জামায়াতকে নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক মন্তব্য৷ এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে জামায়াত৷ এরপর ফখরুল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় জামায়াত৷
ঈদের পরদিন ৩০ জুন ঠাকুরগাঁওয়ে জামায়াত নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘মুখে মুখে জামায়াত বিরোধিতার ধোঁয়া তুললেও সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট হয়েছে৷ সরকারের লোকেরাই বলছে, অন্যান্যরাও বলছে৷’’
পরদিন, ১ জুলাই জামায়াতের পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম বিবৃতি পাঠিয়ে ফখরুলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান৷
বিবৃতে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যে জনগণ হতাশ হয়েছে৷ আমরা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য সর্বোতভাবে প্রত্যাখ্যান করছি৷’’
এতে আরো বলা হয়, ‘‘জামায়াতে ইসলামী কোনো ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার ও জালেমের সঙ্গে আঁতাত, সমঝোতা বা যোগাযোগ করে কখনো রাজনীতি করে না৷ করার প্রশ্নই আসে না৷ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা ও এক দফার আন্দোলনের জন্য গোটা জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ, তখন এ জাতীয় বক্তব্য সরকার বিরোধী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷’’
কার মদতে ফের মাঠে জামায়াত?
55:51
একইদিন বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টিতেই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে৷ আমার বক্তব্য গণমাধ্যমে সঠিকভাবে উদ্ধৃত করা হয়নি৷ জামায়াত একটা রাজনৈতিক দল, অনেক দিন ধরে রাজনীতি করছে, জাতীয় পার্টিও রাজনৈতিক দল৷ যদিও এখন জামায়াতের নিবন্ধন নেই৷ আমি ঠাকুরগাঁওয়ে যে কথাটা বলেছিলাম- জামায়াতে ইসলামী একটা রাজনৈতিক দল, সে তার নিজস্ব ধারায় রাজনীতি করছে৷’’
কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের এই কথায় সন্তুষ্ট নয় জামায়াতে ইসলামী৷ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের পর ৩৬ ঘন্টা অপেক্ষা করেছি৷ তিনি তার বক্তব্য সংশোধন করেননি৷ আমরা বিবৃতি দেয়ার পর তিনি যা বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়৷ তিনি তো বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক এখন স্পষ্ট৷ আমরা তো আমাদের বিবৃতিতে সেটা উল্লেখ করে দিয়েছি৷ ওনি তো সেটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি তার কথায়৷ তার আরো পরিস্কার করে বলা উচিত ছিলো যে, এ জাতীয় কথা তার বলা ঠিক হয়নি৷ কিন্তু সেটা তিনি করেননি৷’’
‘‘তবে আমি মনে করি এটা ওনার বক্তব্য৷ বিএনপির নীতি নির্ধারকদের কেউ ওনার বক্তব্য সমর্থন করেননি’’, বলেন এই জামায়াত নেতা৷
মির্জা ফখরুলের ঠাকুরগাঁয়ের বক্তব্যের পর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের কথা হয়েছি কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যোগাযোগ আমাদের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন লেভেলেই হয়েছে৷ তারা তখন বলেছেন, এই বিষয়টি নিয়ে তারা বিব্রত৷’’
দুই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাদের মধ্যে অবিশ্বাস এবং সন্দেহ বাড়ছে৷ বিএনপির একাংশ অনেক আগে থেকেই জামায়াত বিরোধী৷ সেই অংশ মনে করছেন, ১০ জুন জাময়াতের সমাবেশ সরকারের সঙ্গে কোন সমঝোতার ফল৷ তারা এটাও মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জামায়াতকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামাতে পারে সরকার৷ আর বিএনপি নির্বাচনে গেলেও জামায়াতকে আর জোট করতে না দিয়ে আলাদা নির্বাচন করানো হবে৷ তাতে ভোটের হিসেবে শাসক দল আওয়ামী লীগ লাভবান হবে৷
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘‘আমরা বিএনপির সঙ্গে জোটে নাই অনেক দিন ধরেই৷ তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছি৷ আমরা কেয়ারটেকার সরকার চাই, ওনারাও চান৷ আমরা একটা ফ্রেশ নির্বাচন চাই৷ ওনারাও চান৷ দাবির ক্ষেত্রে আমাদের অমিল আছে, অভিন্নতাও আছে৷ আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে৷’’
নির্বাচন ও জোট প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত ইসালমীর এককভাবে সারাদেশে নির্বাচনের সক্ষমতা আছে৷ কিন্তু কীভাবে নির্বাচন হবে, প্রক্রিয়া কী হবে? নির্বাচন আমরা এককভাবে করব, না জোটগতভাবে করব, তা বলার সময় তো এখনো আসেনি৷’’
তার কথা, ‘‘আমরা ১৩বার আবেদন করার পর সমাবেশের অনুমতি পেয়েছি৷ আমাদের এতগুলো নেতাকে হত্যার পর এই সরকারের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই ওঠেনা৷আর কেয়ারটেকার সরকার হলে আমরা নিবন্ধনও পাব৷’’
মার্কিন ভিসা নীতির পর সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে: আহমেদ আযম খান
This browser does not support the audio element.
