সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, বিশ্বে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে৷ তবে রাজধানী হিসেব করলে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়তে৷ আর শহরের হিসেবে ঢাকা আছে ১৭ নম্বরে৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়াল ‘বিশ্ব বাতাসের মান প্রতিবেদন ২০১৮’ শীর্ষক ওই গবেষণাটি প্রকাশ করেছে৷ এতে দেশের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তান ও ভারত৷
বাতাসে ক্ষুদ্র কণিকার উপস্থিতির পরিমাণ হিসেব করে বায়ুদূষণের মাত্রা হিসাব করা হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডাব্লিউএইচও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা করে বাতাসে ক্ষুদ্র কণিকার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম২.৫) গড় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ ১০ মাইক্রোগ্রাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে৷ কিন্তু ঢাকার বাতাসে এই কণিকার মাত্রা ২০১৮ সালে প্রতি ঘনমিটারে পাওয়া যায় ৯৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম, যা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি৷ তবে এক বছর আগে ২০১৭ সালে এই মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৯ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম৷ ২০১৭ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল মঙ্গোলিয়া৷
দূষণের লজ্জায় ঢাকা পড়লো বাংলাদেশ
বিশ্বের দূষিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, শীর্ষে রয়েছে বুরুন্ডি৷ এনভারনমেন্টাল পারফর্মেন্স সূচিতে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে কম দূষিত দেশ সুইজারল্যান্ড৷ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০টি দেশের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com
ডাভোসে প্রকাশিত প্রতিবেদন
ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে মঙ্গলবার এনভারনমেন্টাল পারফর্মেন্স ইনডেক্স ইপিআই-এর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়৷ ইপিআই স্কোর কম হওয়ার অর্থ হলো, বাতাস ভীষণভাবে দূষিত, জীববৈচিত্র হুমকির মুখে, কার্বন নিঃসরণ অত্যন্ত বেশি৷
ছবি: Reuters/D. Balibouse
বুরুন্ডি
বিশ্বের দূষিত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে বুরুন্ডি৷ এর ইপিআই স্কোর ২৭ দশমিক ৪৩৷
ছবি: picture-alliance/AA/R. Ndabashinze
বাংলাদেশ
ইনডেক্সে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শেষ থেকে দ্বিতীয়৷ ইপিআই স্কোর ২৯ দশমিক ৫৬৷ ইপিআই স্কোর নির্ধারণ করা হয় ১০টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে৷ বাতাসের গুণগত মান, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ভারী ধাতু, জীববৈচিত্র ও আচরণ, বনানী, জলবায়ু, জ্বালানি, বায়ু দূষণ, পানির উৎস এবং কৃষি৷
ছবি: bdnews24.com
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক কঙ্গো
দূষিত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক কঙ্গো৷ দেশটির ইপিআই স্কোর ৩০ দশমিক ৪১৷
ছবি: OrbMedia 2017
ভারত
দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান চতুর্থ৷ ইপিআই স্কোর ৩০ দশমিক ৫৭৷ এ বছরের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাতাসের গুণগত মানের দিক থেকে এখনও সর্বনিম্ন অবস্থানে ভারত, স্কোর ৫ দশমিক ৭৫, যেখানে চীনের বায়ু দূষণের স্কোর ১৪ দশমিক ৩৯ এবং পাকিস্তানের ১৫ দশমিক ৬৯৷ এ সব দেশের বাতাস জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Faget
নেপাল
দূষিত শহরগুলোর মধ্যে নেপাল আছে পঞ্চম স্থানে৷ এর ইপিআই স্কোর ৩১ দশমিক ৪৪৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Gautam
মাদাগাস্কার
