বিএনপিকে চাপে রাখার চেষ্টা সরকারের!
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সর্বশেষ সভায় র্যাব ও পুলিশের সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে দেশের অভ্যন্তর থেকে ষড়যন্ত্র এবং রাজনৈতিক বলে অভিহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বিরুদ্ধে আরো ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংসদে দেয়া বক্তব্যের পর বুধবার তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ চৌধুরী বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া কয়েকটি চিঠি প্রকাশ করে দাবি করেন ,"বিএনপি মহাসচিব বাংলাদেশকে অর্থ সহায়তা না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।” আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের অভিযোগ তোলেন।
সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে যে সরকারের পক্ষ থেকে দুই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাদের ভাষায় যে ব্যক্তিরা "দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কাজে” জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চিঠিসহ নানা ধরনের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করছে এবং খতিয়ে দেখছে। আইনগত পরামর্শও নেয়া হচ্ছে। একই সাথে লবিষ্ট নিয়োগের অর্থের উৎসও খুঁজছে। বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ গিয়ে থাকলে কারা পাঠিয়েছে, কীভাবে পাঠিয়েছে তা বের করার চেষ্টা চলছে। অবৈধভাবে অর্থ পাঠানো হলে মানিলন্ডারিং-এর মামলা হতে পারে। বাংলাদেশের কিছু মানবাধিকার সংগঠনও দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে সভায় বলা হয়।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকেও যারা দেশে ও বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে "অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে” লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে অপপ্রচার রোধে সরকারে পক্ষ থেকে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের কথাও বলা হয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই জাতীয় কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন,"যে ব্যক্তি বা দল দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে, দেশের বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তার বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ বা তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এব্যাপারে সসরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। যে দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থের উৎস নিয়েও তদন্ত হচ্ছে । যদি পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ”
তিনি আরো জানান,"আমরা এটা রাজনৈতিকভাবেও মোকাবেলা করব। এখন করোনার কারণে আমরা কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আমরা দেশের মানুষের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করব। তাদের অপতৎপরতার চিত্র তুলে ধরব।”
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিঠি দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি চিঠি দুইটি দেন মার্কিন কংগ্রেসম্যানকে। একদিন আগে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "ওই চিঠিতে অর্থ সহায়তা বন্ধ নয়, আমি পর্যালোচনার কথা বলেছি।”
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,"এটা তো বিদেশি সহায়তার ব্যাপার না। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়। মানবাধিকার কোনো একটি দেশের বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক বিষয়। সেখানে বিএনপির দায়িত্ব হলো এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দেশে এবং দেশের বাইরে সোচ্চার হওয়া। বিএনপি সেই কাজটি করেছে এবং অব্যাহতভাবে করে যাবে। এটা বিএনপির নৈতিক দায়িত্ব।”
তার কথা,"তাদের (সরকার) বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠে এসেছে সেগুলো খণ্ডন করা তাদের দায়িত্ব। মামলা করা তাদের কাজ নয়। সেটা না করে তারা যে মামলার পথে এগোচ্ছে। তারা গুম , খুন, মামলার পথে যাচ্ছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে। এতে কোনো কাজ হবে না। তারা আরো নিম্ন পর্যায়ে চলে যাবে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"বিএনপি কোনো চাপের মুখে নাই। চাপের মুখে ফেলা যাবে না। দেশে বিদেশে তারাই (সরকার) চাপের মুখে আছে। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। তারা চাপের মুখে আছে বলেইতো অগণতান্ত্রিকভাবে সব কিছু করতে চাইছে।”