1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্ব: সমাধান কী?

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ জুলাই ২০২০

ভাড়া না দেয়ায় ঢাকার ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থীদের মালামাল থেকে শুরু করে এমনকি সার্টিফিকেট ফেলে দিয়েছেন দুই বাড়িওয়ালা৷ এই অমানবিকতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে৷ ভাড়া নিয়ে বাড়ি মালিক ও ভাড়াটিয়াদের যে দ্বন্দ্ব চলছে তার সমাধান কী?

Bangladesch Dhaka Mittelschicht leidet unter Corona-Pandemie
ফাইল ছবিছবি: DW/Sazzad Hossain

ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে রাজধানীর দু'টি বাড়িতে৷ একটি বাড়িতে ১৩৮ জন শিক্ষার্থী থাকতেন৷ আর অন্যটিতে নয়জন৷ এর মধ্যে চারজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ডও ফেলে দেয়া হয়েছে, যে পরীক্ষাটি করোনার কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অনেকের সারা জীবনের অর্জন করা সার্টিফিকেটও আছে এই তালিকায়৷

বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা ভয়াবহ রকমের অপরাধ৷ করোনার এই সময়ে কোনো বাড়ি মালিক এই ধরনের অমানবিক আচরণ করতে পারেন না৷ ভাড়ার জন্য সার্টিফিকেট ডাস্টবিনে ফেলতে হবে? এই মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এই অমানবিক ঘটনার বিচারও হওয়া প্রয়োজন৷ একটা ছেলের সারা জীবনের অর্জন এভাবে ডাস্টবিনে যেতে পারে না৷''

পূর্ব রাজাবাজারের ৪৩/ক পাটোয়ারি ভিলার পুরোটাই ছাত্রাবাস৷ মূল মালিকের কাছ থেকে ভবনটি ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস তৈরী করেছিলেন খোরশেদ আলম৷ সেখানে ১৩৮ জন শিক্ষার্থী থাকেন৷ গত ২৬ মার্চ দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে শিক্ষার্থীরা মার্চ মাসের ভাড়া দিয়ে বাড়ি চলে যান৷ এরপর ফিরে আসেননি৷ ছুটির মধ্যে ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ফোনে চাপ দিচ্ছিলেন খোরশেদ৷ পরে ভাড়া না পেয়ে তাদের বইপত্র, শিক্ষা সনদ, কম্পিউটার এমনকি বিছানাপত্রও রুম ভেঙে বাইরে ফেলে দেন তিনি৷ ট্রাঙ্ক ভেঙে কাগজপত্র বের করেন৷ এর মধ্যে কিছু ডাস্টবিনে আর কিছু বিক্রিও করে দেন৷ খবর পেয়ে গত বুধবার কয়েকজন শিক্ষার্থী ঢাকায় চলে আসেন৷ এই অবস্থা দেখে তারা পুলিশের শরণাপন্ন হন৷ কলাবাগান থানায় সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদ ইফতেখার সোহান বাদি হয়ে একটি মামলা করেন৷ এই মামলায় খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করেছে কলাবাগান পুলিশ৷

মোহাম্মদ বিপ্লব হোসেন

This browser does not support the audio element.

সানজিদ ইফতেখার সোহান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ভবনটিতে আমাদের সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০জন শিক্ষার্থী থাকেন৷ এর বাইরে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থাকতেন৷ তাদের সবার সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, কম্পিউটার অনেক কিছুই ছিলো৷ এখন আমরা কিছুই পাচ্ছি না৷ আমরা খোরশেদকে বারবার বলেছি, করোনার এই সময়ে ভাড়া কিছুটা কমিয়ে দেন আমরা দিয়ে দিচ্ছি৷ কিন্তু তিনি কিছুই কমাবেন না৷ এই আলোচনা চলতে চলতেই আমাদের সবকিছু তিনি ফেলে দিলেন৷ এখন আমরা আমাদের এসব সার্টিফিকেট কোথায় পাবো? সামনের দিনগুলোতো আমাদের অন্ধকার হয়ে গেলো৷''

সোহানের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই মোহাম্মদ বিপ্লব হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খোরশেদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ খোরশেদ এখন বলছে, টাকার জন্য সে এই কাজ করেছে৷ এখন সে ভুল বুঝতে পারছে৷ কিন্তু তার ভুল বোঝাতে তো আর শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট, বইপত্র ফিরে আসবে না৷ এই মামলায় আরেক আসামী খোরশেদের ভাই সৈকতকে আমরা খুঁজছি৷’’

এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কলাবাগানের ৪/এ রুবি ভবনেও৷ বহুতল এই ভবনটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে নয়জন শিক্ষার্থী থাকতেন৷ এক মাসের অগ্রিমও তাদের জমা আছে৷ করোনার এই তিন মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানির বিল বাবদ প্রতি মাসে ৫ হাজার করে টাকাও বিকাশের মাধ্যমে মালিককে পাঠিয়েছেন৷ কিন্তু তারপরও বাড়ির মালিক মুজিবুল হক কাঞ্চন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট, কাগজপত্রসহ সবকিছু বের করে ট্রাকে করে পান্থপথের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন৷ খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় এসে বুধবার বিষয়টি জানতে পারেন৷

সারা জীবনের সব অর্জন শেষ: সজীব মিয়া

This browser does not support the audio element.

