চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, বুন্ডেসলিগা আর জার্মান কাপ – এই তিন আসরের চূড়ান্ত সাফল্যে গত মৌসুমে ‘ট্রেবল' জয়ের উল্লাসে ভাসে বায়ার্ন মিউনিখ৷ সে অবস্থাতেই ইয়ুপ হাইনকেস-এর বিদায় এবং কোচ হিসেবে পেপ গুয়ার্দিওলার আগমন৷ পূর্বসূরিকে এক মৌসুমের সাফল্যে ছাড়িয়ে যাওয়া তো অসম্ভব, তাই বলে সমান সাফল্যের আশা করতে দোষ কোথায়! সে আশা নিয়েই বার্সেলোনার অনেক সাফল্যের নেপথ্যের নায়ক গুয়ার্দিওলার দিকে তাকিয়ে আছে বায়ার্ন৷
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ছিল জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ আর বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে বায়ার্ন৷ বুন্ডেসলিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগের দিন ফিরে তাকানো যাক বুন্ডেসলিগার ৫০ বছরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaবুন্ডেসলিগা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচ৷ প্রথম গোলের জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্রিডহেল্ম ‘টিমো’ কনিয়েটস্কা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতলেন৷ কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, কনিয়েটস্কা-র জীবন এবং বুন্ডেসলিগার ইতিহাসের এমন স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি কেউ কোনোদিন দেখতে পারবেন না৷ ক্যামেরা হাতে নেয়ার সময় না দিয়েই গোল করলে ছবি তোলা যায়, বলুন!
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৬৫ সাল৷ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লেনদেনে ঘাপলা ধরা পড়ায় লিগ থেকে বাদ দেয়া হয় হ্যার্টা বার্লিনকে৷ সুযোগ পায় বার্লিনের আরেক ক্লাব ‘তাসমানিয়া ১৯০০’৷ বড় আসরে খেলার সুযোগটাকে একটুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি৷ পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে ছিল তারা৷ মাত্র ৮ পয়েন্ট পেতে গোল করেছিল ১৫টি আর খেয়েছিল ১০৮টি৷ লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দল বাছতে গেলে আজও তাই ‘তাসমানিয়া ১৯০০’-এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়না৷
ছবি: picture-alliance/dpaডর্টমুন্ড আর শালকের ১৯৬৯ সালের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মজার একটি কারণে৷ প্রিয় দল ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় রেগেমেগে মাঠে ঢুকে পড়েছিল শালকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোও গেল ক্ষেপে৷ সমর্থকদের দোষে শালকের খেলোয়াড় ফ্রিডেল রাউশ আর গেয়ার্ড নয়সার-কে খেতে হলো কুকুরের কামড়৷ রাউশ-এর পশ্চাৎদেশে এখনো নাকি একটি কামড়ের দাগ বিদ্যমান!
ছবি: picture-alliance/dpaকাঠও ঢুকে পড়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷ এক সময় গোলপোস্টগুলো ছিল কাঠের৷ তো ১৯৭১ সালে ব্রেমেনের বিপক্ষে গোল করার আনন্দে গোলপোস্টের পেছনের জাল বেয়ে উঠছিলেন ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর স্ট্রাইকার হ্যারব্যার্ট লাউমান৷ কাঠ যে পচে দুর্বল হয়ে আছে বোঝেননি৷ ফলে ভেঙে পড়ল গোলপোস্ট৷ অনেক চেষ্টা হলো, কিন্তু গোলপোস্ট আর ঠিক করা গেল না৷ মাঠের এক দিকে পোস্ট না থাকায় সেদিন খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpaতখনো ফুটবলে এত টাকার খেলা শুরু হয়নি৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সিতে তখনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির নাম ওঠা শুরু হয়নি৷ ১৯৭৩ সালে বুন্ডেসলিগায় আইনট্রাখট ব্রাউনশোয়াইগ ক্লাবের খেলোয়াড়দের জার্সিতে প্রথম আসে বিজ্ঞাপন৷ খেলোয়াড়দের জার্সিতে ‘ইয়েগারমাইস্টার’ মদের লোগো হরিণের কাটা মাথার ছবি দেখে চটে গিয়েছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সি স্পন্সর করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpaম্যাচের ৩২ মিনিটেই প্রথমার্ধ শেষ৷ সবাই অবাক৷ জানা গেল রেফারি ভেল্ফ-ডিটমার আলেনফেলডার ম্যাচের আগে বেশি করে মদ গেলায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারছিলেন না বলে ১৩ মিনিট বাকি থাকতেই বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি৷ এমন কাণ্ডের সমালোচনা করায় আলেনফেল্ডার বলেছিলেন, ‘‘আমরা পুরুষ, আমরা তো ফান্টা খাইনা৷’’ ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ ব্রেমেন শহরে অনেক বারে এখনো অনেকে মদের অর্ডার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আলেনফেল্ডার আছে?’’
