বিএনপিকে ঠেকাবে না ঘর সামলাবে আওয়ামী লীগ?
৫ নভেম্বর ২০২২সমস্যা হচ্ছে এইসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ঠেকাবে না ঘর সামলাবে? তাদের কৌশল কী?
আওয়ামী লীগের কৌশল হলো ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের আগে দলের সব পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করা। আর দলের যেসব ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গেও কাউন্সিল ও সম্মেলন করা। এর মাধ্যমে মাঠ দখলে নেয়া। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি ও সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে। টার্গেট হলো ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশের আগেই মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়া।
কুমিল্লায় হোঁচট:
এরই অংশ হিসেবে গত ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির সমাবেশের দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা সম্মেলন করা হয়। এটা ছিলো একই দিনে দুই দলের ঢাকা ও ঢাকার বাইরে শো-ডাউন। কিন্তু আওয়ামী লীগ হোঁচট খেয়েছে আজ( শনিবার, ৫ নভেম্বর)। বরিশালে বিএনপির সমাবেশের দিন কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের দুই গোষ্ঠী আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। শাসক দলের নিজেদের মধ্যে এই সংঘর্ষে কুমিল্লা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অন্যদিকে বরিশালে বাস ও লঞ্চ ধর্মঘট এবং ব্যাপক বাধারা মুখেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছিলো ঐক্যবদ্ধ। হামলার মুখেও তারা সমাবেশ সফল করেছে।
তৃণমূলে ক্ষোভ, কোন্দল:
শুধু কুমিল্লা নয় আওয়ামী লীগের ৭৪টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে সম্মেলন না হওয়া ৪২ জেলায়ও সম্মেলন হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও সম্মেলনের কাজ চলছে। কিন্তু এই সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আর এই কোন্দলের নানা দিক আছে। এমপি বনাম কমিটির নেতা, ত্যাগী বনাম হাইব্রিড এবং সুবিধাপ্রাপ্ত বনাম বঞ্চিত। তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা জানান," এখন আমরা নেতারা ডাকলেই মাঠে যাবনা। যা পাওয়ার তারা পেয়েছেন। আমরা কি পেয়েছি? এখন আমরা কেন মাঠে নামব। নেতারাই নামুক।”
ঢাকার কলাবাগানের ইউনিট পর্যায়ের একজন নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন," আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ১০ ডিসেম্বরের আগেই সক্রিয় হয়ে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে। আমরা চাইলে তা পারি। কিন্তু আমরা কেন নামব? নেতারা তো আমাদের কিছুই দেননি। তারা পকেট ভরেছেন। তারাই যা করার করুন।”
আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনির তার এলাকা বরিশালের ঝালকাঠি-রাজাপুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন," আমার এলাকার এমপি সাহেব হাইব্রিডদের সুযোগ সুবিধা দেন। সাধারণ নেতা-কর্মীরা তাই তার সঙ্গে নেই। তাকে বাদ দিয়েই আমরাকর্মসূচিকরছি।”
তার কথায়," দেশের বেশিরভাগ এলাকায়ই ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা ফলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারা নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং ও সংঘর্ষ করে শক্তি ক্ষয় করছে। বঞ্চিতদের নিয়ে এখনই কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ না করলে তাদের মাঠে নামানো কঠিন হবে।”
যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ:
আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়াদী উদ্যানে আওয়ামী যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুব মহাসমাবেশ করবে যুবলীগ । ওই সমাবেশে ১০ লাখ লোক জমায়েতের পরিকল্পনা আছে যুবলীগের। শেখ হাসিনা সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সেখানেও শেখ হাসিনা সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন। ওই সমাবেশেও ১০ লাখ লোকের সমাবেশের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ। যশোর ও কক্সবাজারেও সমাবেশ হবে। সেখানেও শেখ হাসিনা থাকবেন।
৩ ডিম্বের ঢাকায় ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন। যুব মহিলা লীগের সম্মেলন হবে ঢাকায় ৯ ডিসেম্বর। ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১৭ ডিসেম্বর হওয়ার কথা রয়েছে।
৯ নভেম্বর কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা, ১০ নভেম্বর লাকসাম উপজেলা, ১২ নভেম্বর নাঙ্গলকোট উপজেলা সম্মেলনে বড় জমায়েতের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতি লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেরও সম্মেলন হবে আওয়ামী লীগের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের আগে হবে। মোট কথা ১০ ডিসেম্বরের আগে এবং পরে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সম্মেলন এবং নানা কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকতে চায় আওয়ামী লীগ ও তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরই গ্রুপিং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের গ্রুপিং এখন চরমে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরই দুই গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা মিছিল করে। আর এই ছাত্রলীগকেই মাঠের সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারা এখন পদের জন্য কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে। তবে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামাল খান বলেন," হ্যাঁ, নানা সমস্যা আমাদের মধ্যে আছে। বিভিন্ন এলাকায় কমিটি নিয়ে বিভক্তি আছে। তবে আশা করি সম্মেলনের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি হবে। আমরা বিএনপির সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজপথে থাকব।”
এই সার্বিক কোন্দল আর শক্তি ক্ষয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন," আওয়ামী লীগ একটি বিশাল সংগঠন। তাই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। সেটা নিয়ে ঝামেলাও হয়। এটাকে বড় করে দেখার কিছু নাই। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।”
তবে তিনি তৃণমূলে ক্ষোভের কথা স্বীকার করে বলেন," তাদের নানা অভিযোগ আছে নেতাদের বিরুদ্ধে। তারা দলের হাইব্রিডদের নিয়ে অভিযোগ করেন। তাদের ক্ষোভ দূর করতে কাজ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলেছেন।” তিনি আরো জানান," সব পর্যায়ের নেতাদের তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং তাদের সম্মান গুরত্ব দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।”
‘নকল' ধর্মঘটের উপর নতুন মামলার নতুন চাপ:
বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ শুরুর পরই সমাবেশের আগে পরে পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে বিএনপিকে চাপে রাখা হয়েছে। এই ধর্মঘটকে আরো তীব্র করা হচ্ছে। বরিশালে বাসের সঙ্গে লঞ্চও বন্ধ করে দেয়া হয়। এটা অব্যাহত ধাকার পাশাপাশি বিএনপিকে নতুন মামলার চাপে ফেলা হবে। বিএনপি চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে। এ পর্যন্ত তারা পাঁচ বিভাগে সমাবেশ করেছে। ওইসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। খুলনায় ৭২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সারা দেশে প্রায় পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এইসব নতুন মামলা ও পুরনো মামলা ব্যবহার করা হবে বিএনপিকে চাপে রাখতে।
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন দাবি করেন," চাপের দরকার হবে না। ডিসেম্বর মাসে এমনিতেই বিএনপি ঘরে উঠে যাবে। রমজান মাসে শয়তানকে যেমন বেঁধে রাখা হয়, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মুখ লুকিয়ে ঘরে উঠে যাবে। আমরা শেখ হাসিনার নির্দেশে মাঠে আছি।”