আঙুলের ছাপ বা মুখচ্ছবি শনাক্ত করে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে নিরাপত্তার প্রবণতা বাড়ছে৷ কিন্তু প্রতারকরা এই ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে পারছে৷ একদল গবেষক সেই দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
কম্পিউটরে নিরাপত্তার স্বার্থে পাসওয়ার্ডের বদলে কখনো মুখচ্ছবি দেখে ব্যক্তি চেনার প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়৷ কিন্তু কোনো অযাচিত ব্যক্তি মুখোশ পরে কিছু বায়োমেট্রিক সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে কম্পিউটারের নাগাল পেতে পারে৷
এক ইউরোপীয় প্রকল্পের আওতায় বায়োমেট্রিক সিস্টেমের দুর্বলতা শনাক্ত করে সেটিকে আরও নিরাপদ করে তোলার উদ্যোগ চলছে৷ বায়োমেট্রিক্স গবেষক সেবাস্টিয়াঁ মার্সেল বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম, যে সব বায়োমেট্রিক সিস্টেম সবচেয়ে কার্যকরভাবে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারে, সেগুলিই আবার সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হতে পারে৷ প্রত্যেক নতুন হামলার পর আমাদের পালটা পদক্ষেপ সৃষ্টি করতে হয়৷ বায়োমেট্রিক সিস্টেম কেন এত নাজুক, তা জানতে আরও সময় লাগবে৷’’
ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা
03:37
মুখচ্ছবি দেখে মানুষ চেনার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অবিকল মুখোশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে৷ এখনো পর্যন্ত হামলাকারীরা কোনো ব্যক্তির ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে সেই ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পেরেছে৷ কিন্তু এবার গবেষকরা সফটওয়্যাররের মাধ্যমে এমন হামলা প্রতিহত করতে পারছেন৷ গবেষক হিসেবে নেসলি এর্দোমুশ মনে করেন, ‘‘প্রথমত, চোখের পাতা ফেলার ছন্দ শনাক্ত করা হচ্ছে৷ সফটওয়্যার ব্যবহারকারীকে ঠিক সময়ে চোখের পাতা ফেলতে বলে৷ ফলে ক্যামেরার সামনে শুধু তার ছবি দেখালে চলে না৷ মোশন বা গতিবিধি শনাক্ত করেও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে৷ মুখের ছাপা ছবি ও আসল মুখের নড়াচড়া এক হতে পারে না৷''
গবেষকরা ত্বকের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের এক পদ্ধতি নিয়েও কাজ করছেন৷ ফলে বায়োমেট্রিক সফটওয়্যার আসল মুখচ্ছবি ও মুখোশের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারবে৷
আঙুলের ছাপ কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়৷ কিন্তু গবেষকরা তার দুর্বলতাগুলি তুলে ধরছেন৷ কালিয়ারি বিশ্ববিদ্যলয়ের জানলুকা মার্সিয়ালিস বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যে কৃত্রিম আঙুলের মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেমকে বোকা বানানো সম্ভব৷ সুপারমার্কেটেই তার উপকরণ কিনতে পাওয়া যায়৷''
কাচ বা অন্য কোথাও আঙুলের ছাপ নকল করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা কাজে লাগানো যায়৷ দ্রুত ও সস্তার এই প্রক্রিয়ায় চুইং গামের সাহায্যে মূল আঙুলের ছাপ নকল করা হয়৷ অনেক ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার আসল ও নকলের মধ্যে তফাত ধরতে পারে না৷ মার্সিয়ালিস বলেন, ‘‘আমরা সিস্টেমে রাখা এক আঙুলের ছাপ নকল করতে পারি৷ প্রায় নিখুঁতভাবে মেলাতে পারি৷''
প্রস্তাবিত সমাধানসূত্রের নাম ‘লাইভনেস অ্যাসেসমেন্ট'৷ ত্বকের বিন্যাস অত্যন্ত কৃত্রিম মনে হলে এই প্রযুক্তি আঙুলের ছাপ নাকচ করে দেবে৷ জানলুকা মার্সিয়ালিস বলেন, ‘‘আমাদের সিস্টেম দুটি বিষয় পরিমাপ করে৷ একদিকে বিন্যাসের মধ্যে মিল শনাক্ত করে৷ পর্দায় সবুজ রংয়ের অর্থ, দুই বিন্যাস মিলে যাচ্ছে৷ কিন্তু লাল রং ‘লাইভনেস অ্যাসেসমেন্ট' অত্যন্ত কম বলে ইঙ্গিত করছে৷ অর্থাৎ আঙুলের ছাপ ভালভাবে নকল করলেও কোনো প্রতারক নিরাপত্তা ভাঙতে পারবে না৷''
প্রতারকদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে থাকার চেষ্টা করতে বায়োমেট্রিক বিশেষজ্ঞদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে৷
ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে বায়োমেট্রিক: তদন্তকারীদের যত হাতিয়ার
ফিঙ্গারপ্রিন্টের যাত্রা শুরু আজ থেকে ১২৫ বছর আগে, ১৮৯১ সালে৷ সেই থেকে অপরাধীদের ধরতে তদন্তকারীরা আজকাল আরও নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন৷
