কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, একের পর এক ধর্ষণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন তিনি৷ আর গতকাল বললেন গণপিটুনি বিএনপির নিখুঁত কাজ৷
বিজ্ঞাপন
১৩ বছর ধরে যে দল ক্ষমতার বাইরে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও যে দলকে বলছেন শক্তিহীন, তারা নিশ্চয়ই আধ্যাত্মিক শক্তির বলীয়ান হয়ে এসব কাজ করছেন৷
বিএনপির আধ্যাত্মিক শক্তির আরও প্রমাণ পাই, যখন তাদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ডেঙ্গু আমদানি করেছেন৷ দুনিয়ার তাবৎ বড় বড় কীটতত্ত্ববিদেরা ডেঙ্গুর উৎস ও আমদানি রপ্তানির কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন৷ অলৌকিক শক্তির বলেই কেবল বিএনপি একথা বলছে৷
আইনমন্ত্রীকে যতদূর জানি, তিনি কোনো একটা বিষয়ে মতামত দিলে ভেবে চিন্তেই দেন৷ তাই তিনি যে ধর্ষণ আর গণপিটুনির জন্য বিএনপিকে দায়ী করছেন তার পেছনে কোনো যুক্তি থাকলেও থাকতে পারে৷
আপাতত যে যুক্তি আমি পাচ্ছি তা হলো, দেশের মানুষের এই অস্থিরতা আর আস্থাহীনতা তিনি আর নিতে পারছেন না, এ অবস্থা থেকে আশু উত্তরণের কোনো পথও দেখতে পাচ্ছেন না, তাই মরিয়া হয়ে কারো না কারো উপর দায় চাপাতে চাইছেন৷
রিজভী সাহেবের কাছে জানতে চাইব, দেশের সব সংকটের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করা গেলে সব ভালো কাজের কৃতিত্বও তাদের ঝুলিতেই দেওয়া উচিত কিনা? ডেঙ্গু আমদানি করে আওয়ামী লীগের কী লাভ? এডিস মশা কি দল দেখে কামড়ায়?
সবশেষে বলি আমাদের নিজেদের দিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া দরকার৷ দরকার সবাই খারাপ আর শুধু আমি ভাল, এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার৷
২০১৮ সালের আলোচিত উক্তি
বছর জুড়েই বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ক্রীড়াঙ্গনসহ নানা ক্ষেত্রে ঘটেছে অনেক ঘটনা৷ নানা ঘটনায় নানা জনের মন্তব্য নিয়ে হয়েছে আলোচনা৷ সারা বছরের তেমন কিছু মন্তব্য নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/Md M. Hasan
‘খামোশ’
বছরের আলোচিত মন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে গণফোরাম এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেনের ‘খামোশ’ হুঙ্কারটি৷ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে প্রশ্নকর্তাকে থামাতে গিয়ে তিনি বলে ওঠেন ‘খামোশ’৷ এ আচরণের জন্য পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: bdnews24.com
‘প্যারোলে কবরে যেতে হবে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘‘সময় আসছে আপনাদের কবরে যেতে হবে প্যারোলে৷’’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন৷ বিএনপির এ নেতা প্রায়ই বিতর্কের জন্ম দেন৷ এর আগে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উনুষ্ঠানে তিনি একাত্তরে দেশ না ছেড়ে শহিদ বুদ্ধাজীবীরা ‘নির্বোধের মতো মরেছে’ বলে মন্তব্য করে নিন্দিত হয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
‘চুমু খাবে?’
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে সময় এক গুজবকে কেন্দ্র করে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চড়াও হলে পাল্টা হামলার শিকার হয়৷ পাল্টা এ হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখন আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে গোলাগুলি করতে করতে আসবেন, তাদেরকে কি বল প্রয়োগ করবে না? চুমু খাবে?”
ছবি: bdnews24.com
‘আর হাসব না’
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হলে শাজাহান খান ওই দুর্ঘটনার ব্যাপারে সাংবাদিকদের হাসিমুখে প্রতিক্রিয়া দেয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন৷ এর জের ধরে দেশব্যাপী শুরু হয় আন্দোলন৷ পরে এক সংবাদ সম্মলনে তিনি বলেন, ‘‘আমার ভুল হচ্ছে আমি হাসি৷ এখন আমার হাসা যদি ভুল হয়, তাহলে আমি আর হাসব না৷’’
ছবি: bdnews24.com
প্রশ্নপত্র ফাঁস ‘উন্নয়নের সমস্যা’
প্রশ্নপত্র নিয়ে পুরো বছর জুড়েই চলছিল আলোচনা৷ কেউ কেউ দাবি করছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগ৷ কিন্তু সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এটি উন্নয়নের সমস্যা, প্রযুক্তির সমস্যা৷’’
ছবি: bdnews24.com
‘প্রতিপক্ষের কেউ যেন আঘাত না পায়’
ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত সবাইকে চমকে দিয়েছিল৷ সেই চমক তিনি ধরে রেখেছেন৷নির্বাচনি প্রচারনায় নেমেও বজায় রেখেছেন স্বাতন্ত্র্য৷ দেশব্যাপী যখন নির্বাচন ঘিরে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে, তখন নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাশরাফি এক জনসভায় বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রতিপক্ষ যাঁরা আছেন, তাঁদেরকে যেন কোনোভাবেই মানসিক বা শারীরিকভাবে আঘাত না করা হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
‘এই লেন হাইকোর্টের কাগজ’
উচ্চ আদালতে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বগুড়া-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম আদেশের কপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘‘এই লেন (নেন) হাইকোর্টের কাগজ, আপনারা তো দিলেন না; খুব ভোগান্তি দিলেন ভাই আপনেরা (আপনারা)৷’’ পরে এর প্রতিক্রিয়ায় ইসি সচিব বলেন, ‘‘হিরো আলম পর্যন্ত আমাদের হাইকোর্ট দেখায়৷’’
ছবি: YouTube/Little Big Films Bangladesh
‘যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তবে তুমিই বাংলাদেশ’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল শিক্ষার্থীরা৷ বিভিন্ন দাবিতে পোস্টার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেমে এসেছিল তারা৷ এর মধ্যে একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ; যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ৷’’