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিগ জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ৷ কিন্তু তাদের হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রেমেন৷ ম্যাচের ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল তারা৷ গোল করলে জয় অবধারিত৷ কিন্তু মিশায়েল কুতসুপ বল মারলেন গোলপোস্টে৷ ব্রেমেন পারলোনা চ্যাম্পিয়ন হতে৷ কুতসুপ বুন্ডেসলিগায় মোট ৪০ বার পেনাল্টি নিয়ে গোল করেছেন ৩৯টি৷ একটা মাত্র মিসের জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে তাকে!
ছবি: picture-alliance/dpaঅদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে৷ এনারগি কটবুস মাঠে নামিয়েছিল এমন এক দল যেখানে একজনও জার্মান নেই, এগার জনের প্রত্যেকেই বিদেশি৷ অখ্যাত দলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে সে কারণেই৷ পিপলিকা, হুইদুরোভিচ, মাটিয়ুস, আক্রাপোভিচ, কোবিলানস্কি, লাতাউনজি, মিরিউটা, রেগেকাম্ফ, ভাটা, ফ্রাঙ্কলিন এবং লাবাক – সেদিনের ওই এগারোজন খেলোয়াড়ের নাম তাই খুব গুরুত্ব দিয়ে লিখে রাখা হয়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসেবার ১৯৫৮ সালের পর প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ পেয়েছে শালকে৷ লিগের শেষ দিন৷ নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিতে সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন শালকের খেলোয়াড়রা৷ তাঁরা জানতেন না বায়ার্ন-হামবুর্গের ম্যাচ তখনো চলছে৷ হঠাৎ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হলো সেই খেলার ফলাফল৷ শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে ২০০২ সালের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন! সমর্থকদের ভিড়েই কাঁদতে শুরু করলেন শালকের খেলোয়াড়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কিন্তু এবার বুন্ডেসলিগায় শুরুটা ভালো হয়নি জার্মান ফুটবলের সফলতম ক্লাবটির৷ বুন্ডেসলিগায় এ মুহূর্তে তারা দ্বিতীয় স্থানে৷ সবার ওপরে বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ শনিবার নিজেদের মাঠেই হানোফার ৯৬-এর মুখোমুখি হবে বায়ার্ন৷ তারপর আগামী তিন সপ্তাহ ধরে চলবে বুন্ডেসলিগা, জার্মান কাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ৷ কোথাও প্রতিপক্ষ রাশিয়ার সিএসকে মস্কো, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, কোথাও বা জার্মানির বায়ার লেভারকুজেন, কিংবা শালকে৷ হাল্কাভাবে নেয়ার মতো ম্যাচ নেই একটাও৷ কয়েক দিন আগে বুন্ডেসলিগায় ফ্রাইবুর্গের বিপক্ষের ম্যাচটিকে সেভাবেই নিয়েছিলেন গুয়ার্দিওলা৷ নিয়মিত খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়েছিলেন বিশ্রামের সুযোগ৷ পরিণাম ১-১ ড্র এবং পয়েন্ট খোয়ানো৷ শনিবার হানোফারের মুখোমুখি হবার আগে তাই বায়ার্নকর্তারা সতর্ক৷
ম্যাচের আগে কোচ গুয়ার্দিওলাকেও সতর্কতাবার্তা শুনিয়েছেন তাঁরা৷ গত মৌসুমের সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ক্লাব প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস জার্মানির দৈনিক বিল্ড-কে বলেছেন, ‘‘এখন আমাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷'' চেয়ারম্যান কার্লহাইনৎস রুমেনিগে বলেছেন, ব্যর্থতার কারণ হিসেবে কোনো অজুহাত দাঁড় করানোর সুযোগ নেই৷ বায়ার্নের ডিরেক্টর অফ স্পোর্ট মাটিয়াস সামার মনে করেন, ফ্রাইবুর্গের বিপক্ষে খেলোয়াড় নির্বাচনে দুশ্চিন্তা বাড়ানোর মতো ঝুঁকি নিয়েছেন গুয়ার্দিওলা৷ এ পরিস্থিতিতে বায়ার্ন মিউনিখের সব কর্মকর্তার এক কথা – ট্রেবল জয়ের সাফল্য ধরে রাখতে চাইলে কোনো রকমের ঝুঁকি নেয়া বা চেষ্টার ত্রুটি করা চলবে না৷
এসিবি / এসবি (এএফপি)