, নিজের কাপড়ও নিজেই কেচেছেন। কোয়ারান্টিন শেষ করেই অমিতাভের অনুরোধে ঘরে বসে শ্যুটিং করেছেন বুম্বা।
ছবি: by_saসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিচয় দেওয়া নেহাতই অপ্রয়োজনীয়। লকডাউনে বই, লেখালিখি আর ছবি আঁকায় মগ্ন তিনি। সৌমিত্র শুধু অভিনেতা নন, বড় মাপের কবিও। লকডাউন নিয়ে কোনও কবিতা লিখেছেন কি? এখনই কিছু বলতে নারাজ সত্যজিতের ফেলুদা। তবে এরই ফাঁকে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্যের বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
ছবি: APআর সব তারকার মতো নিজেকে সম্পূর্ণ গৃহবন্দি করে রাখেননি প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক এবং বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরে সৌরভ নেমে পড়েছেন সেবার কাজে। ২০ হাজার কিলোগ্রাম চাল তিনি দিয়ে এসেছেন বেলুড় মঠে। কলকাতার ইসকনে গিয়ে তিনি কয়েক হাজার গরিব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছেন। সৌরভ জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ফের রাস্তায় নেমে কাজ করতে প্রস্তুত তিনি।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpeঅভিনেতা এবং সাংসদ দেব ২২ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ গৃহবন্দি। ছুটি দিয়ে দিয়েছেন কাজের লোকদের। আপাতত তিনি বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত। একই সঙ্গে নিয়মিত খোঁজ রাখছেন সংসদীয় এলাকার। তবে আর সব তারকার মতো ত্রাণ তহবিলে দানের কথা তিনি জানাতে চান না। তাঁর বক্তব্য, দানের কথা বিজ্ঞাপন করে জানাতে নেই। এবং সে কারণেই লকডাউন পর্বে নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও দূরে রেখেছেন দেব। কেবল খোঁজ রাখছেন মুম্বইয়ে আটকে পড়া মায়ের।
ছবি: Creative Commonsএই মুহূর্তে তিনি দেশে নেই। লকডাউনের আগেই সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। সেখানেই স্বামীর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তবে মন পড়ে আছে কলকাতায়। নরেন্দ্র মোদী আহ্বান জানিয়েছিলেন দেশ জুড়ে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য। সকলকে সেই আহ্বানে সাড়া দিতে বলেছিলেন ঋতুপর্ণা। বলেছিলেন, বাড়িতে বসে সাহসী চিকিৎসকদের উৎসাহ দেওয়াই এখন একমাত্র কাজ। প্রদীপ জ্বালিয়ে সে ছবি পোস্টও করেছিলেন তিনি।
ছবি: UNIতিনি বাঙালি নন। তবে পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক। ইদানীং শাহরুখ খান মজা করে নিজেকে 'বাঙালিবাবু' বলেন। করোনা আক্রান্তদের জন্য নিজের অফিস ছেড়ে দিতে চেয়েছেন শাহরুখ। জানিয়েছেন, সানন্দে সেখানে কোয়ারান্টিন সেন্টার তৈরি করতে পারে সরকার। সরকারের তৈরি ত্রাণ তহবিলেও বিপুল টাকা দান করেছেন শাহরুখ। প্রয়োজনে আরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যগুলিকে।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk