বিএনপি প্রচারণায় পিছিয়ে, দুষছে সরকার ও কমিশনকে
২৫ ডিসেম্বর ২০১৮সারা দেশে নির্বাচনের উত্তাপ৷ সেই উত্তাপ টের পাচ্ছেন উবার চালক সাইফুল ইসলামও৷ কাজের তাগিদেই ঘুরতে হয় সারা ঢাকায়৷ তাই কোথায় কেমন প্রচারণা চলছে সবটাই চোখে পড়ে তাঁর৷ নতুন সরকারের কাছে অনেকগুলো দাবির মধ্যে যানজট নিরসন একটি বড় দাবি তাঁর৷
কথায় কথায় ডয়চে ভেলে প্রতিবেদককে জানালেন, পুরো ঢাকাতেই এবার প্রচারণায় অনেক এগিয়ে নৌকা মার্কা৷
‘‘আমি তো সারা ঢাকা শহরই ঘুরি৷ নৌকার প্রচারটাই বেশি,'' বলেন তিনি৷ বললেন, ধানের শীষের প্রচারণা তুলনামূলক কম৷
প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার জন্য দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসন ও সরকারকে দায়ী করে নির্বাচন কমিশনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা৷
প্রায় দেড়টা পর্যন্ত আলোচনার পর এক পর্যায়ে বৈঠক ত্যাগ করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা৷ তাঁদের অভিযোগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার গুরুত্ব দেননি৷ বরং ক্ষিপ্ত হয়ে গেছেন৷
নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে সরকার ও কমিশন: ফখরুল
বৈঠক শেষে সরাসরি বেরিয়ে যান ড. কামাল হোসেন৷ তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি৷ কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের বৈঠকের ব্যাপারে ব্রিফ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷
তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশে ভয়াবহ তাণ্ডব চলছে৷ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে৷ এ বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম৷''
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘গতকাল থেকে সারাদেশের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে৷ বিরোধী দলের প্রার্থীদের আক্রমণ, আটক করা, ব্যানার পোস্টার গাড়ি ভেঙে দেয়া এসব চলছে৷ সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনকে যখন জানিয়েছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে সেই ধরনের কোনো আচরণ পাইনি যে, তিনি এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন৷''
সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে বানচাল করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচন এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে৷''
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘একপক্ষ' হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ তবে নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যাবেন না বলেও জানান তিনি৷ মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘‘ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবো না৷''
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান৷ টিকাটুলিতে একটি ইভিএম কেন্দ্র পরিদর্শনের পর তিনি শুধু এটুকুই বলেন, ‘‘নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে৷''
কোনো প্রার্থীকেই বাধা দেয়া হচ্ছে না: কামাল
পুলিশের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে৷ তিনি ঢাকা ১২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী৷ তাঁর এলাকাতেও প্রচারে যথেষ্ট এগিয়ে আছেন তিনি৷
‘‘তাঁদের অনেক নেতাই ২০১৪ সাল থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে অনেক অপরাধ করেছেন, নাশকতা করেছেন,'' ডয়চে ভেলেসহ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন তিনি৷
‘‘অনেকের ওয়ারেন্ট আছে৷ সেসব ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামীরা অনেকেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন৷ অনেকেই প্রার্থী না হলেও প্রচারণায় নেমেছেন৷ পুলিশ তো তাঁদের নিয়মমতো আসামিদের ধরবেই৷''
তাঁর আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সাইফুল আলমও একই কারণে প্রচারণা করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন কামাল৷
‘‘আমি যে এলাকায়, সেই এলাকায় যিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেও শুনেছি অনেক ওয়ারেন্ট আছে৷ তিনিও তাই আসতে পারছেন না৷''
কোনো প্রার্থীকেই বাধা দেয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেন কামাল৷
‘‘এখানেও দেখুন কাউকেই বাধা দেয়া হচ্ছে না৷ ঐ যে দেখেন, জোনায়েদ সাকির পোস্টারে ছেয়ে গেছে৷ আম মার্কায় পোস্টার ছেয়ে গেছে৷''
সহিংসতা যা হচ্ছে, তা সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
‘‘আমাদের দু' জনকে খুন করেছে৷ আমাদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে৷ অফিসে বোমা মারা হয়েছে৷ নির্বাচন এলে এমন একটু-আধটু হবেই৷ আমি বলবো, এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে৷''