ষষ্ঠ অবস্থানে আছে মাদাগাস্কার৷ যার ইপিআই স্কোর ৩৩ দশমিক ৭৩৷
দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তান ও ভারতের বাতাসে ক্ষুদ্র কণিকার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৭৪ দশমিক ৩ ও ৭২ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম ছিল৷ চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান ও বাহরাইন৷ এরপর রয়েছে যথাক্রমে মঙ্গোলিয়া, কুয়েত, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নাইজেরিয়া৷
সবচেয়ে কম দূষিত দেশ হিসেবে তালিকার নীচের দিকে রয়েছে যথাক্রমে আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া ও সুইডেনের নাম৷
বিশ্বের ৭৩টি দেশকে নিয়ে এই গবেষণা করা হয়৷ এইসব দেশের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৭তম হলেও রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়৷ আর শীর্ষ দূষিত রাজধানী ভারতের নতুন দিল্লি৷
বায়ুদূষণের শীর্ষ তালিকায় থাকা রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের তালিকায় প্রথম ২০টির মধ্যে ১৫টিই ভারতের৷ বাকি পাঁচটি হলো, ঢাকা, পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ ও লাহোর এবং চীনের হোতান ও কাশগর৷ ভারতের গুরগাঁও সবচেয়ে দূষিত শহর৷
দূষণের কারণ
বাংলাদেশে বায়ুদূষণেরপ্রধান কারণ হিসেবে ইটভাটা এবং যানবাহনের জ্বালানি তেলকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি সারাদেশের অবস্থা খারাপ বলবনা৷ তবে ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থা খারাপ৷ এটা অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই৷ ঢাকার বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশ কারণ শহরের আশেপাশের ইটভাটা৷ এরপর রয়েছে নির্মাণকাজ৷ নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলো যুক্ত হয়৷ এরপরে রয়েছে যানবাহনে ব্যবহৃত জ্বালানি৷ এছাড়া নতুন একটি কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, তা হলো বর্জ্য পোড়ানো৷ ঢাকায় এখন নানা ধরণের বর্জ্য পোড়ানো হয় এবং এটা দিন দিন বাড়ছে৷ শিল্প কারখানার মধ্যে স্টিল রিরোলিং মিল বায়ু দূষণ করে, ক্ষুদ্র কণা ছড়ায়৷ এরপরে আছে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি৷’’
ঢাকার বায়ুদূষণের অবস্থা খারাপ এটা অস্বীকার করে কেনো লাভ নেই: মো. জিয়াউল হক
তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার বাইরেও বায়ুদূষণের কারণগুলো প্রায় একই রকম৷ তবে ঢাকার বাইরে বায়ুদূষণ অনেক কম৷ তাই আমি মনে করি এই প্রতিবেদনটি ঠিক নয়৷ এখানে পদ্ধতিগত সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি৷ কারণ ঢাকার বাইরে দূষণ অনেক কম৷ তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে দূষণে এক নম্বর হয়?’’
মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘‘আমরা বায়ুদূষণ মনিটর করি৷ ঢাকাসহ সারাদেশে ১৭টি পয়েন্টে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা আছে৷ আমাদের যন্ত্রপাতি আছে৷ তবে বায়ুদূষণ কমিয়ে আনায় আমাদের একক কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই৷ আমরা ইটভাটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারি৷ ইটের বিকল্পের জন্য প্রচার চালাতে পারি৷ কিন্তু দূষণের জন্য আরো অনেক কিছু দায়ী, যেখানে আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই৷ এখানে সমন্বয়ের অভাব আছে৷ আর সচেতনতা তৈরির কাজও কার্যকরভাবে হচ্ছেনা৷’’
‘সরকারের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়’
