1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বায়ুদূষণে বছরে মারা যায় ৮০ হাজার মানুষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে প্রতি বছর বায়ুদূষণে ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ দূষণের কারণে বাড়ছে মানুষের বিষন্নতাও যার অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপির চার ভাগেরও বেশি৷ বায়ু দূষণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷

যানবাহনের ধোঁয়া ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সৃষ্ট ধুলা ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ
যানবাহনের ধোঁয়া ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সৃষ্ট ধুলা ঢাকায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance

বিশ্লেষক ও চিকিৎসকেরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগরায়নের কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ বায়ুদূষণের কারণে গর্ভবতী মা শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে৷ আর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের যে জনবল তা দিয়ে আমরা পেরে উঠছি না৷”

‘‘ব্রিদিং হেভি: নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পল্যিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক  ওই গবেষণায় বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ এবং ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসাবে স্থান পেয়েছে৷

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের দিক থেকে শীর্ষে আছে ঢাকা৷ ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার বরিশাল বিভাগ৷ অন্যদিকে সিলেট বিভাগে বায়ুদূষণ অপেক্ষাকৃত কম৷ এই প্রতিবেদন তৈরিতে ঢাকা ও সিলেটের ১২ হাজার ২৫০ জন ব্যক্তির তথ্য ব্যবহার করে বায়ুদূষণের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রভাবের মূল্যায়ন করা হয়েছে৷

ঢাকার আসন্ন মৃত্যু, 'দায়ী নয় জলবায়ু'

07:48

This browser does not support the video element.

বায়ুদূষণে মৃত্যু ও ঝুঁকি

বায়ুদূষণকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকির কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়৷ এখানে বছরে কমপক্ষে ৮০ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়৷ ঢাকায় সারা দিনে একজন যে পরিমাণে দূষিত বায়ু গ্রহণ করেন, তা প্রায় দুইটি সিগারেটের সমান ক্ষতি করে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে৷

প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণে উল্লেযোগ্যভাবে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ এবং বিষন্নতার ঝুঁকি৷ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক এবং রোগে আক্রান্তরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা শ্বাস রোগে আক্রান্তরা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ৷

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়স্ক মানুষ, শিশু এবং যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তারা৷ দূষিত এলাকার প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট৷ নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য বক্ষব্যাধিও এসব এলাকার বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে দেখা গেছে৷

বায়ুদূষণের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে৷ দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে বিষন্নতার রোগী দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি৷ ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে বিষন্নতার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে৷ পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি বিষন্নতায় ভোগেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত দূষণের মাত্রা থেকে এক শতাংশ দূষণ বাড়লে বিষন্নতার অশঙ্কা ২০ গুণ বেড়ে যায়৷

বায়ুদূষণের কারণে অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ প্রতিবছর জিডিপির চার দশমিক চার শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে৷

‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিছু প্রকল্প নিলেও তা কাজে দেয়নি’

This browser does not support the audio element.

দূষণের উৎস

দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনটি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে আছে যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটার চুল্লি দিয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া, শুষ্ক মৌসুমে অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের কারণে সৃষ্টি হওয়া ধুলা ও ইটভাটার ধোঁয়া৷ বলা হয়েছে, যানজট ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমানের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি এবং ইটভাটার কারণে যে দূষণ হয় তা ১৩৬ শতাংশ বেশি৷

ঢাকার বাতাসে হেভি মেটাল

বাংলাদেশের স্থানীয় গবেষণা বলছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মাধ্যমে৷ গবেষণা বলছে, বায়ূ দূষণের জন্য নির্মাণখাত ৩০ শতাংশ দায়ী৷ এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ূ দূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে৷ যার হার ২৯ শতাংশ৷ বায়ুদূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ৷ ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷ প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ুমান নিয়ে গবেষণা করে৷ ক্যাপস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের সবশেষ গবেষণায় ঢাকার বাতাসে লেড ও মার্কারির মতো হেভি মেটালও পেয়েছি৷ লেড এর উপস্থিতি আশঙ্কাজনক৷ ঢাকার বাইরের বাতাসেও এটা পাওয়া যাচ্ছে৷ আর এর সঙ্গে আছে ধুলিকনা৷ প্রধানত অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্মাণ কাজ ও উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ম না মেনে করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ আর আমরা ভবন নির্মাণ করছি কোনো নিয়ম না মেনেই৷ গাছপালা রাখছি না৷ ফলে দূষণ আরো বাড়ছে৷ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না৷”

তার মতে, ‘‘পরিবেশ মন্ত্রণালয় বায়ুদূষণ রোধে কিছু প্রকল্প নিলেও তা তেমন কাজে দেয়নি৷ সেগুলো ছিলো অপরিকল্পিত৷ আর এটা পরিমাপের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ জনবলও তাদের নেই৷”

তিনি বলেন, ‘‘বায়ুদূষণের জন্য আমাদের যে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে আমরা নিজেরা কোনো গবেষণা করিনি এখনো৷ বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার ওপরই আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে৷ এতে বোঝা যায় বিষয়টিকে আমরা এখানো তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না৷”

'সবাই বায়ুদূষণ করে, কিন্তু বন্ধ করার দায়িত্ব শুধু আমাদের'

This browser does not support the audio element.

গর্ভবতী মা ও সন্তানের ক্ষতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান বলেন, ‘‘গর্ভবতী মা ও শিশুদের ওপর বায়ুদূষনের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি৷ মায়ের গর্ভের সন্তান ক্ষতির শিকার হতে পারে৷ আর এখন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষন্নতা বেড়ে যাচ্ছে৷ যারা জটিল রেগে বিশেষ করে শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত তা আরো জটিল হচ্ছে৷ আবার যার ডায়াবেটিস হওয়ার কথা নয় তারও হচ্ছে৷”

তার কথা, ‘‘ঢাকার বাতাসে যে হেভি মেটাল আছে, আছে নানা ধরনের বস্তু কণা, ফাইবার ও ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান৷ এর কারণে ক্যান্সার ছাড়াও লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রন্ত হয়৷ এমনকি মস্তিষ্কেরও ক্ষতি হয়৷”

তিনি বলেন, ‘‘বায়ূদূষণ আমাদের শরীর এবং লাইফ স্টাইলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷”

চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না: মন্ত্রী

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি বায়ুদূষণ ঠেকাতে, কিন্তু এককভাবে অল্প জনবল নিয়ে তা পারছি না৷ এখানে সবাই বায়ুদূষণ করে, কিন্তু বন্ধ করার দায়িত্ব শুধু আমাদের৷ সবাই সচেতন না হলে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷”

তিনি জানান, ‘‘শীতকালে শুষ্ক মৌসুমে দূষণ বেড়ে যায়৷ বর্ষাকালে কমে৷ কারণ তখন বৃষ্টি থাকে৷ বৃষ্টির পানি দূষণের মাত্রা কমায়৷ এটা প্রাকৃতিক৷ কিন্তু আমাদের সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷”তার কথা, ‘‘এখন সারা বিশ্বেই একই অবস্থা৷ আমরা এখানে মোবাইল কোর্ট দিয়ে জরিমানা করি৷ কিন্তু কী বলব, তারপরও থামছে না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