শীত পড়তে না পড়তেই বায়ু দূষণের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে দিল্লিতে। পাঞ্জাবে রেকর্ড মাত্রায় খড় পোড়ানো হয়েছে মঙ্গলবার।
বিজ্ঞাপন
তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে দিল্লিতে। মঙ্গলবার সকালে তাপমাত্রা ১৫ দশমিক আট ডিগ্রিতে নেমেছিল। একইসঙ্গে বাতাসের গতিও কমে গেছে। ফলে বাড়ছে দূষণ। বুধবার দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা ২০০ একিউআই-য়ের উপরে। পার্শ্ববর্তী নয়ডায় একিউআই আড়াইশোর উপরে চলে গেছে। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবে জায়গায় জায়গায় তা ৩০০-র আশপাশে পৌঁছে গেছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। দীপাবলির সময়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দিল্লি সরকার ইতিমধ্যেই বায়ু দূষণ নিয়ে দুইটি বৈঠক করেছে। শেষ বৈঠকটি হয়েছে গত ২৩ তারিখ। ওই দিন একটি অ্যাকশন প্ল্যানও তৈরি করা হয়েছে। দিল্লির মোট ১৩টি এলাকাকে হটস্পট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দিল্লির মেট্রো এবং ইলেকট্রিক বাসের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে তাদের সার্ভিস আরো বাড়ানোর জন্য। মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বাস এবং মেট্রো বেশি করে ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দূষণ থেকে রেহাই নেই দিল্লির
প্রতি শীতেই ঘুরেফিরে শিরোনামে উঠে আসে বিষাক্ত দিল্লির বাতাস৷ কেন বদলাচ্ছে না বাস্তবতা, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/I. Aditya
কতটা দূষিত দিল্লি?
দিল্লির বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া আর দিনে ২৫টা সিগারেট খাওয়ার প্রভাব ফুসফুসের ওপর সমান৷ এতটাই দূষিত ভারতের রাজধানীর বাতাস যে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যূনতম বিপজ্জনক বাতাসের মানের চেয়ে ২০ গুণ খারাপ৷ ভারতের কেন্ত্রীয় দুষণ নিয়ন্ত্রক সিপিসিবি জানাচ্ছে, বাতাসের মানের মাপকাঠিতে সবচেয়ে বেশি দূষণের মাত্রা হয় ৫০০৷ দিল্লির বাতাস সেই মাপকাঠিতে কখনোই ৪৫০ থেকে নামে না ও প্রায়ই ৫০০ ছুঁয়ে থাকে
নিকটবর্তী হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কৃষিবর্জ্য পোড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত যানচলাচল দিল্লির বাতাসকে নিশ্বাসের অযোগ্য করে তুলেছে৷ এছাড়া, ভারতের অন্যান্য শহরের চেয়ে তুলনায় দিল্লিতে বেশি শীতের আবহাওয়া থাকায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে ও বিভিন্ন দূষকের কণা বাতাসে আটকে থাকে৷
ছবি: DW/Catherine Davison
ভৌগলিক কারণ
ক্লিন এয়ার এশিয়ার ভারত অঞ্চলের প্রধান প্রার্থনা বরা ডয়চে ভেলেকে জানান, অবস্থানগত কারণের জন্য দিল্লির এই সমস্যা গুরুতর হচ্ছে৷ আশেপাশে কোনো জলাধার না থাকায় ও আবহাওয়ার ধাঁচ শীতপ্রধান ও শুষ্ক হওয়ায় দূষিত বাতাস পালাবার জায়গা পায় না৷ এছাড়া, তীব্র বেগে চলা বাতাস প্রায়ই সাথে করে আরো বাড়তি ধুরো নিয়ে আসে, যা আরো খারাপ করে পরিস্থিতি৷
ছবি: Gaurav Menghaney
প্রভাব
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রতি শীতেই আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিশ্বাসজনিত ও হৃদরোগ-সম্পর্কিত রোগীদের বাড়ন্ত দেখতে পাই৷ দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়া স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকাশ রোধ করে৷ দিল্লিতে বর্তমানে প্রতি তিনজনে একজন শিশুর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বহু শিশুর ফুসফুস সম্পূর্ণ বেড়ে ওঠে না ও সেখানে রক্তক্ষরণও হয়=তে থাকে৷’’
ছবি: DW/Catherine Davison
কোভিড, উৎসব ও দূষণ
নিকৃষ্ট বাতাসের মান দিল্লির বাসিন্দাদের সবল ফুসফুসকে বিকল করছে৷ এরসাথে উৎসবের মরসুমে আতশবাজির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে এই মান আরো নিচে নামাতে থাকে৷ অসমর্থ্য ফুসফুস কোভিড সংক্রমণ টেকাতে পারছে না, ফলে হু হু করে বাড়ছে দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ, মনে করছেন অনেকে৷ সোমবার দিল্লিতে একদিনে সাত হাজার ৭৪৫টি নতুন সংক্রমণ দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Talukdar
কর্তৃপক্ষের অভিমত
২০১৯ সালে কৃষিবর্জ্য পোড়ানো থামাতে আইনী নির্দেশ এলেও, তার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি৷ জাতীয় সবুজ ট্রাইবুনাল নভেম্বর মাসে আতশবাজি পোড়ানো বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা করছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘গ্রিন অ্যাপ’ চালু করেছেন, যাতে করে দুষণবিষয়ক নাগরিক নালিশ নথিভুক্ত করা যায়৷
ছবি: DW/A. Ansari
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অনুমিতা রায়চৌধুরীর মতে, অবিলম্বে শহরে বিকল্প গণপরিবহণের কথা ভাবতে হবে, বাড়াতে হবে সাইকেলের মতো পরিবেশবান্ধব যানচলাচল৷ পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও শিল্পক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার চালু করতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি৷ তবে এসবের কিছুই সরকারী তৎপরতা ছাড়া সম্ভব নয়, মনে করেন রায়চৌধুরী৷
ছবি: DW/A. Ansari
7 ছবি1 | 7
খড় পোড়ানো
গত এক সপ্তাহে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় ক্ষেতে আগুন দেওয়া শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র মঙ্গলবার পাঞ্জাবে ৩৫০টি ক্ষেতে খড় পোড়ানো হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও খড় পোড়ানো বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে প্রশাসন জানাচ্ছে।
বস্তুত, এ বছর বন্যা হওয়ায় ফসল নষ্ট হয়েছে অনেক। ফলে খড় পোড়ানো এখনো অনেক বাকি আছে বলে কৃষকদের একটি অংশ জানিয়েছে। আগামী কয়েকদিন আরো খড় পোড়ানো হবে বলেই জানিয়েছে তারা।
দিল্লিরপরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই জানিয়েছেন, ''আবহাওয়া আমাদের হাতে নেই। দীপাবলির সময় পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে এটা ধরে নিয়েই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছি।''
পশ্চিমবঙ্গ পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''প্রতি বছরই উত্তর ভারতে শীতের সময় এই ঘটনা ঘটে। আগে থেকে সতর্কতা নিলে পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।'' কল্যাণ জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ু এই সময় উল্টো দিকে যায়। অর্থাৎ, উত্তর থেকে সমুদ্রের দিকে যায়। ফলে উত্তর ভারতের সমস্ত দূষণ নিয়ে তা পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের দিকে যাত্রা করে। উত্তর ভারতের দূষণের জের পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের উপরেও পড়ে। এবারের পরিস্থিতি নিয়ে তা-ই এখন থেকেই তারা উদ্বিগ্ন।