খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে মাঠের আন্দোলনে আছে বিএনপি৷ আর স্বাধীনতার ৫০ বছরের নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের৷
বিজ্ঞাপন
বিএনপি সরকার পতনের কথাও বলছে৷ আওয়ামী লীগ অবশ্য তা আমলে নিচ্ছে না৷ তাহলে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে৷
৩০ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে গণ অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি৷ আর সেই কর্মসূচির পরই আরো ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা৷ ওই দিনের পর থেকে বিএনপি এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করছে৷ মঙ্গলবার দেশের সব বিভাগের সমাবেশে বিএনপি নেতাদের মুখে সরকারের পতন বিষয়টিই বেশি উচ্চারিত হয়েছে৷ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় বলেছেন,"সরকারের পতন শুরু হয়ে গেছে৷” আর কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, "খালেদা জিয়ার চিকিৎসার চেয়ে এখন সরকার পতনের আন্দোলন জরুরি৷”
বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা মনে করেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সহানুভূতি আছে৷ সাধারণ মানুষ মনে করে যে খালেদার বিদেশে চিকিৎসা সরকারই আটকে রেখেছে৷ বিএনপি চাইছে এই সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে ৷ তাই তারা এখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি দেবে৷ তবে সরকারের মনোভাবের দিকেও তারা খেয়াল রাখছে যাতে এই কর্মসূচিগুলো সহিংস না হয়ে ওঠে৷ নেতা-কর্মীদের বার বার এই বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে৷ তারপরও পুলিশের সাথে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়েছে৷
খায়রুল কবির খোকন
বিএনপির নীতি নির্ধারকেরা এখনো অবশ্য সভা-সমাবেশ, অনশনের বাইরে আরো কঠোর কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছেন না৷ হরতাল দেয়া হবে কী না জানতে চাইলে এক নেতা জানান, ওই পর্যায়ে এখনো চিন্তা করা হচ্ছে না৷ কারণ এমনিতেই নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা৷ নতুন করে আরো মামলা হলে তা সামলানো কঠিন হবে৷
বিএনপি এখন বাইরে কিছুটা গরম আর ভিতরে নরম কৌশলেই আছে৷ তারা সরকারকে নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হলে এটা নিয়ে তারা কোনো রাজনীতি করবে না৷ তবে এই কৌশলে মাঠের দখল নিতে পারলে ভবিষ্যতের কর্মসূচি অন্যরকমও হতে পারে৷
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন,"সরকার পতনের আন্দোলন তো আমরা আগে থেকেই করছি৷ আর এখন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলনও একই সঙ্গে চলছে৷ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলকে আমরা এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি৷ আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই৷ এই কর্মসূচি শেষে আমরা আরো কর্মসূচি দেব৷ কিন্তু সরকার যদি আমাদের পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে যায় তাহলে তো সংঘাত অনিবার্য৷ সেটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের জন্য আমরা সেটা চাই না৷”
তার মতে,"খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠালে তো সরকারের পতন হয়ে যাবে না৷ সরকারের কিসের এত ভয়? তাকে সরকার চাইলে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ দিতে পারে৷ কিন্তু সেটা না দিয়ে রাজনীতি করছে৷''
মাহবুব উল আলম হানিফ
অন্যদিকে সরকার আসলে বিএনপিকে সীমিত আন্দোলনের সুযোগ দিচ্ছে৷ প্রশাসন বিএনপির কর্মসূচিগুলোর সময় এবং এলাকাও বেধে দিচ্ছে৷ শর্ত মেনেই বিএনপিকে কর্মসূচি শেষ করতে হচ্ছে৷ আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চায় না ৷ তারা এটা নিয়ে রাজনীতি করছে৷ তারা বিএনপিকে তেমন আমলে না নিলেও সামাজিক যেকোনো আন্দোলন নিয়ে সতর্ক আছে৷ বিশেষ করে ছাত্রদের চলমান অর্ধেক ভাড়া ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে পর্যবেক্ষণ করছে৷ এর আগে কোটা সংস্কার ও নিরপদ সড়ক আন্দোলনের মত এই আন্দোলন যাতে প্রবল হতে না পারে সেদিকে নজর রাখছে৷ সরকার মনে করে, আন্দোলন বড় হয়ে গেলে সেটা বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ কাজে লাগাতে পারে৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সেই চিন্তা স্পষ্টও করেছেন৷ তিনি দাবি করেছেন,"রামপুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহতের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটা বিএনপি জাময়াতের অপকীর্তি কী না খতিয়ে দেখতে হবে৷” আর তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, "একটি মহল ছাত্রদের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করছে৷” প্রধানমন্ত্রী বলেছেন," দুর্ঘটনা ঘটলে ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়৷”
খালেদা জিয়ার চার বছর
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হন খালেদা জিয়া৷ এরপর থেকে তিনি কারাগার, হাসপাতাল ও বাসায় আছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মামলার রায়