বায়ু দূষণ রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তেমন দক্ষ এবং তৎপর নয়, সচেতনতামূল কর্মসূচি নেই: ড.শহীদ আখতার হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এয়ার কোয়ালিটি রিচার্স অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার’-এর প্রকল্প ম্যানেজার এবং মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বায়ুদূষণের ঘটনা দুইভাবে ঘটে৷ একটি হলো ক্ষুদ্র কণিকার কারণে৷ আকেটি হলো নানা কেমিকেল ও দূষিত পদার্থের কারণে৷ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কণিকার মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি৷ আর প্রধান কারণ এখন ইট ভাটা৷ তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে যতটা বলা হচ্ছে ততটা নয়৷ দিল্লিতে স্কুল, কলেজ দূষণের কারণে বন্ধ করে দিতে হয়৷ আমাদের এখানেতো তা হয়না৷ আর দূষণের কারণ যে আমাদের দেশই, শুধু তা নাও হতে পারে৷ পার্শ্ববর্তী দেশের কারণেও দূষিত হতে পারে৷ আর আমাদের এখানে বায়ুদূষণটা সিজনাল৷ শীতের সময় বেশি হয়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি৷ আর নানা রোগের সঙ্গে এর কী কার্যকারণ সম্পর্ক আছে তাও আমরা দেখার চেষ্টা করছি৷’’
অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসেন বলেন, ‘‘এই বায়ুদূষণ রোধে সরকারের উদ্যোগ তেমন দৃশ্যমান নয়৷ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তেমন দক্ষ এবং তৎপর নয়৷ দূষণ পরিমাপে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাও তত আধুনিক নয়৷ সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই বললেই চলে৷’’
ঢাকার বাতাস সবচেয়ে দূষিত!
এবার যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ঢাকার অবস্থান নিচ থেকে সবার উপরে৷ বায়ু দূষণের লজ্জা যেন কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না৷ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০টি দেশের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com
ঢাকা প্রথম, বাংলাদেশ দ্বিতীয়
যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একিউআই সূচকে ৩০০ পয়েন্ট মানেই বাতাস বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করা, সেখানে ঢাকার বাতাস সম্প্রতি ৬০০ পয়েন্টও পার করেছে৷ সূচকে ঢাকা ৩০০ থেকে ৫০০ পয়েন্টের মধ্যে সবসময়ই আছে৷ এদিকে, সম্প্রতি ডাভোসে প্রকাশিত ইনডেক্সে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শেষ থেকে দ্বিতীয়৷
ছবি: bdnews24.com
ডাভোসে প্রকাশিত প্রতিবেদন
ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে মঙ্গলবার এনভারনমেন্টাল পারফর্মেন্স ইনডেক্স ইপিআই-এর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়৷ ইপিআই স্কোর কম হওয়ার অর্থ হলো, বাতাস ভীষণভাবে দূষিত, জীববৈচিত্র হুমকির মুখে, কার্বন নিঃসরণ অত্যন্ত বেশি৷
ছবি: Reuters/D. Balibouse
বুরুন্ডি
বিশ্বের দূষিত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে বুরুন্ডি৷ এর ইপিআই স্কোর ২৭ দশমিক ৪৩৷
ছবি: picture-alliance/AA/R. Ndabashinze
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক কঙ্গো
দূষিত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক কঙ্গো৷ দেশটির ইপিআই স্কোর ৩০ দশমিক ৪১৷
ছবি: OrbMedia 2017
ভারত
দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান চতুর্থ৷ ইপিআই স্কোর ৩০ দশমিক ৫৭৷ এ বছরের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাতাসের গুণগত মানের দিক থেকে এখনও সর্বনিম্ন অবস্থানে ভারত, স্কোর ৫ দশমিক ৭৫, যেখানে চীনের বায়ু দূষণের স্কোর ১৪ দশমিক ৩৯ এবং পাকিস্তানের ১৫ দশমিক ৬৯৷ এ সব দেশের বাতাস জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Faget
নেপাল
দূষিত শহরগুলোর মধ্যে নেপাল আছে পঞ্চম স্থানে৷ এর ইপিআই স্কোর ৩১ দশমিক ৪৪৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Gautam
মাদাগাস্কার
ষষ্ঠ অবস্থানে আছে মাদাগাস্কার৷ যার ইপিআই স্কোর ৩৩ দশমিক ৭৩৷