বলতে কি, নতুন বুন্ডেসলিগা মরশুম শুরু হওয়ার আগে বায়ার্ন মিউনিখের কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার অবস্থা হলো: কা-কে ছেড়ে কা-কে রাখি? তাঁর আর নতুন প্লেয়ারের দরকার নেই, বলেছেন পেপ: তিনি তাঁর বর্তমান স্কোয়াডেই খুশি৷
বিজ্ঞাপন
একদিকে একাধিক প্লেয়ারের ইনজুরি, অন্যদিকে বিশ্বকাপ (জয়ের) উল্লাসের পর অবসাদ ও ক্লান্তি অন্তত ছ'জন প্লেয়ারের৷ তবে গুয়ার্দিওলা আশাবাদী৷ টিয়াগো আলকান্তারা, রাফা রাফিনিয়া এবং ফ্রাংক রিবেরি, সকলেই নাকি নিরাময়ের পথে৷ আলকান্তারার হাঁটুর লিগামেন্টে অস্ত্রোপচার হয় গত মে মাসে৷ জার্মান পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী, অক্টোবরের আগে তাঁর মাঠে ফেরার কথা নয়৷ কিন্তু গুয়ার্দিওলা বলেছেন: ‘‘লোকে যা ভাবছে, থিয়াগো তার আগেই ফিরে আসবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত৷''
অন্যদিকে তাঁর দলের ছ'জন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সম্পর্কে গুয়ার্দিওলা বলেছেন: ‘‘ওটা স্বভাবতই এই সব প্লেয়ারদের পক্ষে এবং সেই সঙ্গে ক্লাবের জন্য একটা বিরাট ব্যাপার৷ ওদের সময় আছে৷ আমি জানি ওদের কী ক্ষমতা, কিন্তু ওদের সময় লাগবে৷'' এবং গুয়ার্দিওলা ফিলিপ লাম, বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার অ্যান্ড কোম্পানিকে সে' সময় দিতে প্রস্তুত৷
বুন্ডেসলিগার সাবেক তারকারা
বুন্ডেসলিগার গত ৫০ বছরের তারকারা
ছবি: picture-alliance/Pressefoto UL
উভে জেলার
১৯৬৩ সালে জার্মান ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগার খেলা শুরু হওয়ার আগেই হামবুর্গ দলের ফরোয়ার্ড উভে জেলার খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ তখন তাঁকে সবাই আদর করে ডাকতেন ‘আমাদেরই উভে’ বলে৷ ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি জাতীয় দলে খেলতেন৷ বুন্ডেসলিগার ২৩৯ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ১৩৭টি গোল করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্যার্ড ম্যুলার এবং ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
গ্যার্ড ম্যুলার (বাঁয়ে) বুন্ডেসলিগার ৪২৭ খেলায় ৪৬৫ গোল করেন৷ তাঁর এই অবিশ্বাস্য গোল করার ক্ষমতার জন্য তাঁকে ‘বোম্বার’ বলা হতো৷ ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার (ডানে) ও গোল জেপ মায়াযের সাথে মিলে ১৯৬৫ থেকে সত্তরের দশকের শেষ পর্যন্ত তিনি বায়ার্ন মিউনিখ দলের হয়ে বহু শিরোপা জেতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্যুন্টার নেৎসার এবং ভল্ফগাং ওবারাথ
জার্মান জাতীয় দলে ভল্ফগাং ওবারাথ (ডানে) গ্যুন্টার নেৎসারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ তবে নেৎসার এফসি কোলন দলের ওবারাথের চেয়ে বোরুসিয়া ম্যোয়েনশেনগ্লাডবাখের হয়ে বুন্ডেসলিগায় একটি শিরোপা বেশি জেতেন৷ ১৯৭৩ সালে নেৎসার স্পেনের রেয়াল মাদ্রিদ এবং পরে সুইজারল্যান্ডের ফুটবল লিগে যোগদান করেন৷ কিন্তু ওবাররাথ বুন্ডেসলিগার কোলন দলেই থেকে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্লাউস ফিশার
শালকে দলের ফরোয়ার্ড ফিশারও গোল করায় পারদর্শী ছিলেন৷ কিন্তু গ্যার্ড ম্যুলারের সময়ে সক্রিয় থাকায় সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তাঁকে সবসময় দ্বিতীয় স্থানেই থাকতে হয়েছে৷ বুন্ডেসলিগায় তিনি ৫৩৫ খেলায় অংশ নিয়ে ২৬৮টি গোল করেন৷
ছবি: picture-alliance/WEREK
কেভিন কেগেন
ছোটোখাটো মানুষটি ১৯৭৭ সালে হামবুর্গ দলে যোগ দেন এবং খুব তাড়াতাড়িই দর্শকদের নজর কাড়েন৷ ‘মাইটি মাউস’ হিসেবে পরিচিত কেগেন ৯০ খেলায় অংশ নিয়ে ৩২টি গোল করেন৷ সংগীত জগতেও তিনি অবদান রেখেছেন৷ সে সময় তাঁর গাওয়া ‘হেড ওভার হিলস ফর লাভ’ গানটি জার্মানির হিট গানের তালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
হারাল্ড ‘টনি’ শুমাখার
