বিএমডাব্লিউ ক্লাসিক ওয়ার্ল্ড সেন্টারে নামি-দামি বিএমডাব্লিউ গাড়িই থাকে, তবে ভিনটেজ কার বা ওল্ডটাইমার৷ সেন্টার থেকেই খোঁজখবর করে, সংগ্রহ করে আনা হয় এই সব পুরনো গাড়ি৷ গ্রাহকরাও আনেন তাদের নিজেদের ওল্ডটাইমার৷
বিজ্ঞাপন
বিএমডাব্লিউ ক্লাসিক ওয়ার্ল্ড কেন্দ্রে যে শুধু ভিনটেজ কার কিনতে পাওয়া যায়, এমন নয়, লিজ-ও করতে পারা যায়৷ ক্লাউস কুটশার গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সারা পৃথিবী থেকে পুরনো মডেল জোগাড় করছেন বিএমডাব্লিউ-র এই কলেকশানটির জন্য৷ যেমন একটি বিএমডাব্লিউ ৫০৭ মডেলের গাড়ি৷ এটিকে পাওয়া গেছিল মার্কিন মুলুকের একটি খামারে; এককালে খোদ এলভিস প্রেসলি-র সম্পত্তি ছিল, এখন সেটাকে আবার সারানো হচ্ছে ঠিক আদত গাড়িটির মতো করে৷ কুটশার বলেন, ‘‘গাড়িটাতে অনেক কিছু বদলানো হয়েছে৷ সিটগুলো আগে লেপ-তোষকের মতো চৌকো চৌকো করে সেলাই করা ছিল, সত্তর দশকের কায়দায়৷ নয়ত গাড়ির ভেতরটা আর যান্ত্রিক অংশগুলোকে বিএমডাব্লিউ ৫০৭ বলে চেনার কোনো উপায় ছিল না৷''
বায়রিশে মোটোরেন ভ্যায়ার্কে, অর্থাৎ বাভেরিয়ান মোটর ওয়ার্কস, আদ্যক্ষর মিলিয়ে বিএমডাব্লিউ৷ একশ' বছর আগে প্রথম কারখানাটি যেখানে ছিল, সেখানেই আজ বিএমডাব্লিউ ক্ল্যাসিক ওয়ার্ল্ড৷ সেই কারখানায় কিন্তু তখন এরোপ্লেনের ইঞ্জিন তৈরি করা হতো৷
বিএমডাব্লিউ জায়গাটা আবার কিনে নেয় কয়েক বছর আগে৷ স্মৃতিসৌধ সুরক্ষা অনুশাসন বিধি অনুযায়ী তার রদবদল করা চলবে না৷
বিএমডাব্লিউ গাড়ির ১০০ বছর
একশ বছর হয়ে গেল বিএমডাব্লিউ-র৷ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি দিয়ে শুরু হলেও জার্মান এই কম্পানি সারা বিশ্বে এখন গাড়ির জন্যই বিখ্যাত৷ চলুন জেনে নেয়া যাক বিএমডাব্লিউ-র সংগ্রাম এবং সাফল্যের একশ বছরের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
সেই প্রতীক
সাদা-নীলের এই লোগো বিএমডাব্লিউ-এর ১০০ বছর আগের সেই যাত্রা শুরুর সময়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়৷ ১৯১৬ সালের ৭ মার্চ বিমানের ইঞ্চিন তৈরির কারখানা হিসেবে যাত্রা শুরুর সময়ে এর নাম ছিল বায়ারিশে ফ্লুগসয়েগভ্যার্কে (বাভারিয়ান এয়ারপ্লেন ওয়ার্কার্স)৷ পরে গাড়ি তৈরি শুরু করায় নাম ‘বায়ারিশে মোটরভ্যার্কে’ হলেও লোগো আর বদলায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
প্রথম মোটর বাইক
১৯২৩ সালে প্রথমবারের মতো মোটর বাইক তৈরি করে বিএমডাব্লিউ৷ আর-৩২ মডেলের প্রথম মোটরবাইকটি ছিল এরকম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BMW AG
যেভাবে গাড়ি তৈরি শুরু
১৯২৮ সারে আইজেনাখে একটি গাড়ি তৈরির কারখানা কিনে নেয় বিএমডাব্লিউ৷ সেখানেই নতুন করে শুরু হয় গাড়ি তৈরি৷ চার বছরেই মধ্যেই বাজারে এসে যায় বিএমডাব্লিউ-র এ ধরণের গাড়ি৷
ছবি: Imago/S. Geisler
শাপমোচন?
