মাত্র ২৫৮ গ্রাম ওজন নিয়ে জাপানে জন্ম নিয়েছিল শিশু রিইউসকে সেকিয়া৷ প্রায় সাড়ে ৬ মাস হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরছে পৃথিবীর সবচেয় কম ওজনের এই ছেলেশিশু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিজ্ঞাপন
শনিবার নাগানো চিলড্রেন'স হসপিটাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে জাপান টাইমস৷
গত অক্টোবর মাসের ১ তারিখে ওই হাসপাতালেই জন্মগ্রহণ করে শিশু রিইউসকে৷ মায়ের গর্ভে মাত্র ২৪ সপ্তাহ ও ৫ দিন থাকার পর জরুরি সিজারিয়ানে তার জন্ম হয়৷ হাইপার-টেনশনে ভুগছিলেন তার মা তোসিকো সেকিনো৷
জন্মের পর রিইউসকে-এর উচ্চতা ছিল মাত্র ২২ সেন্টিমিটার (৮.৮৮ ইঞ্চি)৷ এরপর থেকে তাকে নবজাতকদের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছিল৷
প্রথম দিকে তাকে টিউব দিয়ে এবং তুলায় মায়ের দুধ নিয়ে চিপে খাওয়ানো হয়৷ প্রায় সাত মাসের মাথায় এখন সে নিজেই মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে৷ ১৩ গুণ বেড়ে এখন প্রায় তিন কেজির মতো দাঁড়িয়েছে রিইউসকে-এর ওজন৷
শিশুটির মা তোসিকো সেকিনো সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যখন সে জন্ম নেয়, তখন মনে হয়েছিল একটু ছোয়া লাগলেই সে ভেঙে যাবে৷ আমি তখন বেশ দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম৷ এখন সে দুধপান করছে৷ আমরা তাকে স্নানও করাতে পারি৷ আমি এই ভেবে খুশি, তাকে বড় হতে দেখতে পারব৷''
শিশুর জন্য মায়ের দুধ, নানা রোগের মহৌষধ
মায়ের দুধের গুণের কথা সকলেই জানেন৷ তবে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা জানাচ্ছে শুধু শিশুর জন্যই মায়ের দুধ উপকারীই নয়৷ মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুকে নানা রোগ থেকে দূরে রাখে তেমনি যিনি দুধ পান করাচ্ছেন, তাঁকেও নানা অসুখ থেকে দূরে রাখে এটি৷
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
মা-বাবার সিদ্ধান্ত
শিশু জন্মের পর তাকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে নতুন মা-বাবাই৷ তবে শিশুর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wolfraum
যা যা আছে
মায়ের বুকের দুধে নবজাতক শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণই থাকে, যাতে একটি শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে৷ এ কথা জানা যায় সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে৷
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
অ্যাজমার ঝুঁকি কমায়
মায়ের দুধ পান করলে শিশুর অ্যাজমার ঝুঁকি কমে শতকরা ৪০ভাগ – এই তথ্যটি জানা যায় ক্যানাডিয়ান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রতিক করা গবেষণা থেকে৷ বলা বাহুল্য, জার্মানিতে শিশুরা যে রোগগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভোগে তা হলো অ্যাজমা বা হাঁপানি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/H.Wiedl
প্রতি ফোটা দুধই শিশুর জন্য গরুত্বপূর্ণ
একটি শিশু প্রতি মাসে যতদিন যতটুকু দুধই পান করুক না কেন, তার প্রতি ফোটাই অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷ জানা যায়, প্যারিসের মাতৃদুগ্ধ বিষয়ক একটি গবেষণা গ্রুপের করা সমীক্ষা থেকে৷ তথ্যটি দিয়েছেন গবেষক গ্রুপের প্রধান মেঘান আজাদ৷
ছবি: Fotolia/Okea
তবে পাম্প করা দুধ নয় কিন্তু!
