চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরকেই সুবিধাজনক মনে করছে৷ নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির পরিকল্পনা কী?
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতারা অবশ্য মনে করেন যেকোনো সময় একটা কিছু ঘটে যেতে পারে, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে৷ ডিসেম্বরের মধ্যেই কঠোর কর্মসূচি দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করে নেয়ার ব্যাপারে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷
বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি দিচ্ছে৷ অন্য বেশ কয়েকটি দল ও জোটও এসেছে যুগপৎ আন্দোলনের ছাতার নিচে৷ আপাতত সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিই দিচ্ছে দলটি৷ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বারবার দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয় নি৷ বিএনপি মাহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হরতাল-অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচিও দলটির পরিকল্পনায় রয়েছে৷ কিন্তু সেটা কবে?
আন্দোলনের জন্য কতটা সময় পাচ্ছে বিএনপি?
যদি ডিসেম্বরের নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপির হাতে আন্দোলনের সময় আছে আর মাত্র চার-পাঁচ মাস৷ মার্চ মাসেই রোজা শুরু হচ্ছে৷ রোজার এক মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত বড় কোনো কর্মসূচি দেয় না৷ রেজার পরে ঈদুল ফিতর৷ ঈদুল ফিতরের পরের অন্তত ১৫ দিন বলতে গেলে ঢাকা শহর বেশ খালিই থাকে৷ তারপর থেকে এগিয়ে আসতে থাকে ঈদুল আজহা৷ সেটাও দেশের মানুষকে প্রায় একমাস ব্যস্ত রাখে৷ জুন-জুলাইয়ে থাকবে বর্ষাকালের প্রভাব৷ এই মাসগুলোতে রাজনৈতিক দলের বাইরে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়াটা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে৷ নির্বাচনের তফসিলও এই সময়ের মধ্যেই ঘোষণা করতে হয়৷ বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি৷ সেই হিসাবে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট হতে হবে৷ অর্থাৎ, নির্বাচনের সময় বাকি আছে কম-বেশি ১০ মাস৷ তার মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কারণে তিন-চার মাস বড় কোনো আন্দোলনের জন্য উপযোগী মনে করে না রাজনৈতিক দলগুলো৷ নির্বাচনের তফসিল যদি ২১ দিন হাতে সময় রেখেও করা হয় তাহলে সেখানেই এক মাস চলে যাবে৷
এদিকে, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে মিলিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগও৷ তারা ঘোষণা করেছে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে৷ কৌশল হিসেবে চলতি মার্চ মাস থেকেই তারা নির্বাচনের কাজ শুরুর জন্য তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছে৷ প্রার্থীও চূড়ান্ত করা শুরু হয়েছে৷ যাদের নিয়ে কোনো সমস্যা নেই তাদের এরইমধ্যে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে৷ ঢাকার নেতারা এলাকামুখী হওয়া শুরু করেছেন৷ যার রেড লাইনে আছেন তারাও ইমেজ পুনরুদ্ধার করে মনোনয়ন বহাল রাখতে যার যার নির্বাচনি এলাকায় তৎপর হওয়া শুরু করেছেন৷ সরকার ও আওয়ামী লীগের একটি কৌশল হচ্ছে এবার আগেভাগেই সারাদেশে নির্বাচনের হাওয়া বইয়ে দেয়া৷
চার-পাঁচ মাসের আন্দোলনে সরকার ভয় পেয়েছে: শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন কীভাবে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নেবে বিএনপি?
