1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়ছে সংক্রমণ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে চরম আতঙ্ক

৯ এপ্রিল ২০২০

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ‍সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে৷ রাজধানীতে একের পর এক এলাকা লকডাউন হচ্ছে৷ এখনই সাবধান না হলে মহামারি শুরু হবে বলে সতর্ক করেছে আইইডিসিআর৷

ছবি: DW/H. U. R. Swapan

দেশে প্রতিদিনই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩৩০৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছেন ২১ জন৷

করোনা ভাইরাসের চিহ্নিত পাঁচটি ক্লাস্টারের (এক জায়গায় কম দূরত্বে অনেক রোগী) দুইটি রাজধানীতে৷ যদিও ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার বেশিভাগ এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর ৫৬ শতাংশ ঢাকার বাসিন্দা৷

বুধবার রাত পর্যন্ত ঢাকার অন্তত ৫৪টি জায়গা সীমিত আকারে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে৷ ওইদিন নতুন শনাক্ত ৫৪ রোগীর মধ্যে ৩৯ জনই ঢাকার৷

ঢাকার মিরপুর ও বাসাবোকে আগেই ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইইডিসিআর৷ মূলত গত ২১ ও ২২ মার্চ মিরপুরের টোলারবাগে পরপর দুইজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর দেশে সামাজিক সংক্রমণ শুরুর বিষয়টি নজরে আসে৷ কারণ, মারা যাওয়া দুজনের কারো বিদেশ ভ্রমণ বা প্রবাসী কারো সংস্পর্শে আসার রেকর্ড ছিল না৷ ওই দুই ব্যক্তির ‍মৃত্যুর পরপরই টোলারবাগ লকডাউন করে দেওয়া হয়৷ সেখানে বুধবার পর্যন্ত ১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে৷

রাজধানীর অন্যান্য এলাকাও কম-বেশি সামাজিক সংক্রামণ শুরু হয়ে গেছে৷ বিভিন্ন এলাকায় রোগী শনাক্ত হচ্ছে৷

নারায়ণগঞ্জ পরিস্থিতি

ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ১১২ জন রোগীর মধ্যেও ১৩ জন ছিলেন নারায়ণগঞ্চের৷ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা জানান, ‘‘অনেকগুলো জেলাতেই আমরা যখন রোগী চিহ্নিত করছি তখন দেখছি যে তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে গেছেন৷’’

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল এই নারায়ণগঞ্জেই৷ গত ৭ এপ্রিল সাত জন নতুন রোগী শনাক্তের পর এই জেলা লকডাউন করে দেওয়া হয়৷ ডাক্তার, নার্স এবং ওয়ার্ডবয়সহ এই জেলার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ৪৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন৷ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷

নারায়ণগঞ্জের জামতলার বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক আফসার বিপুল ডয়চে ভেলেকে জানান, লকডাউন ঘোষণার পর রাস্তায় মানুষ এখন কম৷ কিন্তু তার আগে সাধারণ ছুটির মধ্যে তিনি রাস্তায় বা বাজারে প্রচুর মানুষ দেখেছেন এবং তাদের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা তাঁর চোখে পড়েনি৷

‘‘বাসায় আমার মা অসুস্থ৷ ওনার কথা মাথায় রেখে গত সাত/আট দিন বাসা থেকে একদমই বের হইনি৷ বাসা থেকেই অফিস করছি৷ মাঝে একদিন ছোট ভাই নিচে নেমে কিছু জরুরি বাজার করে এনেছে৷ স্ত্রীর ওষুধ শেষ হয়ে গেছে, ‍মায়েরটা শেষের পথে৷ কি করবো বুঝতে পারছি না৷’’

নারায়ণগঞ্জের অবস্থা ভালো না এবং সেখানে অনেক মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত জানিয়ে এই সাংবাদিক আরো বলেন, ‘‘আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ‍মারা গেছেন৷ তবে হয়তো মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি৷ পরশুদিন আমার বাসার পাশে একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন৷ দাফনও করোনার যথা নিয়ম মেনে হয়েছে৷ কিন্তু ওনার করোনা টেস্ট করা হয়নি বলে শুনেছি৷

‘‘এখানে আমার বন্ধু আরো কয়েকজন সাংবাদিক আছেন৷ তারাও একই কথা বলছেন৷ নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হওয়ার এখানে অনেক শ্রমিক বাস করেন৷ এই লকডাউনে তাদের কি অবস্থা হবে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন৷ সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দরিদ্রদের ত্রাণ দিচ্ছে৷ কিন্তু লকডাউনের কারণে আপাতত তাদের কাজ অনেকটা থেমে আছে৷’’

করোনা সংকটের মধ্যে এলাকায় মশার উৎপাতও গত কয়েক দিন ধরে বেড়েছে বলে জানান তিনি৷  

ব়্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই মুহুর্তে নারায়ণগঞ্জের প্রবেশ পথ ও বাহির পথ পুরোপুরিভাবে লক করা, শুধুমাত্র জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট যানবাহন ছাড়া আমরা কাউকে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছি না। র‍্যাব প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গিয়ে জনগনকে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিরুৎসাহিত করছে, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে, কিছু লোককে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা আশানুরূপ সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ আলেপ উদ্দিনের৷ তিনি বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জ শিল্পনগরী এবং অতি ঘনবসতিপূর্ণ৷ পাশাপাশি এ জেলায় ভাসমান লোকের সংখ্যাও অনেক বেশি। র‍্যাব এর পক্ষ থেকে আমরা কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করেছি যা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাত্রিকালীন সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি। পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। তবে ত্রাণ সরবরাহ আরো বাড়ানো প্রয়োজন।’’
শামীমা ‍নাসরিন/কেএম  

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