ছবি: arfo - Fotolia.com
যখন থেকে আঙুলের ছাপ নেয়া শুরু
১৮৯১ সালে ক্রোয়েশিয়ায় জন্ম নেয়া আর্জেন্টিনার ক্রিমিনোলজিস্ট হুয়ান ভুসেটিচ প্রথমবারের মতো অপরাধীদের আঙুলের ছাপ নেয়া শুরু করেছিলেন৷ তখন থেকেই অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে প্রমাণ হিসেবে ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার শুরু হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রঙের ব্যবহার
একসময় আঙুলের ছাপ নেয়ার আগে আঙুলে রং লাগাতে হতো৷ এছাড়া হাতে ময়লা থাকলেও সমস্যা হতো৷ কিন্তু আজকাল স্ক্যানার আসার কারণে সেসব ঝামেলা পোহাতে হয় না৷ সংগ্রহ করা তথ্যগুলোও দ্রুত ডাটাবেসে জমা হয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Endig
কখনও এক হয় না
একজনের আঙুলের ছাপ কখনও আরেকজনের সঙ্গে মেলে না৷ এমনকি যমজ হলেও নয়৷ তাই তো ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এত গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: itestro/Fotolia.com
নির্বাচনের কাজে
ছবিতে নাইজেরিয়ায় একটি নির্বাচনের সময় কর্মকর্তাদের ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিতে দেখা যাচ্ছে৷ নির্বাচনি প্রতারণা ঠেকাতে এই ব্যবস্থা দারুণ কার্যকর৷
ছবি: APC Presidential Campaign Organisation
স্মার্টফোনে আঙুলের ছাপ
গোপনীয়তা বজায় রাখতে আজকাল অনেকে স্মার্টফোন লক করতে আঙুলের ছাপ ব্যবহার করছেন৷ ফলে ফোন হারিয়ে গেলেও অন্য কারও পক্ষে ফোনের তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa Themendienst
এটিএম-এও আঙুলের ছাপ
ছবিটি স্কটল্যান্ডের ডান্ডি শহরের একটি এটিএম বুথের৷ সেখানে টাকা তোলার সময় ক্রেতাদের বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হয়৷ চোরদের জন্য নিশ্চয় সুখবর নয় এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাসপোর্টেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট
২০০৫ সাল থেকে জার্মানি সহ অন্য কয়েকটি দেশের পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক তথ্যের অংশ হিসেবে আঙুলের ছাপ নেয়া হয়৷ সঙ্গে থাকে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ফটো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Grimm
এবার জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের কথা
ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালেক জেফ্রিস ১৯৮৪ সালে অনেকটা হঠাৎ করেই ডিএনএ-ফিঙ্গারপ্রিন্টিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন৷ তিনি দেখতে পান প্রতিটি মানুষের ডিএনএ-র একটি বৈশিষ্ট্য অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা৷ সেটিকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি ছবি তৈরি করেন, যা দেখতে বারকোডের মতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য বারকোড
জার্মান পুলিশ ১৯৯৮ সাল থেকে এমন বারকোড সংরক্ষণ করা শুরু করে৷ তখন থেকে এখন পর্যন্ত জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তা নিয়ে ১৮ হাজারেরও বেশি অপরাধের সুরাহা করা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরপরাধ ব্যক্তিদের সহায়
জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট যে শুধু অপরাধীদের শনাক্ত করতেই কাজে লাগে, তা নয়৷ নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাঁচাতেও সহায়তা করে এটি৷ যেমন কির্ক ব্লাডসওয়ার্থ বিনা অপরাধে নয় বছর জেলে ছিলেন৷ পরে জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের সহায়তায় তিনি নিরপরাধ বলে প্রমাণিত হন৷ এভাবে প্রায় ১০০ জনকে নিরপরাধ প্রমাণ করে ‘দ্য ইউএস ইনোসেন্স প্রজেক্ট’৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবার মুখের ব্যবহার
এতক্ষণ আঙুল আর ডিএনএ নিয়ে কথা হলো৷ এবার তদন্তকারীদের আরেকটি হাতিয়ারের কথা জানবো – ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার৷ এর মাধ্যমে বড় কোনো জনসমাবেশে উপস্থিত থাকা কোনো অপরাধীকেও খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বরও কাজে লাগাচ্ছেন তদন্তকারীরা
আঙুলের ছাপের মতো প্রতিটি মানুষের গলার স্বরও ভিন্ন৷ ফলে ‘ভয়েস রিকগনিশন সফটওয়্যার’ ব্যবহার করে তদন্তকারীরা আজকাল ফোনে কে হুমকি দিচ্ছে তাকে খুঁজে বের করছেন৷