নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম উৎস বায়ু৷ কিন্তু ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও এই উৎসের ব্যবহার ততটা করতে পারেনি৷ তবে সম্প্রতি ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি চুক্তি সই হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কক্সবাজারে এই কেন্দ্র স্থাপন করবে ‘ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি (বিডি) লিমিটেড' নামে যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের একটি যৌথ কোম্পানি৷ প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে এই কেন্দ্রটি স্থাপনে গত মে মাসে একটি চুক্তি সই হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী, আগামী এক বছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালের মে মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা৷
সৌরতে এগিয়ে, বায়ুতে পিছিয়ে বাংলাদেশ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম উৎস বায়ু৷ কিন্তু ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও এই উৎসের ব্যবহার ততটা করতে পারেনি৷
ছবি: imago/Fotoarena
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিপিডিবি-র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০,৪১৬ মেগাওয়াট৷ এর মধ্যে ১৬ জুলাই রাতে রেকর্ড ৭,৪০৩ মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/Thorsten Schier
নবায়নযোগ্য জ্বালানি
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে, বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র আড়াই শতাংশ আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎস থেকে৷ তবে ২০১৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যাটা ৫-এ উন্নীত করতে চায় সরকার৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সৌরশক্তি
গত কয়েক বছরে সৌরশক্তি উৎপাদনে বেশ এগিয়েছে বাংলাদেশ৷ বর্তমানে মাসে প্রায় ৮০ হাজার ‘সোলার হোম সিস্টেম’ বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১৬৫ মেগাওয়াট৷
ছবি: BGEF
বায়ুশক্তি
সমুদ্র অঞ্চল বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশ উপযুক্ত৷ বাংলাদেশে প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রয়েছে৷ কিন্তু তারপরও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সরকার এখন পর্যন্ত তেমন একটা নজর দেয়নি৷
ছবি: Jafar Alam/Coxs Bazar
মাত্র ২ মেগাওয়াট
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটো বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে৷ একটি ফেনীর সোনাগাজীতে৷ অন্যটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়৷ এই দুটোর উৎপাদন ক্ষমতা ২ মেগাওয়াট৷
ছবি: Morten Stricker/AFP/Getty Images
৬০ মেগাওয়াটের জন্য চুক্তি
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের একটি যৌথ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ৷ এর আওতায় কক্সবাজারের কুরুশকুলে বঙ্গোপসাগরের তীরে ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷ আগামী মে মাস থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা৷
ছবি: cc-by-Shovon
‘উইন্ড ম্যাপ’
বায়ু থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ২০১২ সালে সরকার ভারতীয় এক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে৷ এর আওতায় কোম্পানিটি ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কুয়াকাটা ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় বাতাসের গতি মেপে দেখছে৷
ছবি: imago/Fotoarena
7 ছবি1 | 7
জানা গেছে, মহেশখালী নদীর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত কক্সবাজারের কুরুশকুলে বঙ্গোপসাগরের তীরে প্রতিটি ২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩০-৩৫টি উইন্ড টারবাইন স্থাপন করা হবে৷
সমুদ্র অঞ্চল বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশ উপযুক্ত৷ বাংলাদেশে প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রয়েছে৷ কিন্তু তারপরও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সরকার এখন পর্যন্ত তেমন একটা নজর দেয়নি৷
ফেনীর সোনাগাজীতে মহুরী বাঁধ এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়৷ সেসময় মহুরী নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিটি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি টারবাইন বসানো হয়েছিল৷ স্থাপিত হওয়ার পর দুবছর পর্যন্ত ঐ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও পরবর্তী সাতবছর উৎপাদন বন্ধ থাকে৷ এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেখানে আবার উৎপাদন শুরু হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
বাংলাদেশের অন্য আরেকটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়৷ ২০০৮ সালে সেখানে ৫০টি টারবাইন বসানো হয়৷ প্রতিটির ক্ষমতা ২০ কিলোওয়াট করে৷ অর্থাৎ এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১ মেগাওয়াট৷
পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিপিডিবি-র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০,৪১৬ মেগাওয়াট৷ এর মধ্যে বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা মাত্র ১.৯ মেগাওয়াট৷
দেশেই তৈরি হচ্ছে সোলার প্যানেল
বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন সোলার প্যানেল উৎপাদন করছে৷ এছাড়া সৌরশক্তি বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ ফলে সৌরবিদ্যুতের দাম দিন দিন কমছে বলে জানান বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি জনপ্রিয় করার অন্যতম ব্যক্তি দীপাল বড়ুয়া৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
দাম কমছে
বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন সোলার প্যানেল উৎপাদন করছে৷ এছাড়া সৌরশক্তি বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ ফলে সৌরবিদ্যুতের দাম দিন দিন কমছে বলে জানান ‘বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন’ বা বিএসআরইএ-র সভাপতি দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
দেশেই তৈরি হচ্ছে
বড়ুয়া বলেন, সোলার প্যানেল সাধারণত চীন থেকে আমদানি করা হয়৷ তবে এখন দেশেও এটা তৈরি হচ্ছে৷ এছাড়া এলইডি অ্যাসেম্বলিং, চার্জ কন্ট্রোলার তৈরির মতো কাজ করতে সমর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এখন কম খরচে সৌরশক্তি ব্যবহার করতে পারছে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
মাসে ৮০ হাজার
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৮০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বড়ুয়া৷ ২০১২ সালে এই সংখ্যাটা ছিল অর্ধেক অর্থাৎ ৪০ হাজার৷
ছবি: BGEF
সবার জন্য বিদ্যুৎ
বড়ুয়ার আশা আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি বাড়িতে সৌরশক্তি পৌঁছে যাবে৷ যারা এখনো বিদ্যুৎ বঞ্চিত তাদের ঘরেও বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে৷ কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডকলের আর্থিক সহায়তায় ছোট-বড় প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান এ খাতে কাজ করছে৷
ছবি: BGEF
সোলার হোম সিস্টেম
পাঁচজনের একটা পরিবারের জন্য ৪০-৫০ ওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম হলেই চলে বলে জানান বড়ুয়া৷ এই সিস্টেম দিয়ে ঘরে লাইটের ব্যবস্থা করা, টিভি দেখা ও মোবাইল চার্জ করা যায়৷ তবে ফ্যান চালাতে হলে ৮৫ বা ১০০ ওয়াটে যেতে হবে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
খরচ কেমন?
দীপাল বড়ুয়া বলেন, বিশ বছরের জন্য ২০ ওয়াটের একটি প্যানেল নিলে, সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদী ব্যাটারি, তিন বছরের জন্য চার্জ কন্ট্রোলার আর এলইডি লাইট ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য, এমন হলে ১২ হাজার টাকা খরচ হবে৷ তবে ক্রেতাকে টাকাটা একসঙ্গে দিতে হয় না৷ ১০ বা ১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাকি টাকাটা কিস্তিতে দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে তিন বছর পর আর কোনো টাকা লাগবে না৷
ছবি: BGEF
বুদ্ধি করে ব্যবহারে লাভ
ব্যাটারির ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের গ্যারান্টি থাকলেও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করলে ৬-৭ বছরও চলে যায় বলে জানান বড়ুয়া৷ এরপর ব্যাটারিটা বদলে নতুন ব্যাটারি নেয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতাকে আগের ব্যাটারির খরচের এক-তৃতীয়াংশ টাকা ফেরত দেয়া হয়৷ ছবিতে নারীদের সৌরশক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: BGEF
গ্রিডে সরবরাহের সুযোগ
জার্মানিতে নিজের ছাদে বসানো সৌর প্যানেল থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ রয়েছে৷ এর ফলে বাড়ির মালিক নিজে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পাশাপাশি বাড়িত বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বেচে অর্থ উপার্জন করতে পারে৷ বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বিএসআরইএ, জানান দীপাল বড়ুয়া৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
8 ছবি1 | 8
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের অন্তত ৫ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎস থেকে পেতে চায়৷ এ জন্য প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে৷ বর্তমানে এই খাত থেকে ৪০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় বলে বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে৷ এর মধ্যে সৌরশক্তি থেকে আসে প্রায় ১৬৫ মেগাওয়াট৷ আর জলবিদ্যুৎ থেকে ২৩০, বায়োগ্যাস থেকে ৫, বায়োমাস থেকে ১ মেগাওয়াটেরও কম আর বায়ু থেকে আসে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ৷
উইন্ড ম্যাপ
বায়ু থেকে আরও বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ২০১২ সালে সরকার রিজেন পাওয়ারটেক প্রাইভেট লিমিটেড নামে ভারতীয় এক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে৷ এর আওতায় কোম্পানিটি ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কুয়াকাটা ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় বাতাসের গতি মেপে দেখছে৷ এখন পর্যন্ত তারা কক্সবাজার অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৬ থেকে ৮ মিটার পেয়েছে, যেটা বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী বলে জানা গেছে৷ আগামী বছরের মধ্যে ভারতীয় ঐ কোম্পানির কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে বলে জানা গেছে৷