আবর্জনা থেকে জ্বালানি তৈরির উদ্যোগ নতুন বিষয় নয়৷ বিচ্ছিন্নভাবে এমন প্রচেষ্টা বা প্রকল্পের অভাব নেই৷ তবে গোটা বিশ্বে পেট্রোলিয়াম বর্জন করে শুধু বায়োমাস ব্যবহার করে সব চাহিদা মেটানো সম্ভব কি?
বিজ্ঞাপন
প্রায় প্রতিটি রাস্তার কোণেই বায়োমাস পাওয়া যায়৷ হামবুর্গ শহরে প্রায় সবকিছুই পুনর্ব্যবহার করা হয়৷ গাছ কাটার সময় পড়ে থাকা টুকরা এবং শুকনা পাতাকে সার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷
গোটা বিশ্বে টন-টন অর্গানিক আবর্জনা রয়েছে, যা ফেলে দেয়া হয়৷ যেমন তালগাছ, যার তেল থেকে মার্জারিন বা ফ্যাট তৈরি হয়৷ পাইটেক কোম্পানির স্টেফান শ্যোল বলেন, ‘‘শুধু এই বীজ কাজে লাগানো হয়৷ বাকি সব কিছু ফেলে দেয়া হয়, এমনকি পাঁচ বছর অন্তর গোটা তালগাছও৷''
হামবুর্গ শহরের পাইটেক কোম্পানি মনে করে, এমন অপচয় সত্যি দুঃখজনক৷ বিশেষ করে গাছ কাটার সময় যে জঞ্জাল সৃষ্টি হয়, বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা তরলে রূপান্তরিত করা যায়, যাকে ‘পাইরোলিসিস' তেল বলা হয়৷ এক শোধনাগারে সেটিকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হয়৷
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ভেরেন্ডা
সারা বিশ্বে যে তেলের মজুদ আছে আগামী একশো বছরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের৷ তাই বিকল্প জ্বালানির সন্ধান চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাট্রোফা বা ভেরেন্ডা
ইংরেজি নাম জাট্রোফা৷ এর কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে৷ এর মধ্যে ‘জাট্রোফা কারকাস’ বাংলাদেশে ভেরেন্ডা নামে পরিচিত৷ তবে কেউ কেউ ‘সাদা মান্দার’ও বলেন৷ ভেরেন্ডার বীজ থেকে অনেকেই তেল বের করে সেটা কাজে লাগান৷ কাজটা একটু বড় পরিসরে করলে বাংলাদেশ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
৩৭ লক্ষ টন তেল আমদানি
প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ৩৭ লাখ টন (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে৷ এর প্রায় ২৪ লাখ টনই ডিজেল, যার মোট আমদানি মূল্য ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি৷ সরকার বেশি দামে ডিজেল কিনে কম মূল্যে জনগণকে সরবরাহ করে৷ ফলে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান গুনতে হয় সরকারকে৷ তাই বায়োডিজেল উৎপাদনে ভেরেন্ডাকে কাজে লাগালে সরকারের লোকসান কমবে৷
ছবি: AFP/Getty Images
প্রতি হেক্টরে ৩-৪ হাজার লিটার
হিসেবে দেখা গেছে, এক হেক্টর জমিতে জন্মানো জাট্রোফা থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩-৪ হাজার লিটার বায়োডিজেল উৎপাদন করা সম্ভব৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
সরকারি উদ্যোগ
ভেরেন্ডা বা জাট্রোফা থেকে বায়োডিজেল উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে৷ কমিটি ২০০৭ সালে তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাখিল করলেও আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
সামাজিক বনায়ন
বাংলাদেশে অতি সহজেই বায়োডিজেল উৎপাদন সম্ভব৷ কারণ সরকারের ‘সামাজিক বনায়ন’ কর্মসূচির মাধ্যমে জাট্রোফা রোপণ ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে কারণ, বিকল্প জ্বালানির উৎসের সন্ধান পাওয়া না গেলে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: Live Energies GmbH/George Francis
বিকল্প জ্বালানির চাহিদা
সারা বিশ্বে যে তেলের মজুদ আছে তা আগামী একশো বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের৷ তাই অনেক দেশই বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে নেমেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কয়েকটি দেশে শুরু হয়েছে
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে অনেকদিন ধরেই বায়োডিজেলের নাম উচ্চারিত হয়ে আসছে৷ বিশেষ করে অনেক দেশেই এখন জাট্রোফা থেকে বায়োডিজেল উৎপাদন করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
তেল সরাসরি ব্যবহার করতে পারলে আরও ভালো হতো৷ ঠিক যেখানে বায়োমাস তৈরি হচ্ছে, সেখানেই – মিনি উৎপাদন কেন্দ্র সহ মোবাইল ‘পেট্রোল' পাম্পের মাধ্যমে৷ মার্কিন ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক ‘ক্যাটারপিলার'-এর সঙ্গে সহযোগিতায় বিজ্ঞানীরা এমন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন৷ স্টেফান শ্যোল বলেন, ‘‘এখনো পর্যন্ত আমরা শুধু ১,০০০ ঘণ্টার ‘সার্ভিস লাইফ' পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি৷ অর্থাৎ বিষয়টা এরকম৷ একটা ইঞ্জিন এক বছর ধরে চললে আটবার ইঞ্জেকশন সিস্টেম বদলাতে হয়৷ ভবিষ্যতে আমরা এমন উপাদান খুঁজে পেতে চাই, সাধারণ ডিজেল দিয়ে চালালেও যা একই সময় নেবে৷''
হামবুর্গের ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস-এও জঞ্জাল থেকে জ্বালানি তৈরির বিষয়ে গবেষণা চলছে৷ ব্যবহার করা তেল, প্লাস্টিক, হেভি অয়েল – গবেষণাগারে এ সব থেকে তেল তৈরি হচ্ছে৷
কাঁচামালেরও অভাব নেই, তাই দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে পেট্রোলিয়ামের বিকল্প হাতের নাগালেই রয়েছে৷ অধ্যাপক টোমাস ভিলনার বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদার মাত্রা ১০০ ‘এক্সাজুল'৷ এই চাহিদা বাড়তে না দিলে টেকসই প্রক্রিয়ায় তৈরি বায়োমাস দিয়ে পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব৷ তবে ভারত ও চীনের মতো দেশে চাহিদা সীমিত রাখতে হবে৷''
উদীয়মান শক্তিধর দেশগুলিতে বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে একটা সমাধানসূত্রের প্রয়োজন রয়েছে৷ নতুন প্রক্রিয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে৷ বড় আকারে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়মিত উৎপাদন করতে পারলেই এটা সম্ভব৷