পাবলিক স্পেসে আরো বেশি ভিডিও নজরদারির পক্ষে রয়েছেন প্রায় ৬০ শতাংশ জার্মান৷ ইউগভ-এর সাম্প্রতিক এক জরিপ থেকে জানা গেছে এ তথ্য৷ গতসপ্তাহে বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে হামলার পর জরিপটি পরিচালনা করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনে হামলার পর জার্মানির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে ভিডিও নজরদারি বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ ইউগভ-এর জরিপে দেখা যাচ্ছে, এতে সায় আছে সাধারণ জনতার৷ এমনকি জরিপে অংশ নেয়াদের ৭৩ শতাংশ বড় পুলিশ বাহিনী গড়ার পক্ষে মতামত জানিয়েছেন৷
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে টিউনিশিয়ার নাগরিক আনিস আমরি বার্লিনের একটি ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক ঢুকিয়ে দিয়ে ১২জনেক হত্যা এবং প্রায় ৫০ জনকে আহত করে৷ এরপর ইটালি পালিয়ে গেলে সেখানে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময় নিহত হয় সে৷ হামলার সময় ক্রিসমাস মার্কেটটিতে পুলিশের কোনো ভিডিও ক্যামেরা ছিল না৷ এই ঘটনার কয়েকদিন পর ইউগভ জরিপটি পরিচালনা করে জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ৷
বার্লিন হামলায় আমরির সম্পৃক্ততা শুরুর দিকে ধরা পড়েনি৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের ক্যামেরা থাকলে সন্দেহভাজন শুরুতে নজর এড়িয়ে যেতে পারতো না৷ বরং হামলার পরপরই পাকিস্তানি এক শরণার্থীকে হামলাকারী হিসেবে সন্দেহ করে আটক করে পুলিশ৷ তিনি হামলার সময় ঘটনাস্থলের আশেপাশে ছিলেন এবং সেখান থেকে যখন অন্যত্র চলে যান, তখন সেখানে থাকা আরেক ব্যক্তি তাঁকে অনুসরণ করেন৷
বার্লিন হামলা: বিশেষ কয়েকটি তথ্য
বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক হামলার ঘটনার তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ৷ এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তারা৷ ছবিঘরে থাকছে ঘটনা সংক্রান্ত কিছু তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ঘটনা যেখানে
ব্রাইটশাইড প্লাৎস, কাইজার ভিলহেল্ম মেমোরিয়াল গির্জার সামনের চত্বর, যা পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও সুপরিচিত স্থান৷ এর উত্তর পূর্ব দিকে বার্লিনের চিড়িয়াখানা ও তার সংলগ্ন রেল স্টেশন৷ আর দক্ষিণে কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত কুয়রফ্যুয়র্স্টেনডাম বা কুডাম স্ট্রিট৷
ছবি: Google Earth
নিস-এ যা হয়েছিল
এই ছবিটি জুলাইয়ে নিস হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে ৮৬ জন মানুষ নিহত হয়েছিল৷ ফ্রান্সের সেই শহরেও ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ বার্লিনের এই ঘটনায় ফ্রান্সের ক্রিসমাস মার্কেটে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
যাঁরা হামলার শিকার
পুলিশ এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ আহত অন্তত ৫০ জনের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে৷ বার্লিনের মেয়র মিশেল ম্যুলার নির্দেশ দেন আহতদের যাতে তৎক্ষণাত ইউনিভার্সিটি হসপিটাল চ্যারিটিতে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
বার্লিন পুলিশ
ঘটনার পর পরই ব্রাইটশাইড প্লাৎস-এর আশেপাশের সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পুলিশ বার্লিনের জনগণের ঘটনাস্থলে না আসার এবং গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানান৷ কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে +৪৯৩০৫৪০২৩১১১ – এই নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
সন্দেহভাজন
পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটকের খবরটি নিশ্চিত করেছে৷ ট্রাকে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে৷ তবে হামলাকারীর সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি পুলিশ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তদন্ত চলছে
পুলিশের বিশেষ বাহিনী ব্রাইটশাইড প্লাৎস ঘিরে রেখেছে৷ এছাড়া বানহফ চিড়িয়াখানার আশপাশে পুলিশ টহল দিচ্ছে৷ বার্লিনের অপরাধ বিষয়ক পুলিশ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল ঘটনার তদন্ত করছে৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
প্রতিক্রিয়া
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ম্যার্কেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বার্লিনের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক জানিয়েছেন তিনি শোকাহত৷ বার্লিন ও পুরো জার্মানির জন্য এটা একটা কালো সন্ধ্যা৷
ছবি: REUTERS/P. Kopczynski
7 ছবি1 | 7
রবিবার পরিচালিত জরিপের আগেই অবশ্য জার্মান মন্ত্রীপরিষদ একটি খসড়া বিল অনুমোদন দিয়েছে যা পাবলিক প্লেসে আরো বেশি পুলিশের নজরদারি সম্ভব করতে পারে৷ তবে বার্লিনের স্থানীয় সরকার এই বিলের বিরোধীতা করেছে৷ প্রস্তাবিত বিল জার্মানির কঠোর ‘প্রাইভেসি' আইনের সঙ্গে কিছুক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক৷
সন্ত্রাসী হামলার সময় প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীকে (বুন্ডেসভার) কাজে লাগানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ইউগভ জরিপে অংশ নেয়া প্রতি দু'জনের একজন৷ বর্তমানে পুলিশ প্রয়োজনে ‘ব্যাকআপ' হিসেবে সামরিক বাহিনীকে তলবের নিয়ম থাকলেও তাদের ভূমিকা ঠিক কী হবে তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই৷ আগামী মার্চ মাসে বুন্ডেসভার এবং পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে৷