বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ জোটের ১৪৭ জন নেতা-কর্মীর দ্রুত বিচার আইনে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ সোমবারই আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়৷ গত বছর সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ বিএনপি জোটের ১৪৭ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সোমবার অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা মহানগর দ্রুত বিচার আদালতের হাকিম তারেক মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া৷ পল্টন থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয় গত বছরের ১১ই মার্চ৷
ঐ দিন নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জোটের সমাবেশে ভাঙচুর এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে৷ ঐ ঘটনায় পল্টন থানায় দুটি মামলা হয়৷ এর মধ্যে ভাঙচুর, বোমাবাজি ও ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলাটির বিচার শুরু হলো সোমবার৷ গত বছরের ২৪শে মার্চ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পত্র দেয় পুলিশ৷ কিন্তু অভিযোগ গঠনে ওমর ফারুক নামে একজনের এরই মধ্যে মৃত্যু হওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত৷
আসামিদের মধ্যে রিজভী, ফারুক, আমান, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাজাহান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধাসহ ৯৯ জন সোমবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সুবিচার প্রার্থনা করেন৷ আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে৷
আসামিদের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘পল্টন থানার এই মামলাটির কোনো ভিত্তি নেই৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলাটি দায়ের করা হয় বিরোধী নেতা-কর্মীদের হয়ারানি করতে৷ আর বিএনপি জোট সামনে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেয়ায় মামলাটি আবার চাঙ্গা করা হলো৷''
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
তিনি মনে করেন, ‘‘ন্যায় বিচার হলে এই মামলার আসামিরা খালাস পাবেন৷ কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই৷''
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেছেন, ‘‘আইন তাঁর নিজস্ব গতিতে চলছে৷ রাজনৈতিক কারণে কাউকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি৷'' তিনি বলেন, মামলায় আদালতেই প্রমাণ হবে কে দোষী আর কে নির্দোষ৷