বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনা চলছে৷ দিল্লির দূষণ-মাত্রা ভয়াবহ৷ অথচ মন্ত্রী, সংগীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয় বলছেন, বায়ু দূষণে মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে৷
বিজ্ঞাপন
মাত্র কিছু দিন আগেই ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি শুনানি চলাকালীন বলেছিলেন, দিল্লির বায়ু-দূষণের মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, একে ‘নরকে’র সঙ্গে তুলনা করা যায়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও-র রিপোর্ট বলছে, বায়ু দূষণের নিরিখে সব চেয়ে দূষিত শহর গুলির মধ্যে অন্যতম দিল্লি৷ পিছিয়ে নেই কলকাতাও৷ বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে এক নম্বরে ভারত৷ অথচ সেই দেশেরই পরিবেশ এবং বন সংরক্ষণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সংসদের উচ্চকক্ষে জানালেন, বায়ু দূষণের কারণে এ দেশে মৃত্যু হচ্ছে, এমন কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই৷ বরং তাঁর বক্তব্য, দেশের মানুষের শারীরিক সমস্যার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাদ্যাভ্যাস, কাজের চরিত্র, অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি৷
‘দূষণের কারণে মৃত্যুর হার যে বাড়ছে, তা বোঝার জন্য বেশি পড়াশোনাও প্রয়োজন হয় না’
সোমবার রাজ্যসভায় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীকে একটি রিপোর্টের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়৷ পরিবেশ বিষয়ক একটি সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র ২০১৬ সালেই বায়ু দূষণের জন্য ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, বায়ু দূষণের কারণে অসুখ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ তারই জবাবে বাবুল সুপ্রিয়ের এই উক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷ পরিবেশবিদদের বক্তব্য, দূষণ সম্পর্কে সাধারণ ধারণাটুকুও নেই পরিবেশ প্রতিমন্ত্রীর, সে কারণেই এমন আলটপকা মন্তব্য তিনি করেছেন৷
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, দূষণের কারণে মৃত্যুর হার যে বাড়ছে, তা বোঝার জন্য বেশি পড়াশোনা করারও প্রয়োজন হয় না৷ একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই তা জানা যায়৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের জন্য ভারতে প্রতি বছর অন্তত ২৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়৷ বাড়ছে ফুসফুসের রোগ৷ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা৷ ফলে পরিসংখ্যান নেই বলে বাবুল সুপ্রিয় যে দাবি করেছেন, তা ধোপে টেকে না বলেই দাবি পরিবেশকর্মীদের৷ বরং তাঁদের বক্তব্য, সত্যকে অস্বীকার না করে, কী করে দূষণের মাত্রা কমানো যায়, সে দিকে নজর দিক সরকার৷
বায়ুদূষণে মৃত্যুতে বাংলাদেশ পঞ্চম
বাংলাদেশের শতভাগ মানুষই মাত্রাতিরিক্ত দূষিত বায়ুতে বসবাস করছে৷ এজন্য ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ‘দি স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট ২০১৯’ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: bdnews24.com
বায়ুদূষণে ঝুঁকি
বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যু ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ৷ দূষিত বায়ু গ্রহণের কারণে হৃদযন্ত্রের অসুখ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুস সংক্রমণ ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগছে মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/S. Ziese
মৃত্যুর কারণ
বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয় বায়ুদূষণ তার মধ্যে পঞ্চম৷ ২০১৭ সালে ৪৯ লাখ মানুষ দূষিত বায়ুর কারণে মারা গেছে৷ মোট ১৪.৭ কোটি বছর সুস্বাস্থ্যে কাটানোর সুযোগ হারিয়েছে৷
ছবি: Greenpeace/V. Zalevskiy
দূষণের শিকার বেশিরভাগ মানুষ
একটি দেশের বায়ু স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপযোগী তা পরিমাপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডাব্লিউএইচও’র মানদণ্ড রয়েছে৷ সে অনুযায়ী ৯০ ভাগ মানুষই এমন অঞ্চলগুলোতে বাস করে যেখানকার বায়ু সুস্বাস্থ্যের উপযোগী নয়৷ ডাব্লিউএইচও-র সবচেয়ে নীচের লক্ষ্যমাত্রাটিও পূরণ করতে পারছে না এমন এলাকায় বাস করে অর্ধেকের বেশি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
মাত্রাতিরিক্ত দূষণ দক্ষিণ এশিয়ায়
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু দক্ষিণ এশিয়ায়৷ ডাব্লিউএইচও’র মাত্রা অনুযায়ী ২০১৭ সালে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল নেপালে৷ এরপর রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান৷ এই অঞ্চলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বায়ু আছে ভুটানে৷ ডাব্লিউএইচওর নীচের মাত্রাটির কাছাকাছি তাদের অবস্থান৷ অঞ্চল ভিত্তিতে মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার পরে আছে সাব সাহারা আফ্রিকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Swarup
বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ
ডাব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বের যেসব দেশের শতভাগ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করছে তার একটি বাংলাদেশ৷ একই পরিস্থিতি পাকিস্তান, ভারত, চীন, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকোতেও৷
ছবি: Pavel Rahman/AP/dapd
বায়ুদূষণে বাংলাদেশে মৃত্যু
দূষিত বায়ুর কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়া শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ৷ ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বায়ুদূষণে মারা গেছে৷ প্রথম চারটি দেশের মধ্যে আছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া৷
ছবি: bdnews24.com
দূষণ রোধে গড় আয়ু বাড়বে
বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যহানি আর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে৷ প্রতিবেদন বলছে এখন বিশ্বে যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে, গড়ে তারা কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ মাস কম আয়ু পাচ্ছে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় যা ৩০ মাস৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তাই গড় আয়ুও বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ning
গড় আয়ু বেশি বাড়বে বাংলাদেশ
স্বাস্থ্যকর বায়ু নিশ্চিত করার সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে বাংলাদেশ৷ জন্ম নেয়া শিশুদের গড় আয়ু তখন ১.৩ বছর বেড়ে যাবে৷ এমন সুবিধা পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে থাকবে ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান৷ তাদের গড় আয়ু ১ বছর বেড়ে যাবে৷