বিএনপির দুই শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
৯ নভেম্বর ২০২২এ বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার পরে৷ এর আগে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জরুরি সভা করে৷ এ ছাড়া গতকাল আওয়ামী লীগের সভা থেকে ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের' বিরুদ্ধে গত রোববার রাতে নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে নির্মিত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়৷ আওয়ামী লীগের ওই সভায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই রাত ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মহানগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়৷ মহানগর আওয়ামী লীগেরসদস্য জাহিদ সারওয়ার এ মামলা করেন৷ এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷
প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ৷
এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে ৷ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাবে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ৷
এর আগে রোববার রাত সোয়া আটটায় নগরের আম্বরখানা এলাকায় খুন হন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল ৷ এ খুনের পেছনে সরকারদলীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত, দাবি বিএনপির ৷ ওই রাতেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একটি বিক্ষোভ মিছিল থেকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে নির্মিত তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে ৷
ভাঙচুরের খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভাঙচুরকারীদের ধাওয়া দেন ৷ এ সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে ৷ দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় ৷ পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে ৷ তবে এ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা সংক্ষিপ্ত সভায় ভাঙচুরে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে ১৯ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেন ৷
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ সভা করেছে ৷ সে সভা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরবিরুদ্ধে মামলা করার পাশাপাশি গণমাধ্যমে একটা বিবৃতি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় ৷ পরে রাত সোয়া ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এ বিবৃতি পাঠানো হয় ৷
বিএনপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভাকে ভন্ডুল করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে ৷ এতে দাবি করা হয়, নিজেদের দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে মারা যান আ ফ ম কামাল৷ কিন্তু তারা দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে পরিণত করার পাঁয়তারা করছে৷ এটাই বিএনপির চরিত্র৷ তারা নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে সব সময়ই সিদ্ধহস্ত ৷ কিন্তু জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই তা হতে দেবে না ৷
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘটনার পরপরই সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ৷ তাঁরা বিএনপির সন্ত্রাসীদের এ ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ তারা গণমাধ্যমে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আবেগের জায়গা৷ বিএনপি সন্ত্রাসীরা আমাদের সেই আবেগের জায়গায় আঘাত করেছে, যা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে পারে
না৷ শান্তি ও সম্প্রীতির সিলেট নগরকে অশান্ত করার জন্য বিএনপির সন্ত্রাসীরা পাঁয়তারা করছে ৷ এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত দুষ্কৃতকারীদের সিলেটের মাটিতে স্থান হতে পারে না৷' নেতারা বিএনপির ‘সন্ত্রাসীদের' অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান৷
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা বিবৃতিতে বিএনপি নেতা কামালের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৷
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনাটি ‘উদ্দেশ্যমূলক' আখ্যা দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী রাত ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলা করা হলো ৷ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতেই এ মামলা বলে আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি ৷'
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)