1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব আরো বাড়ছে?

হারুন উর রশীদ স্বপন
২ জুলাই ২০২৩

জামায়াতকে নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক মন্তব্য৷ এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে জামায়াত৷ এরপর ফখরুল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় জামায়াত৷

জামায়াতের সমাবেশ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে৷ছবি: Sheikh Ferdous

বিএনপি-জাময়াতের জোট ভাঙার খবর আগেই পাওয়া গেছে৷ আর গেল ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জামায়াতকে সমাবেশ করতে সরকারের অনুমতি এবং সর্বশেষ মির্জা ফখরুলের মন্তব্য এই দূরত্বকে আরো স্পষ্ট করছে৷

ঈদের পরদিন ৩০ জুন ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াত নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘মুখে মুখে জামায়াত বিরোধিতার ধোঁয়া তুললেও সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট হয়েছে৷ সরকারের লোকেরাই বলছে, অন্যান্যরাও বলছে৷’’

পরদিন, ১ জুলাই জামায়াতের পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম বিবৃতি পাঠিয়ে ফখরুলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান৷

বিবৃতে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যে জনগণ হতাশ হয়েছে৷ আমরা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য সর্বোতভাবে প্রত্যাখ্যান করছি৷’’

এতে আরো বলা হয়, ‘‘জামায়াতে ইসলামী কোনো ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার ও জালেমের সঙ্গে আঁতাত, সমঝোতা বা যোগাযোগ করে কখনো রাজনীতি করে না৷ করার প্রশ্নই আসে না৷ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা ও এক দফার আন্দোলনের জন্য গোটা জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ, তখন এ জাতীয় বক্তব্য সরকার বিরোধী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷’’

কার মদতে ফের মাঠে জামায়াত?

55:51

This browser does not support the video element.

একইদিন বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টিতেই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে৷ আমার বক্তব্য গণমাধ্যমে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করা হয়নি৷ জামায়াত একটা রাজনৈতিক দল, অনেক দিন ধরে রাজনীতি করছে, জাতীয় পার্টিও রাজনৈতিক দল৷ যদিও এখন জামায়াতের নিবন্ধন নেই৷ আমি ঠাকুরগাঁওয়ে যে কথাটা বলেছিলাম- জামায়াতে ইসলামী একটা রাজনৈতিক দল, সে তার নিজস্ব ধারায় রাজনীতি করছে৷’’

কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের এই কথায় সন্তুষ্ট নয় জামায়াতে ইসলামী৷ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের পর ৩৬ ঘন্টা অপেক্ষা করেছি৷ তিনি তার বক্তব্য সংশোধন করেননি৷ আমরা বিবৃতি দেয়ার পর তিনি যা বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়৷ তিনি তো বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক এখন স্পষ্ট৷ আমরা তো আমাদের বিবৃতিতে সেটা উল্লেখ করে দিয়েছি৷ ওনি তো সেটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি তার কথায়৷ তার আরো পরিস্কার করে বলা উচিত ছিলো যে, এ জাতীয় কথা তার বলা ঠিক হয়নি৷ কিন্তু সেটা তিনি করেননি৷’’

‘‘তবে আমি মনে করি এটা ওনার বক্তব্য৷ বিএনপির নীতি নির্ধারকদের কেউ ওনার বক্তব্য সমর্থন করেননি’’, বলেন এই জামায়াত নেতা৷

মির্জা ফখরুলের ঠাকুরগাঁয়ের বক্তব্যের পর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের কথা হয়েছি কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যোগাযোগ আমাদের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন লেভেলেই হয়েছে৷ তারা তখন বলেছেন, এই বিষয়টি নিয়ে তারা বিব্রত৷’’

দুই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাদের মধ্যে অবিশ্বাস এবং সন্দেহ বাড়ছে৷ বিএনপির একাংশ অনেক আগে থেকেই জামায়াত বিরোধী৷ সেই অংশ মনে করছেন, ১০ জুন জাময়াতের সমাবেশ সরকারের সঙ্গে কোন সমঝোতার ফল৷ তারা এটাও মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জামায়াতকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামাতে পারে সরকার৷ আর বিএনপি নির্বাচনে গেলেও জামায়াতকে আর জোট করতে না দিয়ে আলাদা নির্বাচন করানো হবে৷ তাতে ভোটের হিসেবে শাসক দল আওয়ামী লীগ লাভবান হবে৷