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান মনে করেন, ‘‘জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়ার পিছনে সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি আছে৷ সরকার এখন নানা ধরনের চাপের মুখে আছে৷ মার্কিন ভিসা নীতির পর সরকার এখন দিশেহারা হয়ে গেছে৷’’
জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়ার ব্যাপারে সরকারের একেক নেতা একেক ধরনের কথা বলছেন বলেও জানান এই বিএনপি নেতা৷
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বলেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ সেই রাজনীতিটা কী? নির্বাচনের আগে এখন আবার জঙ্গি তৎপরতার কথা বলা হচ্ছে৷ সরকার বিরোধী আন্দোলন সামনে যখন আরো জোরদার হবে, জাময়াত মাঠে নামবে৷ তখন হয়তো বুঝাতে চাইবে এই জামায়াত গোষ্ঠী, জঙ্গি গোষ্ঠী নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়৷’’
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত সভা-সমাবেশ করার চেষ্টা করতেই পারে জানিয়ে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে৷ কিন্তু জামায়াতকে সতর্ক থাকতে হবে৷ সতর্ক থাকতে হবে, সরকারের দুরভিসন্ধি নিয়ে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি এখন জোটগত আন্দোলন করছে না৷ তাই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট নেই৷ এখন রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন করছে৷’’
এখন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ হয় কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না, এখন জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয় না৷ জোট নেই, যোগাযোগও নেই৷ জামায়াতের সঙ্গে ভবিষ্যতে জোট হওয়ার সম্ভাবনাও আপাতত দেখছি না৷’’
জানা গেছে, বিএনপি আপাতত জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চায় মূলত দুই কারণে৷ প্রথম, জামায়াতের কোনো কাজের দায় তারা নিতে চায় না এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে চায় যে, ওই ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই৷ আর জামায়াত নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের একাংশেরও আপত্তি আছে৷ তাই, বিএনপি তার জোটেও জামায়াতকে রাখেনি৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি কেন দেয়া হলো, এটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই ভালো বলতে পারবে৷ একদিকে, আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলবেন, সভা-সমাবেশের কথা বলবেন৷ আবার সমাবেশের অনুমতি দিলে আঁতাতের কথা বলবেন৷ এটা তো পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা৷’’
তার কথা, ‘‘মির্জা ফখরুল সাহেব কী ভুলে গেছেন, তাদের নেতা তারেক রহমান ছাত্র শিবিরের সমাবেশে গিয়ে বলেছিলেন, ছাত্র শিবির এবং ছাত্রদল একই মায়ের পেটের দুই সন্তান৷ ওনি বলেছিলেন জামায়াত ইসলামী এবং বিএনপি ভাই ভাই৷ জাময়াত-বিএনপি দুইটি দলেরই উৎস এক৷ পাকিস্তানের সৃষ্টি৷ জামায়াত সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানের মওদুদী, আর বিএনপি সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে৷’’
বাংলাদেশে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের যত মন্তব্য
নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়৷ ২০০০ সালের পর থেকে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা থাকছে ছবিঘরে৷
২০০০ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোর প্রায় প্রত্যেকটির আগে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূতদের কথা বলতে দেখা গেছে৷ বিদেশি কূটনীতিকদের এমন আচরণকে সবসময় ক্ষমতাসীন দল ‘শিষ্টাচার লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করে। আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে তা ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ পদক্ষেপ৷
ছবি: AP
‘স্টুপিড রাষ্ট্রদূত’
চার দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের তৎপরতা দেখা যায়৷ তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যরিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘‘কিছু কিছু দালাল রাষ্ট্রদূত মহাজোটকে (আওয়ামী লীগ ও তার জোট) সংবিধান ধ্বংসের উসকানি দিচ্ছেন৷ তাদের কর্থাবার্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরুপ৷’’ বাংলাদেশে মার্কিন ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ‘স্টুপিড’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
২০ বছর পর আওয়ামী লীগের মুখেও একই সুর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে ভিসা নীতি। কথা বলছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরাও। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বিষয় বা অনুষ্ঠান থেকে কূটনীতিবিদেরা বিরত থাকবেন বলে আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর৷
ছবি: DW
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট
