বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের কৌশল কী?
১৩ অক্টোবর ২০২২বুধবার চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে সমাবেশ করবে বিএনপি। সবশেষে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে । এরইমধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপি কী করতে যাচেছ তা নিয়ে আলোচনায় চলছে। ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ খালেদা জিয়ার কথায় চলবে এটা বলে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান এখন আলোচনায়। তার এই কথা নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। তবে একাধিক সূত্র জানায়, বিএপি ১০ ডিসেম্বর এবং তার আগে নাটকীয় কিছু করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো খালেদা জিয়াকে সমাবেশে নেয়ার চেষ্টা, এমপিদের পদত্যাগ এবং ঢাকায় লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করা। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতি ও সরকার কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নেয় কিনা তার ওপর।
চট্টগ্রামে সমাবেশের পর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন,"আমাদের মূল টার্গেট হলো এইসব সমাবেশে মাধ্যমে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করা। আর এই চাপ সৃষ্টি করতে নানা ধরনের আন্দোলন কৌশলের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি কৌশল হলো দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশে নেয়ার চেষ্টা। আমরা চেষ্টা করব। কিন্তু আমরা জানি সরকার বাধা দেবে। তারপরও এতে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। আর এমপিদের পদত্যাগ, বড় ধরনের অবস্থান কর্মসূচি বা অবস্থান কর্মসূচিরও পরিবল্পনা আছে আমাদের।”
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,"আমরা আগেই বলেছি আমাদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার নির্দেশনায়ই আমরা কাজ করছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সরকার ১০ ডিসেম্বরের আগেই চাপের মুখে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে এবং তিনি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে নেতৃত্ব দেবেন।”
তার কথা,"এমপিদের পদত্যাগসহ আরো অনেক কিছু সময়মত করা হবে। সরকারের মনোভাবের ওপর আমাদের কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে। আমরা ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গনে আমরা সমাবেশ করার আবেদন করেছি। কিন্তু সরকার অনুমতি দিচ্ছে না। অনুমতি না দিলেও আমরা ওখানেই সমাবেশ করব। কোনো হামলা, মামলা করে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না।”
তিনি জানান,"বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এখন দ্বিতীয় দফা যে আলোচনা চলছে সেটা শেষ হলেই চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে।”
বিএনপি সূত্র জানায়, তাদের চেষ্টা হলো বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্য দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাতে সব নেতা-কর্মী মাঠে নামে। ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন তারা সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক হারে ঢাকায় আনতে চায়। এরইমধ্যে তার কাজ চলছে। প্রয়োজনের তারা এক-দুইদিন আগে ঢাকায় আসবেন। আর ঢাকার আশপাশের জেলার নেতা-কর্মীরা ঢাকার প্রবেশ পথ দিয়ে সমাবেশের দিন একযোগে প্রবেশ করবেন। তাদের টার্গেট সমাবেশের দিন ঢাকা যেন অচল হয়ে যায়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন,"আমাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য এই সরকারকে বিদায় করা। বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি যদি এরমধ্যে মুক্তি পান তাহলে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হলে তিনি সমাবেশে যেতে পারেন। এমপিরা সময় হলে পদত্যাগ করবেন।”
তার কথা,"সরকারের ব্যাপক দমন নীতির পরও নেতা-কর্মীরা মাঠে নামছেন। চট্টগ্রামের সমাবেশই তার প্রমাণ। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশে লাখ লাখ লোকের সমাগম হবে।”
তবে ঢাকার মহাসমাশে কোথায় করবে তা এখনো ঠিক করেনি বিএনপি।
এদিকে বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানা জানান,"পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি। দল থেকে নির্দেশ এলে আমি পদত্যাগে কোনো দেরি করব না।”