বিএনপির হরতাল ডাকার কী অধিকার
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০যাদের ডাকে ভোটাররা কেন্দ্রে যান না, গেলেও কারো উঁকি বা চোখ রাঙানিতে ভোট না দিয়ে ফিরে আসেন অথবা অন্যে ভোট দিয়ে দিয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যমে বিচার দেন-তাদের ডাকে মানুষ কাজ কর্ম করে ঘরে বসে থাকবেন; সত্যিই এমনটা আশা করেছিলেন তারা?
কেমন হরতাল হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা থেকে একজন স্বজন বললেন, সকালে নয় মিনিটে ফার্মগেট থেকে গুলশান পৌঁছে গেছেন৷ আরেকজনের কথা শুনলাম যিনি অনেকক্ষণ জ্যামে বসে থেকেছেন৷ মানে ভয়ে বা শঙ্কায় অনেকে বের হননি সকালে আবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব স্বাভাবিকভাবে হয়ে গেছে৷ শুধু অনেক বাচ্চা আজ স্কুলে যায়নি, অনেক সাবধানী চাকরিজীবী আজ পায়ে হেঁটেছেন৷ বাজার সওদা করতে গিয়ে বা এয়ারপোর্ট ট্রেন স্টেশনেও কিছু দুর্ভোগ হয়েছে৷ সরকার বা নতুন দুই মেয়রকে গালি দেওয়ার পাশাপাশি নাগরিকেরা আজকে হয়তো বিএনপিকে নিয়েও হাসাহাসি বা গালাগাল করেছেন৷
যারা এই হরতালের ডাক দিয়েছিলেন সেই সব নেতা সমর্থকদের পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যেতে ৩০ মিনিটের আলটিমেটাম দিয়েছিল পুলিশ, তারা সরে গেছেন তিন মিনিটের মধ্যে৷ বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই সরণ দুপুরের খাওয়া ও নামাজের জন্য৷ দুই মেয়র প্রার্থীর একজন ইশরাক হোসেন কিছুক্ষণের জন্য, পরে আসেন তাবিথ আউয়ালও৷ ও হ্যা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসেছিলেন৷ খবরের কাগজ বলছে দুই মিনিটের জন্য!
তবে কী প্রমাণ করতে এই হরতাল? ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে না এসে এমনকি আসা নিয়ে আলোচনার পথও গলা টিপে মেরে ফেলে, ২০১৫ সালে লাগাতার অবরোধ ও পেট্রল বোমার যজ্ঞ চালিয়ে, সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে একরকমের হাঁসজারু জোট করে ২০১৮ এর সংসদ নির্বাচনে এসে, ভরাডুবির পর খালি হাতে শপথ নিয়ে বিএনপি এমন এক জায়গায় আওয়ামী লীগকে পৌঁছে দিয়েছে যেখানে দেশের মানুষই হয়তো আর বিশ্বাস করে না যে ভোট দিয়ে কিছু হবে৷
আমার কথা হলো এই, যারা নিজেরাই জানে না কী করবে আর কী করবে না; মানে ইতিহাস সাক্ষী আওয়ামী লীগ যদি এখন ঢাকা শহরদুটিতে শ খানেক বিশেষ পদমর্যাদার কাউন্সিলর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় আর এর মধ্যে দুটি পদ বিএনপিকে অফার করে তবে প্রথমে কিছু না না শোনা যাবে ঠিকই৷ কিন্তু এর পরপরই লন্ডন থেকে ভিডিও ইন্টারভিউ হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দৃপ্ত ঘোষণায় দুইজন বিএনপি নেতা হাসিমুখে নগর ভবনগুলোতে দৌড়াবেন৷
তবে কী আওয়ামী লীগ নির্বাচন, দেশ পরিচালনা, দুর্নীতি তোষণে যা করছে তা ঠিক করছে? আমার বিবেচনাতে না একদমই ঠিক করছে না, কিন্তু একথাও স্পষ্ট যে, বিএনপি বা জামায়াতের কথা শুনে বিপ্লব, আন্দোলন এমনকি প্রতিবাদ করতেও রাজি নয় জনগণ৷ গলা ফুলিয়ে এর কারণ হিসেবে শুধু হামলা মামলা আর ভয়ের কথা বললেই হবে না৷
আপনি বিএনপির নেতা কর্মী সমর্থক চেয়ারম্যান যাই হোন, বাস্তবতা স্বীকার করুন, তারপর ঠিক করুন স্ট্রাটেজি৷ নইলে চোরাবালিতে তলিয়ে যাবেন, একটু চোখ কান খোলা থাকলে এর মধ্যেই যা আপনার টের পাওয়ার কথা৷