1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির নতুন কৌশল?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ এপ্রিল ২০১৯

বিএনপি'র  ৫ জন সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণে তৃণমূলে বিভ্রান্তি বিরাজ করলেও কেন্দ্রীয় নেতারা এটাকে ব্যাখ্যা করছেন ‘নতুন কৌশল' হিসেবে৷ এই নতুন কৌশলটা কী তা নিয়ে কথা বলছেন নেতারা৷

Bangladesch Vereidigung Shirin Sharmin Chowdhury, Harun-ur-Rashid, Ukil Abdus Sattar, Aminul Islam und Mosharraf Hossain.
ছবি: bdnews24.com

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাধান্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মোট ৮ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ তাঁদের মধ্যে ৬ জন নির্বাচিত হন বিএনপি থেকে৷ কিন্তু নির্বাচনের পরই তাঁরা একে ‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন' বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁরা শপথ নেবেন না বলে জানিয়ে দেন৷

কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শপথ নেন ৮ মার্চ৷ আর ২ এপ্রিল শপথ নেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেকজন সংসদ সদস্য মোকাব্বির হোসেন৷ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নেয়ার পর গণফোরাম থেকে তাঁকে বহিস্কার করা হলেও মোকাব্বিরকে বহিস্কার করা হয়নি৷

৩০ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে৷ তাই নিয়ম অনুযায়ী ব্যতিক্রম ছাড়া ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যরা শপথ না নিলে, তাঁদের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার কথা৷ সেই ৯০ দিনের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার৷ তাই বিএনপির নির্বাচিতরা শেষ পর্যন্ত শপথ নেবেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা ছিল গত কয়েক সপ্তাহ ধরে৷ এই আলোচনার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদ৷ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেয়ায় তাঁকে পরের দিনই বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়৷ আর তাঁকে গণদুশমন বলে অভিহিত করেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়৷

শামসুজ্জামান দুদু

This browser does not support the audio element.

কিন্তু সব হিসেব-নিকেশ উল্টে দিয়ে সোমবার দলের সিদ্ধান্তেই শপথ নেন বিএনপির আরো ৪ জন৷ তাঁরা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুন অর রশীদ, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন৷ বিএনপি মহাসচিব এবং বগুড়া-৬ আসনের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি৷ তিনি দলের সিদ্ধান্তেই শপথ নেবেন না বলে জানিয়েছেন৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সিদ্ধান্তেই তাঁরা শপথ নিয়েছেন৷ এটা দলীয় সিদ্ধান্ত৷ তবে তিনি নিজে শপথ নেবেন না এটাও দলীয় সিদ্ধান্ত৷ এই পুরো ব্যাপারটিকে তিনি বিএনপির নতুন রাজনৈতিক কৌশল বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন৷ তবে এই কৌশলের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি৷

 বিএনপি'র বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ চার জন দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নেয়ায় বিএনপির তৃণমুলের নেতারা বিস্মিত এবং হতভম্ব৷ এমনকি এই সিদ্ধান্তের কথা কয়েক ঘণ্টা আগেও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানতেন না৷ তাই ওই চারজন যখন সংসদ ভবনে শপথ নিতে যান, তখনও বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী তাঁদের শপথ নেয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেন৷  তবে শপথ নেয়ার পর ওই ৪ জনই জানান, তাঁরা তারেক রহমানের নির্দেশে এবং দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নিয়েছেন৷ মির্জা ফখরুল ইসলাস আলমগীরও একই কথা জানান৷

জানা গেছে,  প্রধানত ২ কারণে  ৪ জনকে শপথ নিতে অনুমতি দেয়া হয়:

১.দলের ভাঙন রোধ

২.খালেদা জিয়ার মুক্তির আশা

ড. শান্তনূ মজুমদার

This browser does not support the audio element.

ওই চারজনকে যদি অনুমতি না দিয়ে শপথ নেয়ার পর বহিস্কার করা হতো, তাহলে দলে ভাঙন হতে পারতো৷ তাঁরা নতুন দল গঠন করতে পারতেন৷ কারণ, তাঁদের মধ্যে একজন হারুন অর রশীদ দলের যুগ্ম মহাসচিব৷ বিএনপিতে তাঁর অনুসারী আছে৷ তাছাড়া একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে দর কষাকষি সহজ হবে যদি বিএনপি পার্লামেন্টে যায়৷ তাহলে ফখরুল কেন শপথ নিচ্ছেন না? এই প্রশ্নের জবাবে এক নেতা বলেন, ‘‘আসলে ফখরুল শপথ নিলে বিএনপি'র রাজনীতি থাকে না৷''

বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অবশ্যই এটা আমাদের নতুন কৌশল৷ বিএনপিকে বিগত দিনে সরকার কোথাও দাঁড়াতে দেয়নি৷ তাই আমাদের যেখানে যেটুকু সুযোগ আছে, তা ব্যবহার করতে চাই৷ আমাদের সংসদ সদস্যরা এ কারণেই শপথ নিয়েছেন৷ দল এবং তারেক রহমান তাদের শপথ নিতে বলেছেন৷ আমরা দেখতে চাই, সংসদে তাঁদের কতটুকু সুযোগ দেয়া হয়৷ আর ফখরুল সাহেব যে শপথ নিচ্ছেনা না, এটাও আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত৷ এর মাধ্যমে ভোট ডাকাতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ও প্রতিবাদ জারি রাখছি৷ তবে এর সাথে খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই৷''

দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিএনপি'র এই নতুন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখছেন৷ তাঁদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, বিএনপি'র নির্বাচিতরা সংসদে গিয়ে ভালো করেছেন৷ যাঁরা তাদের ভোট দিয়েছেন, তাঁদের তো সম্মান দেখাতে হবে৷ তাঁরা এর মাধ্যমে সম্মান দেখালেন৷ আর তাঁরা সংখ্যায় কম হলেও সংসদে তাঁরাই আসলে হবে বিরোধী দল৷ তাঁরা কথা বলার সুযোগ পাবেন বলে আশা করি৷ আর তাঁদের কথা মিডিয়া গুরুত্বের সাথেই প্রচার করবে৷ তাঁদের একটা অবস্থান থাকবে৷''

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত হবে কিনা তা বলা যায় না৷ এটা আদালতের বিষয়৷ তবে একটা সুযোগ সৃষ্টির আশা তারা করতে পারেন৷''

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার বলেন, ‘‘এটা সত্যি, এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসবেন৷ তাঁরা শপথ না নিলে কী হতো? সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতো এবং উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বা অন্য  কোনো দলের সদস্যরা ওই আসনগুলোর এমপি হতেন৷ তাতে বিএনপির কী লাভ হতো?''

তবে তিনি বলেন, ‘‘আরেকটি জিনিস বোঝা গেল যে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা বা প্রভাব নেই৷ তাঁদের অবস্থান দলের নীতি নির্ধারণে গৌণ৷ একজনই সিদ্ধান্ত নেন৷ তিনি হলেন তারেক রহমান৷''

এই দু'জনই বলেন, ‘‘এটা বিএনপি'র নতুন কোনো কৌশল কিনা তা এখনো বলা যায় না৷ আর এই কৌশল থেকে তাঁরা কী পেতে চায় তা-ও স্পষ্ট নয়৷ তবে সংসদের বাইরে থাকার চেয়ে সংসদে থাকাটা ভালো৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