২০০১ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আগস্টে ঢাকায় আসেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত‘ করতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসেন তিনি৷ ঢাকা ত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলনে কার্টার জানান, ১) সংসদ বর্জন নয় ২) হরতাল নয় ৩) সন্ত্রাস নয় ৪) ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় পর্যবেক্ষক এবং ৫) কমপক্ষে ৬০জন নারী এমপি, এই পাঁচ প্রশ্নে একমত হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি৷
ছবি: John Amis/REUTERS
‘বাংলাদেশ ট্রাবলসাম হয়ে উঠেছে’
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা, জঙ্গিবাদের উথ্থানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় আসে বাংলাদেশ৷ এমন প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসের এক বক্তব্য বেশ আলোড়ন তোলে৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ বেশ ট্রাবলসাম বা সমস্যাসংকুল হয়ে উঠেছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত) কিছু করতে হবে।’’
ছবি: DW/O. Sawizky
বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠি
সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে লেখা ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে৷ এমন ঘটনা নতুন নয়৷ ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ১৬ বা ১৮ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান-সিনেটর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংস জঙ্গিবাদের ব্যাপারটি উথ্থাপন করার অনুরোধ জানান৷
ছবি: Anna Moneymaker/Getty Images
এক-এগারো সরকার ও কূটনীতিকেরা
চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থান নেয় সেসময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি ও প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে থেকেই তৎপরতা শুরু করে কূটনীতিকেরা।
ছবি: DW
সরব পশ্চিমারা
চারদলীয় জোটের সময়কালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপরতা দেখা যায় পশ্চিমা কূটনীতিকদের৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে ফোন করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি নিকোলাস বার্নসে৷ সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhot/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের 'কফি গ্রুপ’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকাস্থ পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য নিজেদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করতেন। যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘কফি গ্রুপ’। এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও জাতিসংঘের প্রতিনিধি। এই গ্রুপে জাপানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্য এমন ইঙ্গিত দেয়।
ছবি: DW
চাকরির নিশ্চয়তা চান সেনাপ্রধান
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ সেসময়ের ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির কাছে চাকরির নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত প্রণব মুখার্জি ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স’ এ জানান, মইন উ আহমেদের আশঙ্কা ছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হবে। তার চাকরির দায়িত্ব প্রণব মুখার্জি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
ছবি: DW / Samir Kumar Dey
সুজাতা সিংয়ের বিতর্কিত সফর
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এমন অবস্থানে অনড়৷ সেবছরের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নির্বাচন৷ ঠিক এক মাস আগে ঢাকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। অনকের দাবি, সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে আসতে অনুরোধ জানান৷ এর ফলে বিএনপিকে ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন সহজ হয়৷
ছবি: DW
পুলিশ রাতে ব্যালট ভর্তি করেছে: জাপানের রাষ্ট্রদূত
দ্বাদশ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই একাদশ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনে (২০১৮ নির্বাচনে) পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার যে অভিযোগ উঠেছে, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে কখনোই এমনটা শুনিনি। আশা করি আগামী নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। জাপান আশা করে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে।’’
ছবি: U.S. Embassy Dhaka
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি
সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ৷ ২৪ মে ঘোষিত ওই ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে৷ এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি চ্যানেল 24-কে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইউরোপের বাজারে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধার দুয়ার খুলতে পারে।
সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখার প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রতি চীনের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। অবশ্য এক সপ্তাগ আগে গত শুত্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।