রোজা শুরুর আগে বিএনপির যে আন্দোলন কর্মসূচি আছে তারমধ্যে ১০ দফা দাবিতে আগামী ১৮ মার্চ সারাদেশে মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি৷ গত শনিবার সকালে নয়া পল্টনে এক ঘণ্টার মানববন্ধন শেষে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ তবে ধারাবাহিক কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি রোজার কারণে৷
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘আমরা এখন আসলে জনমত তৈরিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি৷ কিন্তু যেকোনো সময় খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷ আমরা হরতাল অবরোধের মত কর্মসূচিও দেব৷ আমাদের আন্দোলন কতটা কঠোর হবে তা নির্ভর করছে সরকারের মনোভাবের ওপর৷ কখনো মনে হয় সরকার জনগণের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করবে আবার কখনো মনে হয় সরকার ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করতে চায়৷ সরকার একটা দোদুল্যমান অবস্থায় আছে৷ তবে গত চার-পাঁচ মাসের আন্দোলনে সরকার ভয় পেয়েছে৷ এর আগে তারা বলতো বিএনপির কোমর ভেঙে গেছে৷''
তার কথা, ‘‘রোজার মাসে মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগী করেন৷ কিন্তু তাই বলে তারা এই মাসে মানুষের কথা ভাবেন না তা নয়৷ রোজার মাসেও আন্দোলন হতে পারে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময়ও রোজা এসেছে, ঈদ এসেছে তাই বলে মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়নি৷''
তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তখনকার আওয়ামী লীগ মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলো৷ কিন্তু ২৫ মার্চের দিবাগত রাতের ঘটনায় পরিস্থিতি কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যায়৷ তাই এখনকার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে বলা যায় না৷ যেকেনো সময় ভিন্ন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷''
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমি এককভাবে কোনো মন্তব্য করব না৷ এ নিয়ে আমাদের নানা ধরনের বৈঠক হচ্ছে৷''
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘এই সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে যদি তাদের অধীনে নির্বাচন করতে চায় বিএনপি কোনোভাবেই হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না৷ আমাদের ১০ দফা দাবির এক নাম্বার দাবি হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আমরা আমাদের দাবি ডিসেম্বরের আগেই আদায় করবো৷ সেটা হলে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘দাবি আদায়ে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেবো৷ যে সময় আছে তাতে আমাদের আন্দোলন সফল করার জন্য যথেষ্ট৷ আর সরকার জোর করে কিছু করতে গেলে তার পরিণতি কী হবে বলা যায় না৷''
২০২২ সালের ছবিঘর
এক নজরে সব নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি এম ইদ্রিস৷ বর্তমানে কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের নির্বাচন কমিশনগুলো সম্পর্কে জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Asif Mahmud Ove
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি এম ইদ্রিস৷ ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি ৷ ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে এই কমিশন৷ সে সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। নির্বাচনে ২৯৩ আসন জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। জাসদ ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ একটি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাঁচটি আসন পায়।
ছবি: AP
নুরুল ইসলাম কমিশন
বিচারপতি একেএম নুরুল ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সিইসি৷ ১৯৭৭ সালের ৮ জুলাই যখন দায়িত্ব নেন, তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ প্রায় আট বছর দায়িত্ব পালনের পর অব্যাহতি নেন ১৯৮৫ সালের ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি৷ ৷ ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন হয় তার তত্ত্বাবধানে। বিএনপি পায় ২০৭ আসন, আবদুল মালেক উকিলের আওয়ামী লীগ ৩৯ আসন৷
ছবি: imago stock&people
তিন রাষ্ট্রপতির কমিশন
পরপর দুই সামরিক শাসকের অধীনে সিইসির দায়িত্ব পালন করেছেন নুরুল ইসলাম৷ ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমান নিহত হলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ১৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ‘সামরিক অভ্যুত্থানে’ ক্ষমতায় আসেন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। পরবর্তীতে এরশাদের সরকারে আইনমন্ত্রী ও পরে উপ রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Rahman
মসউদ কমিশন
বিচারপতি চৌধুরী এটিএম মসউদ দায়িত্ব নেন ১৯৮৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি৷ তিনি পূর্ণ পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করেন ১৯৯০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি৷ এরশাদের আমলে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুটো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এই কমিশনের অধীনে৷ তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আট দলীয় জোট গেলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোট তা বর্জন করে। চতুর্থ জাতীয় নির্বাচন দুই জোটই বর্জন করে৷
