অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেই একটি মেডিক্যাল র্জানাল জানালো, বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা নতুন স্ট্রেইনের মোকাবিলায় সক্ষম।
বিজ্ঞাপন
রোববারই দক্ষিণ আফ্রিকা জানিয়েছিল, তারা সে দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখবে। কারণ, করোনার নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ওই ভ্যাকসিন কাজ করছে না। সোমবারই একটি মেডিক্যাল জার্নালের পিয়ার রিভিউয়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় যে দুইটি নতুন করোনার স্ট্রেইন এখন সংক্রমিত হচ্ছে, বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা তার সঙ্গে লড়াই চালাতে সক্ষম। অন্য দিকে, জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পান জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে তিনটি টিকাকে এখনো পর্যন্ত ছাড়পত্র দিয়েছে, তার প্রতিটি কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকরী।
করোনার গণটিকার প্রথম দিন
বাংলাদেশে ২৭ জানুয়ারি টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হলেও রোববার থেকে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী গণহারে টিকাদান৷ টিকা নিয়েছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক সাধারণ মানুষ৷ দেখুন ছবিঘর৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
‘আনন্দের দিন’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার সকালে মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন৷ পরে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে নিজে টিকা নেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের আনন্দের দিন৷ এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম৷ এই টিকা নিয়ে যেন কোনো রিউমার না হয়৷’’ অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর টিকাদানকে কেন্দ্র করে শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে ভিড় করতে দেয়ায় সমালোচনা করেছেন অনেকে৷
ছবি: bdnews24.com
অন্য মন্ত্রী ও বিশিষ্টজনেরা
সোয়া ১১টার দিকে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান সেখানে টিকা নেন৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন৷ তিনি সস্ত্রীক এসে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে টিকা নেন৷ প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি টিকা দিয়েছি, কোনো অসুবিধা হয়নি। আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের ৪০ বিচারপতি টিকা নিয়েছেন। সুতরাং দেশবাসীকে বলব, সবাই যেন দ্রুত নিবন্ধন করেন৷’’
ছবি: privat
সাবেক প্রধান বিচারপতি
করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান শুরুর দিন রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক৷
ছবি: bdnews24.com
‘ভয় নেই’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) টিকাদান কেন্দ্রে টিকা নেন গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ টিকা নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি বলব, টিকা নিন সবাই, কোনো ভয় নেই৷ এটা (টিকা) আপনার অধিকার৷ যার যেদিন সময় হবে, টিকা নিয়ে নেবেন৷’’
ছবি: bdnews24.com
বিএসএমএমইউতে ঢাবি শিক্ষকরা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রোববার করোনাভাইরাসের টিকা নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক৷ তাদের সঙ্গে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান৷
ছবি: Asif Mahmud Ove/bdnews24.com
বয়স্কদের প্রাধান্য
বিশ্বের সব দেশেই করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছেন বয়স্করা৷ ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশেও৷ হুইল চেয়ারে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এই প্রবীণ নাগরিক টিকা নিতে যাচ্ছেন৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
পুলিশ সদস্যরা
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রায় আট হাজার সদস্য টিকা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছেন৷ প্রতিদিন ৪০০ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে৷ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে নিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম৷ এই ছবিটি তোলা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
সাধারণ মানুষ
একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ দেড়শ’ জনকে টিকা দেওয়া যাবে৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোববার সকালে করোনা ভাইরাসের টিকা নিচ্ছেন এক ব্যক্তি৷
ছবি: bdnews24.com
হাজার কেন্দ্র
প্রথম দিন ঢাকাসহ সারা দেশে এক হাজার পাঁচটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৫০টি কেন্দ্র৷ সোমবার থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে৷
ছবি: Asif Mahmud Ove/bdnews24.com
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
টিকা নেয়ার আগে ওয়েবসাইটে বা ম্মার্টফোনে অ্যাপস ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে৷ যাদের সেই নেই তারা কেন্দ্রে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেবেন৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে থাকা মোবাইল ফোনে পরবর্তীতে নির্দেশনা যাবে, তিনি কবে টিকা নেবেন৷
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/Zuma/picture alliance
১৯১০টি দল
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ঢাকায় ৫০টি স্থানে টিকাদান কার্যক্রম চলবে৷ সেখানে কাজ করবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ৩০০ জন৷ ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে৷ এসব জায়গায় এক হাজার ৯১০টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে৷
ছবি: bdnews24.com
12 ছবি1 | 12
করোনার নতুন স্ট্রেইন নিয়ে এখনো নানা গবেষণা চলছে। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, সাধারণ করোনা ভাইরাস থেকে নতুন স্ট্রেইন অনেক দ্রুত ছড়ালেও সেটি অতিরিক্ত ক্ষতিকর নয়। বিভিন্ন ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাও জানিয়েছিল, নতুন স্ট্রেইনের সঙ্গে লড়াইয়ে সক্ষম তাদের ভ্যাকসিনগুলি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গবেষণা রিপোর্ট বলছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নতুন স্ট্রেইনের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য। দুই হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে। রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশাসন এ কথা জানিয়েছে।
অন্য দিকে, সোমবার জার্নাল নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বায়োনটেক-ফাইজারেরভ্যাকসিন নতুন স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও কার্যকরী। তবে একই সঙ্গে সেখানে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের চরিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। ফলে এখন যে টিকাগুলি তৈরি হচ্ছে, ভবিষ্যতেও তা একই রকম কার্যকর থাকবে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
এদিকে জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পান জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে তিনটি ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে, তার প্রতিটিই কার্যকরী। তিনি জানিয়েছেন, টিকাকরণে আরো গতি আনা হবে। খেয়াল রাখা হবে, যাতে টিকা নষ্ট না হয়ে যায়। বায়োনটেকের টিকা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি। তা হিমাঙ্কের অনেক কম তাপমাত্রায় রাখতে হয়। স্পান জানিয়েছেন, যে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা পাওয়ার তালিকায় নাম পিছন দিকে আছে, প্রয়োজনে তাঁদেরকেও এগিয়ে আনা হবে। দ্রুত তাঁদের টিকা দেওয়া হবে। খেয়াল রাখা হবে, কোনো ভাবেই যাতে টিকা নষ্ট না হয়।