যে শিশু সরাসরি মায়ের বুক থেকে দুধ পান করে তার অ্যাজমার ঝুঁকি কমে বেশি৷ পাম্প করে নিয়ে পরে দুধ খাওয়ালে নাকি উপকার কম হয়৷ কারণ ধারণা করা হয়, পাম্প করা দুধ ঠান্ডা হলে তার গুণ কমে যায়৷ তাই মায়ের দুধ সরাসরি পান করারই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/Godong
শিশুর ফুসফুসকে শক্তিশালী করে
মায়ের দুধ সরাসরি পান করার মধ্য দিয়ে শিশুর ফুসফুসও শক্তিশালী হয়৷
ছবি: colorbox
কমপক্ষে ছ’মাস
বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুকে কমপক্ষে চার থেকে ছ’মাস বুকের দুধ পান করানো উচিত৷ কারণ এতে শিশুর ডায়বেটিস, অতিরিক্ত ওজন বাড়া, অ্যালার্জি এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
মায়ের উপকার
শিশু মায়ের দুধ পান করলে মায়ের স্তন ক্যানসার ও ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমে৷ তাছাড়া তাড়াতাড়ি মায়ের গর্ভকালীন ওজন কমাতেও সাহায্য করে এটি৷ তাছাড়া দুধ পান করানোর মধ্য দিয়ে মা এবং শিশুর মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর এবং মজবুত হয়৷
ছবি: picture alliance/CHROMORANGE
8 ছবি1 | 8
রিইউসকে-এর আগে সবচেয়ে কম ওজনের ছেলেশিশুর রেকর্ডধারীর ওজন ছিল ২৬৮ গ্রাম৷ গত বছর জাপানেই জন্ম নেওয়া ওই শিশু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় গত ফেব্রুয়ারিতে৷
রিইউসকের চিকিৎসক তাকেহিমো হিরোমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘প্রথম দিকে তার চিকিৎসা করাই ছিল মুশকিলের৷ কারণ, তার রক্তনালী এতই সরু ছিল যে, সেখানে ইনজেকশন বা স্যালাইন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না৷''
বেঁচে থাকা সবচেয়ে কম ওজনের শিশুটি একটি মেয়েশিশু৷ মাত্র ২৫২ গ্রাম ওজন নিয়ে ২০১৫ সালে জার্মানিতে সে জন্মগ্রহণ করেছিল বলে ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া'র তথ্য৷
এদিকে, কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া ছেলেশিশুদের তুলনায় মেয়েশিশুদের বেঁচে থাকার হার বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷
এমবি/এসিবি (এএফপি, এপি, জাপান টাইমস)
শিশুকে বকবেন না কিন্তু!
সকালে শিশুকে কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছে দিয়ে মা-বাবা দু’জনই অফিসে যাবেন৷ বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে শিশুটি কার্পেটের ওপর দুধ বা অন্য কিছু ফেলে দিলো– এরকম প্রায়ই ঘটে৷ শিশুকে বকা না দিয়েও কিভাবে পরিবর্তন আনা সম্ভব, জেনে নিন৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
বাচ্চারা মোটেই দায়ী নয় !
সন্তান, সংসার, চাকরি সামলানো যে কত কঠিন কাজ তা আজকের যুগের কর্মজীবী মা, বাবা খুব ভালো করেই জানেন৷ তাই সারাদিন কাজের পরে তাঁরা অনেক সময় অল্পতেই রেগে যান৷ এর জন্য কিন্তু বাচ্চারা মোটেই দায়ী নয়৷ কারণ, শিশুর চিন্তা ও বোঝার ক্ষমতা পুরোপুরি অন্যরকম৷ তেমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিশুর মস্তিষ্ক কাজ করে অন্যভাবে
