1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়তি ভাড়ায়ও বাসে ওঠার জন্য মরিয়া, সংঘাত-সংঘর্ষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ মার্চ ২০২১

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সরকারি অফিস ছাড়া আর কোথাও ৫০ ভাগ জনবল অফিসে আর ৫০ ভাগ বাসায় বসে কাজ করার আদেশ কার্যকর হয়নি৷ এদিকে গণপরিবহনে মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নেয়া শুরু হয়েছে বুধবার থেকে৷ ফলে যাত্রীরা পড়েছেন সংকটে৷

ঢাকার একটি বাসের দৃশ্য
ঢাকার একটি বাসের দৃশ্যছবি: Harun Ur Rashid Swapan/DW

কাজে যেতে হবে বলে করোনা নিয়ে ভাবার সময় নেই, যে করে হোক বাস পেতে হবে৷ এ নিয়ে বুধবার সকালে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গার বাসের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের সংঘর্ষ হয়েছে৷

সকালে আজিমপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ভিক্টোরিয়া পার্ক, যাত্রাবাড়ি ও মাওয়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায় যাত্রীরা বাসে উঠতে না পারায় পরিবহন শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি ও মারামারি হয়েছে বলে জানান পরিবহন মালিকেরা৷ এমনকি বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা তাদের না নেয়ায় বাস আটকে দেয়া হয়৷ যাত্রীরা বলছেন, অফিসে যেতে হবে৷ সিট না থাকলেও নিতে হবে৷ পুলিশ পরে ওইসব এলাকায় সব যাত্রীকে বাসে উঠতে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়৷

দুপুরে সরেজমিন কারওয়ান বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা যায়৷ যাত্রী রুবেল মিয়া ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন দুই সিটে একজন যাত্রী নেয়ায় বাসের সিট অর্ধেক হয়ে গেছে৷ ফলে বাস যেখান থেকে ছাড়ে সেখান থেকেই যাত্রী পূর্ণ হয়ে যায়৷ এখন সব বাসই সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে৷ আর সিট যদি খালিও থাকে তাহলে অল্প  দূরত্বের যাত্রী তার নিতে চায় না৷ ভাড়াও বেড়েছে শতকরা ৬০ ভাগ৷ তারও অতিরিক্ত তারা আদায় করছে৷’’

মোহাম্মদপুর- মতিঝিল স্টাফ কোয়ার্টার রুটে এখন জন প্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৭৫ টাকা৷ আগে ছিলো ৫০ টাকা৷ আর করোনা  আগে ছিলো ৪০ টাকা৷ ওই রুটের একটি বাসের হেলপার এরশাদ মিয়া বলেন, ‘‘আজ সকাল থেকে যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে৷ আবার সিট পূর্ণ হওয়ার পর যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠতে চাচ্ছেন৷ আমরা গেট বন্ধ করে রাখলেও ট্রাফিক সিগন্যালে জোর করে উঠতে চায় ৷ এনিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের তর্কাতর্কি ও ঝামেলা হচ্ছে৷’’

‘সিট খালি থাকলেও স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার কথা বললে যাত্রী তুলছে না’

This browser does not support the audio element.

কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে দুপুরে বিভিন্ন রুটের যেসব বাস আসা যাওয়া করতে দেখা গেছে তার অধিকাংশেরই গেট ছিলো বন্ধ৷ ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকলে তারা থামেনি৷ কারওয়ান বাজারে দুই নারী দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি৷ তারা জানান, ‘‘দুই-একটি বাসে সিট থাকলেও নারীদের সিট নেই বলে তাদের উঠতে দেয়া হয়নি৷’’ কিন্তু বাস্তবে বাসে উঠে দেখা যায় বাসগুলো নারীদের জন্য অর্ধেক আসন খালি রাখার নিয়ম মানছে না৷ তারা সিটিং বলে আগেই পুরুষ যাত্রী দিয়ে আস পূর্ণ করে আসছে৷