১৫ বছর ধরে এফসি কোলন দলের গোলরক্ষক ছিলেন শুমাখার৷ এরপর ‘আনফিফ’ বা ‘হুইসেল’ নামে তাঁর একটি বিতর্কিত বই প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে তাঁকে খেলোয়াড় হিসেবে সাসপেন্ড করা হয়৷ তবে পরে তিনি শালকে, ইস্তাম্বুল, মিউনিখ এবং ডর্টমুন্ডে খেলেন৷ শুমাখার বুন্ডেসলিগার মোট ৪৬৪ টি খেলায় অংশগ্রহণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লোথার মাথিউস
জার্মান জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড মাথিউসের৷ বুন্ডেসলিগায়ও তিনি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে খেলেছেন৷ ১৯৭৯ সালে বুন্ডেসলিগায় প্রথম খেলা শুরু করার পর তিনি বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেন৷ বুন্ডেসলিগায় তিনি ৪৬৪ খেলায় অংশ নিয়ে ১২১ গোল করেন৷
ছবি: imago/Uwe Kraft
রুডি ফ্যোলার
১৯৮২ সালে তিনি ভের্ডার ব্রেমেন দলের হয়ে খেলা শুরু করেন৷ অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তারকা হয়ে ওঠেন৷ পরে রোম এবং ফ্রান্সের মার্সেই দলেও খেলেছেন তিনি৷ এরপর আবারও বুন্ডেসলিগায় ফিরে বায়ার লিভারকুজেন দলের ক্রীড়া পরিচালক হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্গেন ক্লিসমান
ক্লিসমান জার্মানির স্টুর্টগার্ট, বায়ার্ন মিউনিখ, ইটালির মিলান, মোনাকো, ইংল্যান্ডের টটেনহ্যাম, জেনুয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া দলে খেলেছেন৷ বুন্ডেসলিগায় ২২১টি খেলায় ক্লিসমানের গোল সংখ্যা ১১০টি৷ বর্তমানে তিনি মার্কিন জাতীয় দলের কোচ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অলিভার কান
বায়ার্ন মিউনিখ দলের গোলরক্ষক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন খেলেছেন৷ জার্মান জাতীয় দলেরও একজন খ্যাতিমান গোলরক্ষক হিসেবে কান পরিচিত ছিলেন৷ বেশ কয়েকবার জার্মান লিগ শিরোপা অর্জন করেন তিনি৷একসময় তিনি জার্মান জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনও ছিলেন৷
ছবি: AP
মিশায়েল বালাক
নামি ফুটবল খেলোয়াড় বালাকের ফুটবল জীবন কখনও পূর্ণতা পায়নি৷ তাঁকে গণ্য করা হয় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী তারকা হিসেবে৷ কারণ তিনি বিশ্বকাপ শিরোপা বা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপ – কোনটাই অর্জন করতে পারেননি৷ তবে বুন্ডেসলিগায় ২৬৭টি খেলায় অংশগ্রহণ করে ৭৭টি গোল করেন৷ মিশায়েল বালাক মোট চারবার লিগ শিরোপা জেতেন৷
ছবি: picture-alliance/Pressefoto UL
11 ছবি1 | 11
আসল কথা হলো, ট্রান্সফার উইনডো বন্ধ হলো কিনা, তা নিয়ে পেপ গুয়ার্দিওলার আদৌ মাথাব্যথা নেই৷ বায়ার্নের প্লেয়ার কেনা-বেচার ‘হাই পয়েন্টগুলো' তো এর আগেই সমাপ্ত হয়েছে: যেমন ডর্টমুন্ড থেকে পোলিশ ন্যাশনাল রবার্ট লেভান্ডোভস্কির – বিনা ট্রান্সফার ফি-তে! – বায়ার্নে আগমন৷ তারপর একটির পর একটি ম্যাচে লেভান্ডোভস্কি দেখিয়েছেন, তিনি বায়ার্নের হয়ে স্কোর করতে পারেন, স্কোর করছেন এবং করবেন৷ ওদিকে টোনি ক্রোসকে ভালো দামেই রেয়াল মাদ্রিদকে বেচা গেছে – এবং ক্রোসের কেরিয়ারের পক্ষে তা ভালো বৈ খারাপ নয়৷ আর ক্রোয়াট স্ট্রাইকার মারিও মাঞ্চুকিচ তো প্রায় নিজেই সেধে বিদায় নিয়েছেন, অর্থাৎ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে গেছেন৷ বুদ্ধিমান মাঞ্চুকিচ আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলেন যে, বায়ার্নের সাবস্টিটিউট বেঞ্চে এবার অনেককে সাজগোজ করে বসে থাকতে হবে৷
জার্মানিতে ‘হোম-গ্রোন ট্যালেন্ট' বা ‘নিজের বাগানে গজানো প্রতিভা' বলতে যা কিছু বোঝায়, তা কালে ঠিকই বায়ার্নে এসে পৌঁছায়৷ এই বিশ্বকাপের পর বাকি রয়েছেন ডর্টমুন্ডের প্লেমেকার মার্কো রয়েস, যাঁর সম্পর্কে বেকায়দায় মুখ খুলে ফেলে বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট কার্ল-হাইঞ্জ মুশকিলে পড়েছেন৷ তাই তাঁর দলের কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা পরিস্থিতি পরিষ্কার করে দিয়েছেন (?): ‘‘আমি মার্কো রয়েসের ব্যাপারে কার্ল-হাইনৎস রুমেনিগের সঙ্গে কথা বলিনি৷ আমাদের ইতিমধ্যেই আটটা মিডফিল্ডার আছে -–আটটা! ঐ যথেষ্ট৷''