1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিশন ‘বায়ো-টয়লেট’

মুরালী কৃষ্ণণ/জেকে২৮ জুন ২০১৪

যত্রতত্র মলত্যাগ বন্ধ করতে এবার এক লাখ ‘বায়ো-ডাইজেস্টার’ টয়লেট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার৷ বলা বাহুল্য এটা এমন একটা দেশে করা হচ্ছে, যে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷

High Tech Toiletten in Indien
ছবি: Murali Krishnan

এ টয়লেটে ব্যবহার করা হবে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা মনুষ্যবর্জ্যকে দ্রুত ভেঙে ফেলে পানি, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনে পরিণত করবে৷ বড় ধরনের পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোর প্রয়োজন পড়বে না বলে এ টয়লেট বানানো যাবে যে কোনো স্থানে৷ ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পরীক্ষামূলকভাবে বায়ো-ডাইজেস্টার টয়লেট বসিয়ে ইতোমধ্যে আশাব্যাঞ্জক ফল পেয়েছে কর্তৃপক্ষ৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ভারত সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা না থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয় বড় অর্থনীতির এই দেশে প্রায় ৬২ কোটি মানুষ প্রতিদিন উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগে বাধ্য হয়৷ এই সংখ্যা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক৷

‘বায়ো-টয়লেট’ছবি: Murali Krishnan

চলতি মাসের শুরুতে নতুন দিল্লির একটি সরকারি হাসপাতালের বাইরে প্রথমবারের মতো বায়ো-ডাইজেস্টার টয়লেট বসানোর পর স্থানীয় নিম্নবিত্তের বাসিন্দাদের মধ্যে তা স্বস্তি এনে দিয়েছে৷ যাঁরা প্রতিদিন এই বায়ো-টয়লেট ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যে রাম যাদব একজন৷

পেশায় দিনমুজুর রাম যাদব বলেন, ‘‘এখন আর আমাদের খোলা জায়গায় বসে কাজ সারতে হয় না৷ এখানে পানির ব্যবস্থাও আছে৷''

পয়ঃনিষ্কাশনের চেয়েও বেশি কিছু

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে থাকা ভারতের জন্য বায়ো-টয়লেট শুধু পয়ঃনিষ্কাশন বা জনস্বাস্থ্যের বিষয় নয়৷ বিশেষ করে যখন পর্যাপ্ত টয়লেটের অভাবকে ভারতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন অনেকেই৷

টয়লেট না থাকায় ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বহু নারীকে একাকী বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঠে বা খেতে যেতে হয়, যা ডেকে আনে বিপদের ঝুঁকি৷ বায়ো-টয়লেট সেই ঝুঁকিও অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন নয়া দিল্লির বাসিন্দা গীতা দেবী৷

এই গৃহিনী বলেন, ‘‘এই টয়লেটে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে৷ এরকম আরো অনেক বানানো দরকার৷''

এক লাখ বায়ো-টয়লেট বানানোর এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের সঙ্গে রয়েছে রাজ রেওয়ালের মতো একজন বিখ্যাত স্থপতি, যিনি ভারতের পার্লামেন্ট লাইব্রেরির নকশা করে প্রশংসিত হয়েছেন৷

রেওয়াল বলেন, ‘‘ভারতের শহরগুলোতে বস্তির বাসিন্দা এবং নিম্নবিত্তের বিপুল সংখ্যক মানুষকে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে হয়, যা একটি বড় ধরনের সমস্যা৷ বিশেষ করে দিল্লির ২৫ লাখ নারীকে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এ ভোগান্তির শিকার হতে হয়৷''

তিনি জানান, পরীক্ষামূলক বায়ো-টয়লেটের মূল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম (স্যান্ডুইচড হানিকম্ব) প্যানেল আর স্টেইনলেস স্টিলের খুঁটি দিয়ে৷ যেখানে স্যুয়ারেজ লাইন বা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই, সেখানেও বসানো যাবে এই পরিবেশবান্ধব টয়লেট৷

ব্যাকটেরিয়া

ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্প্রতি কাশ্মিরের সিয়চেন হিমবাহে প্রায় একই ধরনের একটি টয়লেট পরীক্ষা করে দেখেছ৷ সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) সারা দেশে এই বায়ো-টয়লেট চালুর একটি পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে৷

এ সংস্থার সাবেক গবেষক ড. উইলিয়াম সেলভামুর্থি বলেন, ‘‘আমরা নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি, যাতে কয়েক ধরনের সাইক্রোফিলিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে৷ এই ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টার্কটিকা থেকে এনে আমরা পরীক্ষাগারে কালচার করেছি৷ এ সব ব্যাকটেরিয়া মনুষ্য বর্জ্যকে দ্রুত পানি, কার্বন ডাই-অস্কাইড ও মিথেনে রূপান্তরিত করে৷''

তিনি জানান, যে কোনো ভৌগলিক অবস্থান বা আবহাওয়ায় এ টয়লেট বসানো যায়৷ এর জন্য বড় ধরনের অবকাঠামোরও প্রয়োজন হয় না৷

মিশন ২০২২

স্থপতি রাজ রাওয়াল আশা করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুরো ভারতে বায়ো-টয়লেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে৷

‘‘যে কোনো শহরে, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও এই টয়লেট বসানো যাবে৷ এর নকশার উন্নতি ঘটিয়ে খরচ কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷''

যত্রতত্র মলত্যাগের কারণে ভারতে যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়, তাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয় চিকিৎসা ভরতুকি হিসাবে৷ এ কারণে ‘বায়ো-ডাইজেস্টার' টয়লেট প্রকল্পকে সরকার অগ্রাধিকারের তালিকাতেই রেখেছে৷ সরকার আশা করছে, ২০১২ সালের পর আর কোনো ভারতীয়কে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতে হবে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