সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভীষণ কুৎসিত এক দৃষ্টান্ত দেখালেন লন্ডন বিএনপির নেতা-কর্মীরা৷ নইলে কোনো রাজনৈতিক প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম – শেখ হাসিনার বাপের নাম' স্লোগান দেয়?
ছবি: Facebook/J. Raaj
বিজ্ঞাপন
হ্যাঁ ঠিক এই স্লোগানটি ব্যবহৃত হয়েছে লন্ডনে বিএনপির এক প্রতিবাদ সমাবেশে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেটি ভাইরাল হয়ে গেছে৷
রোববার লন্ডন সফরের সময়প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানকার একটি স্থানে বক্তব্য দিতে গিয়েছিলেন৷ সেই স্থানের বাইরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢোল, করতাল বাজিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম– শেখ হাসিনার বাপের নাম'৷ ভিডিওটি ধারণ করেন জুয়েল রাজ নামে এক লন্ডন প্রবাসী এবং সেটি ফেসবুকেও পোস্ট করেন৷ মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়৷
অন্যান্যদের মধ্যে ব্লগার অজন্তা দেব রায়ও ভিডিওটি পোস্ট করেছেন, যেটি এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ বার দেখা হয়েছে৷ শেয়ার হয়েছে দেড় হাজার বারের মতো৷ অজন্তা পোস্টে লিখেছেন, ‘‘কতটা ঘৃণা মনে ও মগজে থাকলে এমনটা করা সম্ভব, ভাবা যায়? তলে তলে সাম্প্রদায়িকতা পোষা বিএনপি প্রকাশ্যে এত নির্লজ্জভাবে তার সাম্প্রদায়িক রূপের প্রকাশ ঘটিয়েছে যে, এরা বাংলাদেশের একটা বড় রাজনৈতিক দল ভাবতেও ঘেন্না হচ্ছে৷'' পোস্টে তিনি সবাইকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বানও জানিয়েছেন৷ ভিডিওর নীচে মন্তব্য করেছেন অনেক মানুষ৷ বেশিরভাগই এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
জুয়েল রাজ লিখেছেন, ‘‘লন্ডনের রাস্তায় ইসকনের মতো ঢোল-করতাল নিয়ে, দু'বাহু তুলে হরিনাম সংকীর্তন গাইছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা কর্মীরা!! যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক দাঁড়িয়েথেকে হিন্দু ধর্মকে বিকৃত করে, উপহাস করে স্লোগান দিচ্ছেন, যা রীতিমতো ধর্মীয় বিদ্বেষ৷ একবার এর বিপরীত চিত্র ভাবুন৷ ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিএনপি উপহাস করে কোনো স্লোগান দিচ্ছে সেই ক্ষেত্রে কী পরিণতি হতো!''
এপিবি/এসিবি
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