ডয়চে ভেলে বাংলার সাপ্তাহিক টকশোতে এমন মন্তব্য করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী৷ গত নির্বাচনে কারচুপির প্রসঙ্গ উঠলে তিনি তা বলেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে বাংলার সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এর এবারের পর্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স৷ এবারের আলোচ্য বিষয় ছিল রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন: গাড়ি কেন পোড়ে, কে পোড়ায়৷
অনুষ্ঠানের শুরুতে আলোচনায় উঠে আসে ২০১৮ সালের নির্বাচনেকারচুপির কথা, এর সাথে জড়িত দুর্বৃত্তায়ন ও ভয়ের রাজনীতির প্রসঙ্গ৷ সিরাজগঞ্জ-১, বরিশাল-১সহ বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রের সন্দেহজনক ফলাফলের প্রসঙ্গ উঠলে প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে এই সংখ্যাগুলি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়না৷ আমি মনে করিনা কোনো আসনে বিএনপি ৪০০টি ভোট পেতে পারে৷''
এই দাবির ভিত্তি হিসাবে তিনি বলেন বিএনপির রাজনীতির বর্তমান ধারার কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন ফলাফল সম্ভব হয় কারণ বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির ধারার কারণে তাদের ভোটাররাই ভোট দিতে যায় না৷ তারা নির্বাচনের কাজে প্রথম দশ-পনেরোদিন মাঠে ছিল, এরপর থেকে তারা শুধু অভিযুক্ত করার রাজনীতি শুরু করে৷ বিএনপি ভোটের রাজনীতি করেনা, তারা অসুস্থ রাজনীতি করে, জনগণের সাথে থাকেনা৷''
একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে ১০ আসনে বিএনপি সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তানভীর শাকিল জয়৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৪৬৮ ভোট৷ ছবিঘরে দেখে নিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র কোন ১০ প্রার্থী সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
গোপালগঞ্জ-৩
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন দুই লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট৷ সেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র এসএম জিলানী পেয়েছিলেন মাত্র ১২৩ ভোট৷ গত নির্বাচনে কোনো আসনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পাওয়া এটাই সবচেয়ে কম ভোট৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
সিরাজগঞ্জ-১ উপ-নির্বাচন
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম করোনায় মারা যান৷ এই আসনে উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়৷ শাকিল এক লাখ ৮৮ হাজার ৩২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সেলিম রেজা পেয়েছেন ৪৬৮ ভোট৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
সিরাজগঞ্জ-১
সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা কম ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে আছেন তিন নম্বরে৷ সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপ নির্বাচন না হলে তিনি দুই নম্বরেই থাকতেন৷ একই আসনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম পেয়েছিলেন তিন লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ ভোট৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা পেয়েছিলেন ১,১১৮ ভোট৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
বরিশাল-১
বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ দুই লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট পেয়েছিলেন৷ ধানের শীষের জহিরউদ্দিন স্বপন পেয়েছিলেন ১,৩০৫ ভোট৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের এবি তাজুল ইসলাম দুই লাখ ৭৮ ভোট পেয়েছিলেন৷ নিকটতম বিএনপি মনোনীত ঐক্যজোট প্রার্থী ধানের শীষের আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন ১,৩২৯ ভোট৷
ছবি: Reuters
শরীয়তপুর-২
শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের এ কে এম এনামুল হক শামীম পেয়েছিলেন দুই লাখ ৭৩ হাজার ১৭১ ভোট৷ বিএনপির মো. সফিকুর রহমান কিরণ পেয়েছিলেন ২,১১৩ ভোট৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
চট্টগ্রাম-৬
চট্টগ্রাম-৬ আসনে আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী পেয়েছিলেন দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৭১ ভোট৷ নিকটতম বিএনপির জসিম উদ্দিন সিকদার পেয়েছিলেন ২,২৪৪ ভোট৷
ছবি: DW/H.U. Rashid Swapan
মাদারীপুর-২
মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের শাজাহান খান পেয়েছিলেন তিন লাখ ১১ হাজার ৭৪০ ভোট৷ নিকটতম বিএনপি প্রার্থী মিল্টন বৈদ্য পেয়েছিলেন মাত্র ২,৫৮৮ ভোট৷
ছবি: bdnews24.com
শরীয়তপুর-৩
শরীয়তপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নাহিম রাজ্জাক ২ লাখ ৭ হাজার ২২৯ ভোট৷ নিকটতম বিএনপির হানিফ মিয়া পেয়েছিলেন ২,৭৩৫ ভোট৷
ছবি: DW/H.U. Rashid Swapan
মাদারীপুর-৩
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের আব্দুস সোবাহান গোলাপ দুই লাখ ৫২ হাজার ৬৪১ ভোট পেয়েছিলেন৷ বিএনপি প্রার্থী আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার পেয়েছিলেন মাত্র ৩,২৯৬ ভোট৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
চট্টগ্রাম-৩
চট্টগ্রাম-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতা এক লাখ ৬২ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়েছিলেন৷ নিকটতম বিএনপির মোস্তফা কামাল পাশা ৩,১২২ ভোট পান৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
এর উত্তরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সঠিক নয়৷ আমরা কখনোই আধা-মনোযোগ দিয়ে কিছু করিনি৷ আমরা পুরো অংশগ্রহণ করছি, নিয়মনীতি মেনেই করেছি৷ গত নির্বাচনে আমরা এক হাজার ৭০০ এজেন্ট দিয়েছি, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি পাঁচ দিন ধরে৷ আমাদের ২৩৫ কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে৷ নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে খালি হাতে কীভাবে যুদ্ধ করবেন? মারধর করে নির্বাচনকেন্দ্র থেকে কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবুও, এর মধ্যেও যারা গেছে তাদেরকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷''
বিএনপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন যে, এমন কোনো অভিযোগের কথা তাঁরা জানেননা৷ কিন্তু এমরান সালেহ প্রিন্সের মত, ভয়ের আবহ থাকার কারণে মুক্তভাবে নির্বাচনি বা অন্যান্য রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে পারছে না বিএনপি৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আওয়ামী লীগ দেশ চালাতে ব্যর্থ, তারা দুর্নীতি করেছে৷ এরশাদ আমলেও আমরা যা ন্যূনতম রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা দেখেছি, তা এখন নাই৷ আমার সেটা বলতে লজ্জা লাগছে৷''
এছাড়া, আজকের পর্বে আলোচিত হয় দুই দলের জনসংযোগ, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও বিরোধীপক্ষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়ও৷