এই ঘটনায়ও ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব মিয়া বাদি হয়ে মালিকের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় মামলা করেছেন৷ সজীব মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সারা জীবনের সব অর্জন শেষ৷ আমাদের নয়জনেরই সব সার্টিফিকেট এখানে রাখা ছিলো৷ কম্পিউটার ছিলো৷ দামি বইপত্রও ছিলো৷ এখন কিছুই নেই৷ সবকিছু ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন মালিক৷ আমরা ডাস্টবিন তল্লাশী করে কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করেছি৷’’ তিনি জানান, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আইডিয়াল কলেজের সাজ্জাদ হোসেন, মো. সোহেদ, সিটি কলেজের মো. তামিম ও তেজগাঁও কলেজের মো. অলিউল্লাহ৷ তারা এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী৷ এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ মূল্যবান সব জিনিসপত্র হারিয়েছেন এই চার শিক্ষার্থীই৷

সজীবের দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছেন কলাবাগান থানার এসআই আখতার হোসেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাড়ি মালিককে গ্রেফতারের জন্য আমরা হণ্যে হয়ে খুঁজছি৷ তাকে পাওয়া যায়নি৷ এটা ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আমরা তদন্ত কাজ চালাচ্ছি৷ শিগগিরই তাকে ধরতে পারবো বলে আশাবাদি আমরা৷’’

করোনায় এক মহৎ বাড়িওয়ালা

02:55

This browser does not support the video element.

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে চারজন এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি৷ দ্রুত যেন তাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পুনরায় দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছি৷ আর যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি৷ তারা কথা দিয়েছেন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন৷ আর আসামীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে৷ সহসাই তারা ধরা পড়বেন৷ আমি নিজেও মনে করি, এ ব্যাপারে বাড়ি মালিকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ৷’’

‘আমরাই সবচেয়ে বড় ভিকটিম’

গ্রেফতারকৃত খোরশেদ আলমের স্ত্রী নাসরিন খোরশেদ দাবি করেছেন তার স্বামী ঐ বাড়ির মালিকের চাপেই এমন অমানবিক কাজ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী যেটা করেছে সেটা হয়তো ঠিক হয়নি৷ কিন্তু প্রতি মাসেই ভাড়ার জন্য বাড়ি মালিক আমাদের চাপ দিচ্ছিলেন৷ ভাড়া দিতে না পারলে আমাদের যে অগ্রিম দেওয়া আছে সেটা থেকেই কেটে নেবেন বলে শাসিয়ে দিয়েছেন৷''

তিনি জানান প্রতিমাসে দুই লাখ টাকা আর আনুসঙ্গিক খরচ বাবদ আরো ৫০ হাজার টাকা করে তাদের কাছ থেকে কেটে নিচ্ছিল পূর্ব রাজাবাজারের ৪৩/ক পাটোয়ারি ভিলার মূল মালিক৷ গত তিন মাসে মোট সাড়ে সাতলাখ টাকা কেটেছেন৷ ‘‘এভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের অগ্রিম দেওয়া ২৫ লাখ টাকার আর কিছুই থাকবে না৷ এখন সবাই আমাদের দোষারোপ করছেন৷ অথচ আমরাই এখানে সবচেয়ে বড় ভিকটিম,'' বলেন নাসরিন খোরশেদ৷

করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়াদের পাশাপাশি ঢাকা শহরের অনেক বাড়ির মালিকও সংকটে পড়েছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সিনিয়র ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়া-মালিক সবাই সংকটে আছেন৷ হয়তো কেউ সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি বাড়ি করেছেন৷ ওই বাড়ির ভাড়াই তার জীবন চলার একমাত্র উপার্জন৷ এখন সেই মালিক কী করবেন? তাই বলে তো সার্টিফিকেট ডাস্টবিনে ফেলতে পারেন না৷ তিনি সর্বোচ্চ ভাড়াটিয়ার সঙ্গে বসতে পারেন, আলোচনা করতে পারেন৷ ভাড়া কমাতে পারেন৷ কোন ভাড়াটিয়াকে বের করে দিতে হলেও একটা প্রক্রিয়া আছে৷ সেটা অনুসরণ করতে পারেন৷ ভাড়াটিয়াদেরও বুঝতে হবে, মালিকও সংকটে আছেন৷ তাই উভয় পক্ষ আলোচনা করেই সমাধানে আসতে হবে৷''

এদিকে শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই বিষয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷ বাড়ির মালিকদের সহনশীল হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ কথা সত্য যে, কোনো কোনো বাড়িওয়ালা আছেন ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয়ই তাদের একমাত্র উৎস৷ আবার তার উপর ব্যাংক লোনও থাকতে পারে৷ তাই আমি পরিস্থিতি বিবেচনায় দু'পক্ষকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