রুবেল আহমেদ নামে একজন যাত্রী জানান, ‘‘সিট খালি থাকলেও স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার কথা বললে তারা যাত্রী তুলছেন না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার আসলেও আমরা কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৫ টাকা৷ বাস্তবে ভাড়া পাঁচ টাকা৷ বাসের কর্মচারীরা বলেন, তাদের ভাড়া হিসাব হয় ফার্মগেট থেকে বাংলা মটর৷ আগে কারওয়ান বাজার নামলেও একই ভাড়া৷’’ আরেকজন যাত্রী রাসেল আহমেদ জানান, ‘‘এখন বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০টাকা৷ এক কিলোমিটার গেলেও ১০টাকা, আধা কিলোমিটারও ১০ টাকা৷’’ একজন কন্ডাকটর এটা স্বীকার করে বলেন, ‘‘বাসে উঠলেই ১০ টাকা৷’’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, ‘‘যাত্রীদের কাছ থেকে আগেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হত৷ আর এখন তার ওপরে আরো ৬০ ভাগ বড়তি ভাড়া তাদের জন্য চাপ হয়ে গেছে৷’’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকার মধ্যে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা৷ এখন করোনার কারণে যাত্রী সিটের অর্ধেক নেয়ার কারণে  ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ালে প্রতি কিলোমিটার হয় ২ টাকা ৪৬ পয়সা৷ উত্তর বাড্ডা থেকে গোলাপশাহ মাজারের দূরত্ব আট কিলোমিটারের চেয়ে কিছু কম৷ ৬০ ভাগ বাড়িয়ে ভাড়া হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ২০ টাকা৷ কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা৷ কারণ তারা আগেই ভাড়া বাড়িয়েছে৷ এখন সেই বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার বাড়িয়ে নিচ্ছে৷ ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা বলে জানান তিনি৷

যাত্রীদের তোপের মুখে পড়ছেন আমাদের পরিবহন কর্মচারীরা: খন্দকার এনায়েতুল্লাহ

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিরি সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘‘নিয়মের বাইরে ভাড়া না নেয়ার জন্য আমাদের কড়া নির্দেশনা আছে৷’’

তবে একজন পরিবহন মালিক বলেন, ‘‘ভাড়া একটু বেশি না নিলে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না৷ এই নতুন নিয়মে আমরা তিন ভাগের দুইভাগ যাত্রী হারাচ্ছি৷ কারণ সরকার তো সিটের হিসাব করে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়েছে৷ কিন্তু সিটের বাইরে আরও অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন৷ সেটাও তো আমাদের লস হচ্ছে৷ সেই হিসাব তো করা হচ্ছে না৷’’

খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘‘কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস কোথাও ৫০ ভাগ জনবল অফিসে এবং ৫০ ভাগ জনবল বাসায় রেখে কাজ করার নিয়ম কার্যকর হয়নি৷ শুধু আমরা যাত্রী পরিবহন অর্ধেকে নামিয়ে আনায় নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি৷ যাত্রীদের তোপের মুখে পড়ছেন আমাদের পরিবহন কর্মচারীরা৷ কারণ যাত্রী কমে নাই, কিন্তু সিট অর্ধেক হয়ে গেছে৷ যাত্রীরা কথা শুনতে চাচ্ছেন না৷ তারা যেকোনোভাবে বাসে উঠে অফিসে বা কাজে যেতে চাচ্ছেন৷ কয়েকটি জায়গায় মারামরিও হয়েছে৷ পুলিশও সামাল দিতে পারছে না৷’’

তার মতে, ‘‘এই পরিস্থিতি  অব্যাহত থাকলে প্রতিনিদিনই নানা অঘটন ঘটেবে৷ তাই নিয়ম সবখানে কার্যকর করতে হবে৷ তাহলে যাত্রীর চাপ কমবে৷’’

সরেজমিন দেখা গেছে প্রায়  সব বাসেই যাত্রী অর্ধেক ছিল৷ তবে বিআরটিসির বাসে যাত্রী দেখা গেছে বেশি৷ আর মাস্ক ব্যবহারেও যাত্রীরা সচেতন ছিলেন৷ কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার ও হেলপারদের  মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম মানায় তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি৷

গত বছর করোনায় দুই মাস গণপরিবহন বন্ধ ছিলো৷ সাধারণ ছুটি শেষে গত বছরের জুলাই মাস থেকে অর্ধেক সিট খালি রেখে যাত্রী নেয়ার শর্তে গণপরিবহণ চালু হয়৷ তখনো ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়৷ তবে এই ব্যবস্থা বেশি দিন চলেনি৷ পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে কিছু দিন পরোই স্বাভাবিকভাবে যাত্রী নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়৷ তখন মালিকেরা বাড়তি ৬০ ভাগ ভাড়া প্রত্যাহারের কথা বলেন৷ কিন্তু বাস্তবে পুরো ৬০ ভাগ প্রত্যাহার হয়নি বলে অভিযোগ আছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