যেমন ধরুন, আপনার শিশুটি ‘খাবার' মুখে দেওয়ার বদলে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খানিকটা খাচ্ছে আর তা দে্খে আপনি রেগে গিয়ে বললেন, ‘‘ভালো’ করে খাও৷’’ কিন্তু এই দুই-আড়াই বা তিন বছরের বাচ্চা সে তো জানেই না যে ‘ভালো করে খাওয়া’র অর্থ কী? এর বদলে ওকে যদি বলা হয় খাবার ‘মুখের ভেতরে’ ঢুকিয়ে দাও, তবেই না সে ঠিক মতো বুঝবে আপনি কী বলছেন৷ বলা বাহুল্য, জার্মান বাচ্চাদের একেবারে ছোট থেকে নিজে নিজে খাওয়া শেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিশুদের মন বুঝতে হবে
সকালে তাড়াহুড়ো করার বিষয়টি আসলে শিশুরা বোঝে না৷ তাছাড়া ছোট শিশুরা তো বুঝতেই পারেনা যে, ওদের মা বা বাবা ঠিক কী চায়৷ যদিও প্রতিদিন সকালে ওদের একই কাজ করতে হয়, তারপরও শিশুদের একই রুটিনে অভ্যস্ত করানো বেশ কঠিন৷ নিজের মতো করে হেসে-খেলে সময় কাটাতে চায় শিশুরা৷ তাই শিশুদের বোঝাতে হলে ওদের মতো করে জানাতে হবে এবং কিছুটা সময় ওদের সাথে কাটাতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wiedl
যেভাবে শান্ত রাখবেন
শিশু অকারণে কান্নাকাটি বা রাগ করলে, একটি পত্রিকা নিয়ে একটু জোরে জোরে পড়তে শুরু করুন এবং পত্রিকার ভেতর থেকে ‘শিশুদের পাতা’টি বের করে ওর হাতে দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিন৷ দেখবেন, আপনার শিশুটিও ঠিক আপনার মতো করে বসে পড়তে শুরু করবে৷ এতে শিশু যেমন শান্ত থাকবে তেমনি ধীরে ধীলে তার পড়ার অভ্যাসও তৈরি হবে৷
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিন
মুখে বলার চেয়ে শিশুকে ‘ছবি’ এঁকে বুঝিয়ে দিন সকালে ওকে কী কী করতে হবে৷ আমরা বলছি, দুই থেকে চার বছরের শিশুদের কথা৷ সকালে প্রথমে দাঁত ব্রাশ, ফ্রেশ কাপড় পরা, খাওয়া এবং সাথে কি নিতে হবে– সেসব রঙিন পেন্সিল দিয়ে এঁকে দিতে পারেন৷ দেখবেন এতে আপনার শিশু অনেক সহজে রুটিনে চলে আসবে৷
ছবি: DW/R. Azizi
খেতে না চাইলে জোরাজুরি নয়
শিশুরা অনেক সময় সবজি বা ফল খেতে চায়না, এক্ষেত্রেও বাচ্চারা আনন্দ করে ফল বা সবজি খাচ্ছে এরকম ছবি দেখাতে পারেন বা নিজেই এঁকে দিতে পারেন৷ দেখবেন পরিবর্তন আসবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttner
শিশু যখন ইচ্ছে করে রাগায়
বাবা-মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনেক শিশু ইচ্ছে করেই এমন কিছু কাজ করে যাতে তাঁরা রেগে যান৷ এরকম পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো, একদম চুপচাপ থাকা৷ আবার একটু জোরে জোরে নিজের সাথে নিজে কথা বললেও শিশু অবাক হয়ে থেমে যাবে৷
ছবি: Fotolia/photophonie
শিশুকে মারলে বা মানসিক কষ্ট দিলে যা হয়
শিশুকে শীরিরিক নির্যাতন করলে বা মানসিকভাবে কষ্ট দিলে পরবর্তীতে সেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ ইউনিসেফের এক গবেষণাতেও এ কথা বলা হয়েছে৷ শিশুরা সহজে এসব কষ্টের কথা ভুলতে পারে না৷
ছবি: Fotolia/Herby ( Herbert ) Me
দাম্পত্যকলহ এড়িয়ে চলুন
প্রতিটি দম্পতির মধ্যেই একটু-আধটু ঝগড়া হওয়া স্বাভাবিক৷ তবে তা যেন দাম্পত্য কলহে রূপ না নেয়৷ বিশেষ করে সন্তানের সামনে যেন কখনো না হয়৷ ছোট বাচ্চারা তখন অসহায় বোধ করে এবং অন্যভাবে তার প্রকাশ ঘটায় কিংবা জেদী হয়ে ওঠে৷ মা-বাবার ঝগড়া শিশু মনে এমনই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা হয়তো কোনোদিনই ওরা ভুলতে পারে না৷ এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন জার্মানির পরিবার ও শিশু লালনপালন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনেটে ফ্রাংকেনবের্গার৷