বায়ু দূষণ: দিল্লিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ স্কুল
৩ ডিসেম্বর ২০২১
বায়ু দূষণের মাত্রা এখনো বিপদসীমার উপরে। শুক্রবার থেকে ফের স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের।
বিজ্ঞাপন
দীপাবলির পর দিল্লির বায়ু দূষণ এতটাই ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে সাময়িক সময়ের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। গত সোমবার থেকে ফের তা চালু হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি সরকারের কাছে স্কুল খোলার কারণ জানতে চায়। দূষণের মাত্রা না কমা সত্ত্বেও কেন স্কুল খোলা হয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এরপরেই শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি প্রশাসন।
আদালতে দিল্লি সরকার জানিয়েছে, আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, চলতি সপ্তাহে দূষণের পরিমাণ কমার সম্ভাবনা আছে। সে কথা মাথায় রেখেই স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দূষণের মাত্রা যেহেতু এখনো কমেনি, তাই ফের স্কুল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী নোটিস না বের হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইন ক্লাস চলবে।
দূষণ থেকে রেহাই নেই দিল্লির
প্রতি শীতেই ঘুরেফিরে শিরোনামে উঠে আসে বিষাক্ত দিল্লির বাতাস৷ কেন বদলাচ্ছে না বাস্তবতা, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/I. Aditya
কতটা দূষিত দিল্লি?
দিল্লির বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া আর দিনে ২৫টা সিগারেট খাওয়ার প্রভাব ফুসফুসের ওপর সমান৷ এতটাই দূষিত ভারতের রাজধানীর বাতাস যে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যূনতম বিপজ্জনক বাতাসের মানের চেয়ে ২০ গুণ খারাপ৷ ভারতের কেন্ত্রীয় দুষণ নিয়ন্ত্রক সিপিসিবি জানাচ্ছে, বাতাসের মানের মাপকাঠিতে সবচেয়ে বেশি দূষণের মাত্রা হয় ৫০০৷ দিল্লির বাতাস সেই মাপকাঠিতে কখনোই ৪৫০ থেকে নামে না ও প্রায়ই ৫০০ ছুঁয়ে থাকে
নিকটবর্তী হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কৃষিবর্জ্য পোড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত যানচলাচল দিল্লির বাতাসকে নিশ্বাসের অযোগ্য করে তুলেছে৷ এছাড়া, ভারতের অন্যান্য শহরের চেয়ে তুলনায় দিল্লিতে বেশি শীতের আবহাওয়া থাকায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে ও বিভিন্ন দূষকের কণা বাতাসে আটকে থাকে৷
ছবি: DW/Catherine Davison
ভৌগলিক কারণ
ক্লিন এয়ার এশিয়ার ভারত অঞ্চলের প্রধান প্রার্থনা বরা ডয়চে ভেলেকে জানান, অবস্থানগত কারণের জন্য দিল্লির এই সমস্যা গুরুতর হচ্ছে৷ আশেপাশে কোনো জলাধার না থাকায় ও আবহাওয়ার ধাঁচ শীতপ্রধান ও শুষ্ক হওয়ায় দূষিত বাতাস পালাবার জায়গা পায় না৷ এছাড়া, তীব্র বেগে চলা বাতাস প্রায়ই সাথে করে আরো বাড়তি ধুরো নিয়ে আসে, যা আরো খারাপ করে পরিস্থিতি৷
ছবি: Gaurav Menghaney
প্রভাব
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রতি শীতেই আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিশ্বাসজনিত ও হৃদরোগ-সম্পর্কিত রোগীদের বাড়ন্ত দেখতে পাই৷ দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়া স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকাশ রোধ করে৷ দিল্লিতে বর্তমানে প্রতি তিনজনে একজন শিশুর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বহু শিশুর ফুসফুস সম্পূর্ণ বেড়ে ওঠে না ও সেখানে রক্তক্ষরণও হয়=তে থাকে৷’’
ছবি: DW/Catherine Davison
কোভিড, উৎসব ও দূষণ
নিকৃষ্ট বাতাসের মান দিল্লির বাসিন্দাদের সবল ফুসফুসকে বিকল করছে৷ এরসাথে উৎসবের মরসুমে আতশবাজির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে এই মান আরো নিচে নামাতে থাকে৷ অসমর্থ্য ফুসফুস কোভিড সংক্রমণ টেকাতে পারছে না, ফলে হু হু করে বাড়ছে দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ, মনে করছেন অনেকে৷ সোমবার দিল্লিতে একদিনে সাত হাজার ৭৪৫টি নতুন সংক্রমণ দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Talukdar
কর্তৃপক্ষের অভিমত
২০১৯ সালে কৃষিবর্জ্য পোড়ানো থামাতে আইনী নির্দেশ এলেও, তার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি৷ জাতীয় সবুজ ট্রাইবুনাল নভেম্বর মাসে আতশবাজি পোড়ানো বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা করছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘গ্রিন অ্যাপ’ চালু করেছেন, যাতে করে দুষণবিষয়ক নাগরিক নালিশ নথিভুক্ত করা যায়৷
ছবি: DW/A. Ansari
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অনুমিতা রায়চৌধুরীর মতে, অবিলম্বে শহরে বিকল্প গণপরিবহণের কথা ভাবতে হবে, বাড়াতে হবে সাইকেলের মতো পরিবেশবান্ধব যানচলাচল৷ পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও শিল্পক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার চালু করতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি৷ তবে এসবের কিছুই সরকারী তৎপরতা ছাড়া সম্ভব নয়, মনে করেন রায়চৌধুরী৷
ছবি: DW/A. Ansari
7 ছবি1 | 7
কোভিডকালে গোটা দেশেই দীর্ঘ সময়ের জন্য স্কুল কলেজ বন্ধ ছিল। প্রায় ১৮ মাস পরে নভেম্বর মাসে একে একে বিভিন্ন রাজ্য স্কুল খুলতে শুরু করে। দিল্লিতেও একইভাবে স্কুল শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রতি বছরের মতো এবারেও দীপাবলির সময়ে দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। শত নিষেধ সত্ত্বেও লাগামছাড়া বাজি ফাটিয়েছে সাধারণ মানুষ। এরপরেই তড়িঘড়ি স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আদালতও জানিয়ে দেয়, এই পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারি অফিসগুলিকেও ওয়ার্ক ফ্রম হোমের পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্রদের একাংশের বক্তব্য, করোনার জন্য এমনিতেই পড়াশোনা ঠিকমতো হয়নি। অনলাইনে ক্লাসে কাজ চালাতে হয়েছে। এখন যখন স্কুল খোলার সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তখন গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো দূষণ এসে জুটেছে। এর ফলে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। দূষণের জন্য যারা দায়ী কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।