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘‘আমরা বিএনপির সঙ্গে জোটে নাই অনেক দিন ধরেই৷ তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছি৷ আমরা কেয়ারটেকার সরকার চাই, ওনারাও চান৷ আমরা একটা ফ্রেশ নির্বাচন চাই৷ ওনারাও চান৷ দাবির ক্ষেত্রে আমাদের অমিল আছে, অভিন্নতাও আছে৷ আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে৷’’

নির্বাচন ও জোট প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত ইসালমীর এককভাবে সারাদেশে নির্বাচনের সক্ষমতা আছে৷ কিন্তু কীভাবে নির্বাচন হবে, প্রক্রিয়া কী হবে? নির্বাচন আমরা এককভাবে করব, না জোটগতভাবে করব, তা বলার সময় তো এখনো আসেনি৷’’

তার কথা, ‘‘আমরা ১৩বার আবেদন করার পর সমাবেশের অনুমতি পেয়েছি৷ আমাদের এতগুলো নেতাকে হত্যার পর এই সরকারের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই ওঠেনা৷আর কেয়ারটেকার সরকার হলে আমরা নিবন্ধনও পাব৷’’

মার্কিন ভিসা নীতির পর সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে: আহমেদ আযম খান

This browser does not support the audio element.

এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান মনে করেন, ‘‘জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়ার পিছনে সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি আছে৷ সরকার এখন নানা ধরনের চাপের মুখে আছে৷ মার্কিন ভিসা নীতির পর সরকার এখন দিশেহারা হয়ে গেছে৷’’

জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়ার ব্যাপারে সরকারের একেক নেতা একেক ধরনের কথা বলছেন বলেও জানান এই বিএনপি নেতা৷

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বলেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ সেই রাজনীতিটা কী? নির্বাচনের আগে এখন আবার জঙ্গি তৎপরতার কথা বলা হচ্ছে৷ সরকার বিরোধী আন্দোলন সামনে যখন আরো জোরদার হবে, জাময়াত মাঠে নামবে৷ তখন হয়তো বুঝাতে চাইবে এই জামায়াত গোষ্ঠী, জঙ্গি গোষ্ঠী নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়৷’’

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত সভা-সমাবেশ করার চেষ্টা করতেই পারে জানিয়ে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে৷ কিন্তু জামায়াতকে সতর্ক থাকতে হবে৷ সতর্ক থাকতে হবে, সরকারের দুরভিসন্ধি নিয়ে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি এখন জোটগত আন্দোলন করছে না৷ তাই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট নেই৷ এখন রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন করছে৷’’

এখন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ হয় কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না, এখন জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয় না৷ জোট নেই, যোগাযোগও নেই৷ জামায়াতের সঙ্গে ভবিষ্যতে জোট হওয়ার সম্ভাবনাও আপাতত দেখছি না৷’’

জানা গেছে, বিএনপি আপাতত জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চায় মূলত দুই কারণে৷ প্রথম, জামায়াতের কোনো কাজের দায় তারা নিতে চায় না এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে চায় যে, ওই ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই৷ আর জামায়াত নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের একাংশেরও আপত্তি আছে৷ তাই, বিএনপি তার জোটেও জামায়াতকে রাখেনি৷

গণতন্ত্রের কথাও বলবেন, সমাবেশে অনুমতি দিলে আঁতাত বলবেন

This browser does not support the audio element.

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি কেন দেয়া হলো, এটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই ভালো বলতে পারবে৷ একদিকে, আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলবেন, সভা-সমাবেশের কথা বলবেন৷ আবার সমাবেশের অনুমতি দিলে আঁতাতের কথা বলবেন৷ এটা তো পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা৷’’

তার কথা, ‘‘মির্জা ফখরুল সাহেব কী ভুলে গেছেন, তাদের নেতা তারেক রহমান ছাত্র শিবিরের সমাবেশে গিয়ে  বলেছিলেন, ছাত্র শিবির এবং ছাত্রদল একই মায়ের পেটের দুই সন্তান৷ ওনি বলেছিলেন জামায়াত ইসলামী এবং বিএনপি ভাই ভাই৷ জাময়াত-বিএনপি দুইটি দলেরই উৎস এক৷ পাকিস্তানের সৃষ্টি৷ জামায়াত সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানের মওদুদী, আর বিএনপি সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