ছবি: DW
সুলতান কমিশন
বিচারপতি সুলতান হোসেন খান ১৯৯০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সিইসি’র দায়িত্ব নেন৷ তবে মাত্র ১০ মাস দায়িত্বে থেকে কোনো জাতীয় নির্বাচন না করেই ২৪ ডিসেম্বর সরে যেতে বাধ্য হন এরশাদের নিয়োগ পাওয়া এই সিইসি৷ গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হলে প্রধান দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্যে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ৷ এরপর তিনি ইসি পুনর্গঠন করেন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
রউফ কমিশন
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথম তিন সদস্যের ইসি পায় বাংলাদেশ। বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ সিইসি হিসেবে নিযু্ক্ত হন৷ ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করে তার কমিশন৷ তিনি ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন৷ রউফ কমিশন নির্বাচনি আইনে ব্যাপক সংস্কার আনে, জারি করা হয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ। ১৯৯৪ সালে মাগুরা উপ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত হন সিইসি রউফ।
ছবি: AP
সাদেক কমিশন
বিচারপতি একেএম সাদেক সিইসি পদে নিযুক্ত হন ১৯৯৫ সালের ২৭ এপ্রিল৷ ১৯৯৬ সালে এই কমিশনের অধীনেই হয় বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো ভোট বর্জন করে। বিএনপি পায় ২৭৮ আসন৷ দেড় মাস মেয়াদী সংসদের একমাত্র অধিবেশনে ত্রয়োদশ সংশোধনে সংবিধানে যুক্ত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা৷ এই ইসিই নির্বাচনি আচরণবিধি চালু করে৷
ছবি: AP
হেনা কমিশন
১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিরতার মধ্যে সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবু হেনা ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল সিইসি’র দায়িত্ব নেন৷ এই প্রথম কোনো আমলা এই পদে নিয়োগ পান৷ তার অধীনে ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯৯ সালে টাঙ্গাইল (সখিপুর-বাসাইল) উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির জন্য সমালোচিত হয় তার কমিশন৷ নির্বাচনের গেজেট না করেই ২০০০ সালের ৮ মে দায়িত্ব ছাড়েন আবু হেনা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সাঈদ কমিশন
রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের মেয়াদপূর্তির পর আওয়ামী লীগ সরকার ওই দায়িত্বে আনে একানব্বইয়ের নির্বচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে থাকা শাহাবুদ্দিন আহমেদকে। আবু হেনা সরে যাওয়ার পর সিইসি হন সাবেক আমলা এম এ সাঈদ৷ বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাঈদ কমিশনের অধীনেই ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন হয়।
ছবি: Mustafiz Mamun
আজিজ কমিশন
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত কমিশনগুলোর একটি আজিজ কমিশন৷ বিচারপতি এমএ আজিজ ২০০৫ সালের ২২ মে সিইসি’র দায়িত্ব নেন৷ ব্যাপক রাজনৈতিক টানাপড়েনের সময় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন৷ পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদ তফসিল বাতিল করেন৷ ২১ জানুয়ারি কোনো জাতীয় নির্বাচন আয়োজন না করেই পদত্যাগ করেন এম এ আজিজ৷
ছবি: DW
শামসুল হুদা কমিশন
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমএ আজিজের উত্তরসূরী হন এটিএম শামসুল হুদা৷ তার কমিশন ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করে৷ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয় ওই কমিশনের সময়েই। সংলাপ করে নির্বাচনি আইন সংস্কার করা হয়। চালু হয় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম ও ইভিএম। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০, বিএনপি ৩০ ও জাতীয় পার্টি ২৭ আসন পায়।
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
রকিবুদ্দিন কমিশন
ইসি পুনর্গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর সার্চ কমিটি গঠন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ২০১২ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন সাবেক আমলা কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ৷ সংসদে বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা৷ ক্ষমতাসীন দলের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়৷ বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বর্জন করা নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW
নুরুল হুদা কমিশন
এবারও সংলাপ আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবুল হামিদ৷ সিইসি করা হয় সাবেক আমলা কে এম নুরুল হুদাকে৷ দ্বাদশ ইসির যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের নতুন কার্যালয় নির্বাচন ভবনে। তার অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ পাওয়ায় যায়৷ বর্তমান কমিশনের মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।