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত৷ একই মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ পরে আপিলে খালেদার কারাদণ্ডের মেয়াদও বেড়ে ১০ বছর হয়৷ সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার রমনা থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ ছবিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
অভিযোগপত্রে যা বলা হয়েছিল
১৯৯১ সালে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এতিমদের সহায়তায় গঠিত ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে’ চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা জমা হয়েছিল৷ কিন্তু ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঐ অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় দেয়া হয়নি৷ পরে ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ গঠন করে সেখানে দুই কোটির বেশি টাকা ট্রান্সফার করে সেটা আসামিরা আত্মসাত করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
রায় ঘোষণার দিনটি যেমন ছিল
পুরো রাজধানীতে পুলিশের সতর্ক পাহারা ছিল৷ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, হাইকোর্ট ও বকশিবাজারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল৷ দুপুর ১২টায় গুলশানের বাসা থেকে বকশিবাজারের আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন খালেদা জিয়া৷ পথে কাকরাইল ও চাঁনখারপুলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷ এই সময় বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আদালত থেকে কারাগারে
রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০১৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ঐ কারাগারটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করেছিল সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কারাগার থেকে হাসপাতালে
চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল৷ সেখানে টানা এক মাস দুই দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
বিএসএমএমইউতে যেতে আপত্তি
২০১৯ সালের ১০ মার্চ খালেদার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ প্রস্তুত করা হয়েছিল৷ কিন্তু তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি৷ খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANN/The Daily Star
অবশেষে আবারও বিএসএমএমইউ
কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন৷
ছবি: Bdnews24.com
আবারও কারাদণ্ডের রায়
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার জনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় মামলায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Jahan
অবশেষে মুক্তি
শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে ২৫ মাস কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া৷ একদিন আগে খালেদাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ শর্ত হলো এই সময়ে খালেদাকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে৷ তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না৷
ছবি: bdnews24
নির্বাহী আদেশে মুক্তি
খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়েছেন বলে সেই সময় জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷
ছবি: Asif Mahmud Ove
চার দফা সময় বৃদ্ধি
২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়েছিল৷ এরপর চার দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ ছবিতে খালেদা জিয়ার বাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
এটা এখন আইনের ব্যাপার: প্রধানমন্ত্রী
১৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি এটাই কি বেশি নয়?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি৷ ... এখানে আমার কিছু করার নাই৷ আমার যেটা করার, আমি করেছি৷ এটা এখন আইনের ব্যাপার৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
স্মারকলিপি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে স্মারকলিপি দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা৷
ছবি: bdnews24
তিনবার হাসপাতালে
২০২০ সালের মার্চে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া৷ এর মধ্যে গত এপ্রিলে তিনি করোনা ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
খালেদা কী অসুখে ভুগছেন
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘খালেদা জিয়া এখন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে যেমন ভুগছেন তেমনি ক্রনিক লিভার ডিজিজেও ভুগছেন৷ এখন তার লিভারের সমস্যা বেশি হচ্ছে৷ যার কারণে জিআই (পরিপাকতন্ত্র) ব্লিডিং বেশি হচ্ছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস আছে৷ আর রাইট হার্ট ফেইলিউরসহ আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে৷’’
ছবি: Bdnews24.com
স্লো পয়জনিং?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘...একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে দুই বছরের বেশি সময় আটক রাখা হয়েছিল৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি৷ এখন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সেই সময়ে খালেদা জিয়াকে কোনো স্লো পয়জনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না, আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই৷’’
ছবি: Asif Mahmud Ove
