নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পরদিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান দলের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনকালীন সরকার থেকে অবিলম্বে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন৷ বিএনপি প্রধানমন্ত্রীকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর প্রায় ২৬ ঘণ্টা অজ্ঞাতস্থানে ছিলেন এইচ এম এরশাদ৷ বুধবার বিকেলে বারিধারার বাসায় ফিরে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এরপর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, তিনি মন্ত্রিসভা থেকে দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তিনি বলেন তাঁর সাফ কথা – সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না৷
এরশাদের এই নির্দেশের পর মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন কিনা তা জানা যায়নি৷ তবে প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু মঙ্গলবার বলেছিলেন তাঁরা এরশাদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন৷ নির্দেশ পেলেই তাঁরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন৷ পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের ওপর তাঁদের আস্থা আছে৷ তিনি যা করবেন বুঝেশুনেই করবেন, দলের ভালোর জন্যই করবেন৷
গত ১৮ নভেম্বর নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির নেতারা যোগ দেন৷ তাঁদের মধ্যে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রওশন এরশাদ, রহুল আমীন হাওলাদার এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদ৷ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সালমা ইসলাম ও মুজিবুল হক চুন্নু৷ এছাড়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন৷ এরশাদ মঙ্গলবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর চারজন মন্ত্রী বুধবার অফিস করেননি৷
প্রতিহিংসা আর ধ্বংসের নির্মম রাজনীতি আর কতকাল
বাংলাদেশে হরতাল, অবরোধ নতুন কিছু নয়৷ বড় দুটো দলতো বটেই, অনেক ছোট দলও অতীতে এমন কর্মসূচি দিয়েছে৷ জনদুর্ভোগ বেড়েছে, সম্পদ বিনষ্ট এবং প্রাণহানিও হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক হরতাল, অবরোধগুলো দুঃস্বপ্নকেও হার মানিয়েছে৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
হামলার শিকার সাংবাদিক
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছে৷ এখনো সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি৷ তবে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সাংবাদিকের আহত হওয়ার ঘটনা চলমান আন্দোলনেই প্রথম ঘটছে৷ এ বছর হেফাজত-এ-ইসলামের সমাবেশে প্রহৃত হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন৷ গত দুই সপ্তাহে হরতাল এবং অবরোধের সময় ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক৷ ছবিতে নাদিয়া শারমিনের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতেচ্ছেন নারী সংগঠন কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যানবাহনে আগুন, রেললাইন উপড়ানো
হরতাল-অবরোধ মানেই রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ৷ কর্মসূচির এ লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হলে গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন লাগানো বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই স্বাভাবিক ঘটনা৷ তবে গত এক বছরে জ্বালাও-পোড়াওয়ের এই ধ্বংসলীলা অন্য মাত্রা পেয়েছে৷ হরতালের আগের রাতেই শুরু হয়ে যায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ৷ তাই বিরোধী দল ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন শুরুর আগেই জনমনে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক৷ ছবিতে মোটর সাইকেলে পেট্রোল ঢালছেন জামায়াত কর্মীরা৷
ছবি: Reuters/Andrew Biraj
শিশুরাও অসহায়, নিরাপত্তাহীন
যানবাহনে ঘুমন্ত চালক, হেল্পার বা চালকের সন্তানের আগুনে ঝলসে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে৷ ঢাকা শহর দেখতে এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে কাভার্ডভ্যান চালকের সন্তান মুনির৷ এমন হতভাগ্যদের তালিকায় আরো নাম যোগ হয়েছে৷ স্কুলে, রাস্তায়, এমনকি বাড়িতেও শিশুদের জীবন সংকটাপন্ন দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ৷ছবিতে সর্বশেষ অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে স্লোগানরত জামায়াত কর্মীরা৷
ছবি: Reuters/Andrew Biraj
নিরাপত্তা কর্মীদেরও নিরাপত্তার অভাব
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের কারণে রায় ঘোষণার পর নেতাদের শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার এবং মুক্তির দাবিতে জামায়াত-ই-ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির পুলিশের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে৷ হামলায় নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী৷ রাজশাহীতে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যের মাথা ইটের আঘাতে থেতলে দেয়া হয়৷ বিরোধী দলের সর্বশেষ অবরোধ কর্মসূচিতেও কর্মরত পুলিশ ও বিজিবি সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন দায়িত্বরত অবস্থায়৷
ছবি: Getty Images/Afp/Munir uz ZAMAN
সংখ্যালঘুদের বাড়ি-মন্দিরে আগুন
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে অনেক সময়৷ তবে শীর্ষ নেতাদের শাস্তি ঘোষণার পর জামায়াত ও শিবিরের কর্মীরা সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর-মন্দির-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা চালায়৷ ছবিতে নিজের শিশুসন্তান কোলে সাতক্ষিরার অমিয় দাশ৷ ঘরবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সময় শিশুটিকে আগুনে ছুড়ে মারতে চেয়েছিল শিবির কর্মীরা৷
ছবি: Shayantani Twisha
কবে হবে অবসান!
প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের শরিক কয়েকটি দল নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছে৷ ফলে রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা বেড়েছে৷ ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন৷ তারপর থেকে বিরোধী দলের হরতাল, অবরোধ চলছে প্রায় বিরামহীনভাবে৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গণভবনে জরুরি বৈঠকে বসেছেন৷ এর আগে মঙ্গলবার রাতে শেখ হাসিনা দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সেই বৈঠকে, পরিস্থিতি যাই হোক ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মত দিয়েছেন নেতারা৷
মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী সেনা প্রধান ও পুলিশ প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেন৷ প্রধানমন্ত্রী বুধবার তাঁর কার্যালয়ে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় দেশের যে-কোনো পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন৷
এদিকে বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়েছেন৷ অজ্ঞাতস্থান থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে আরো কঠোর আন্দোলন শুরু হবে৷ সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন সময় থাকতে সরকারের উচিত হবে পদত্যাগ করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নেয়া৷ নয়তো যে-কোনো পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি৷