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলন
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ এরপর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘আমি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছি৷ যা দেখেছি, সাম্প্রতিককালে এত মর্মান্তিক ঘটনা আমি দেখিনি৷ খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় দিন, কয় মিনিট বাজবেন, তা আমি বলতে পারব না৷ এটা বলতে পারি, তিনি ক্রান্তিকালে আছেন, তাকে হত্যা করা হচ্ছে৷’’
ছবি: DW/S. Hossain
17 ছবি1 | 17
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে বোঝা গেছে যে তারা মনে করেন, দেশে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষমতা বিএনপির নাই৷ তাদের নেতা-কর্মীরা নিজেদের নিরাপদে রেখেই নানা কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন৷ সহিংস হওয়ার মত সাহস তাদের নেই৷ বিরোধী দলগুলোকে রাজনীতির সুযোগ দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরো কিছু দেশের চাপও আছে ৷ তাই সরকার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আপাতত বাধা দেবে না৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন,"আওয়ামী লীগ কোনো আন্দোলনের হুমকিতে ভয় পায় না৷ দেশের সব মানুষের সব দলের বাক স্বাধীনতা আছে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার আছে৷ কিন্তু কেউ যদি আন্দোলনের নামে সহিংসতা করে৷ জ্বালাও পোড়াও করে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে৷ আমরা আওয়ামী লীগ তাদের সহায়তা করব৷”
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"বিএনপির নেতৃত্ব এমন পর্যায়ে নেমে গেছে যে তারা এখন তাদের নেত্রীর মৃত্যু হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়৷ তারা যদি খালেদা জিয়ার সত্যিকারের চিকিৎসা চাইতো, চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চাইতো তাহলে তার দণ্ড মওকুফের জন্য দোষ স্বীকার করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করত৷ তারা সেই আইনি পথে না গিয়ে আন্দোলন করছে৷ রাজনীতি করছে৷”
বিএনপির চার দশক
৪৫ বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত আছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ এত বছরে কী ছিল দলটির পথচলা?
ছবি: Getty Images/Keystone
প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ এরপর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার৷ সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ পরে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিষ্ঠা
বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল৷ পরে তা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করে দলের যাত্রা করেন জিয়াউর রহমান৷
ছবি: imago/United Archives International
নির্বাচন ও মৃত্যু
জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে৷ তখন মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জেতে৷ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/Keystone
খালেদার রাজনীতিতে আসা
জিয়ার মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের আহ্ববানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন৷ ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন৷ ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন৷ ১৯৮৪ সালের ১০মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷
ছবি: AP
এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া
জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন৷ তবে তাঁকে হটিয়ে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন৷ বিএনপি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই আন্দোলনে বেগম জিয়া ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দু’জনই ছিলেন, যদিও আপোষহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
সরকার গঠন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদে মাত্র ৪৫ দিন টিকতে পারে সেই সরকার৷
ছবি: AP
শেষবার সরকারে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জিতে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷এই সরকারই ছিল বিএনপির শেষ সরকার৷ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর নানা বিতর্ক ও ঘটনার প্রেক্ষাপটে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর৷ সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়কেই জেলে যেতেও হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দু’জনই ছাড়া পান৷
ছবি: Getty Images
জোটের রাজনীতি
বিএনপি এ পর্যন্ত বারবার জোট করেছে৷ প্রথম সাতদলীয় জোট করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে৷ এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ গড়ে চারদলীয় জোট৷ পরবর্তীতে জোটে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সেটি ঠেকে বিশ দলীয় জোটে৷
ছবি: bdnews24.com
রাজনৈতিক ভুল ও কারাগারে খালেদা
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়৷ আরো কয়েকটি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না৷ এসব সংকট নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে বলে মনে করেন অনেকেই৷