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান বিমান বাহিনীর বিমানের ইঞ্জিনই তৈরি করেছে বিএমডাব্লিউ৷ তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুদ্ধে ভূমিকা রাখার কলঙ্ক মোচনের জন্যও কাজ করেছে জার্মান এই শিল্প প্রতিষ্ঠান৷ যুদ্ধের কারণে বেকার হওয়া ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্তানের ব্যবস্থা করেছে তারা৷
ছবি: Imago/Lindenthaler
ফতুর হতে হতে রক্ষা
গাড়ি তৈরি করতে গিয়ে অনেক বছর বড় রকমের ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে বিএমডাব্লিউকে৷ ১৯৫৯ সালের দিকে তো দেউলিয়া হওয়ার দশা হয়েছিল৷ শিল্পপতি হ্যারব্যার্ট কুয়ান্ড্ট দায়িত্ব না নিলে হয়ত হারিয়েই যতো বিএমডাব্লিউ৷ ছবিতে হ্যারব্যার্ট কুয়ান্ড্টের স্ত্রী এবং দুই সন্তান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
নতুন সূচনা
১৯৬১ সালে নতুন ধরণের মডেল বিএমডাব্লিউ ১৫০০ নিয়ে এসে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে বিএমডাব্লিউ৷ এরপর একে একে এসেছে ১৬০০, ১৮০০ এবং ২০০০ মডেল৷ এতে করে শুরু হয়ে যায় বিএমডাব্লিউ-র সাফল্যের নতুন পর্ব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তিন-এর মাহাত্ম্য
১৯৭৫ সালে বিএমডাব্লিউ বাজারে ছাড়ে ‘থ্রি সিরিজ’৷ ছয় বছরের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় দশ লাখ গাড়ি৷ ২০১৮ নাগাদ আসবে বিএমডাব্লিউ-র সপ্তম প্রজন্মের গাড়ি৷ আকাশ ছোঁয়া সাফল্য তখন আর কত উঁচুতে গিয়ে পৌঁছাবে কে জানে!
ছবি: Imago/Kicker
মিউনিখে প্রধান কার্যালয়
১৯৭৩ সাল থেকে বিএমডাব্লিউ-র প্রধান কার্যালয় জার্মানির মিউনিখ শহরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Sambraus
মিনি
১৯৯৪ সালে ব্রিটেনের রোভার গ্রুপও কিনে নেয় বিএমডাব্লিউ৷ ২০০৩ সাল থেকে নিজেদের কারখানায় রোল রয়েসও অ্যাসেম্বল করছে তারা৷
মানফ্রেড গুন্যার্ট বিএমডাব্লিউ ক্লাসিক ওয়ার্ল্ড সেন্টারের পরিকল্পনা ও স্থাপত্যের জন্য দায়ী৷ সেন্টারটি থেকে কোম্পানির ইমেজ-এর যে উন্নতি হয়েছে, তাতেই বিনিয়োগ সার্থক হয়েছে বলে তাঁর ধারণা৷ গুন্যার্ট বলেন, ‘‘একশ' বছর পুরনো হওয়াটাই তো একটা কৃতিত্ব৷ তার তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য ঐতিহ্যটাকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন৷ এভাবে অন্যদের থেকে নিজের পার্থক্যটা স্পষ্ট করে দেওয়া যায়৷ ইতিহাস নকল করার কোনো উপায় নেই৷''
বাভেরিয়ার প্রিন্স লেওপল্ড-এর মতো অনেক ভিনটেজ কার অনুরাগী বিএমডাব্লিউ কোম্পানির ১০০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে লাভবান হয়েছেন৷ ক্লাউস কুটশার প্রিন্স লেওপল্ড-এর গাড়ির চ্যাসিস নাম্বারটা আর্কাইভের ডকুমেন্টেশনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে নিয়েছিলেন, বিএমডাব্লিউ গাড়িটি কবে, কোথায় ও কি ধরনের স্পেসিফিকেশন ও ফিচার ইত্যাদি নিয়ে তৈরি হয়েছিল৷
প্রিন্স লিওপোল্ডের মতে, ‘‘বিএমডাব্লিউ ক্লাসিকের অন্য সবার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা আছে৷ আপনি যখন আপনার গাড়ি ফেরৎ পাবেন, তখন সেটা নিশ্চয় করে চলবে৷ এরকম একটা পুরনো গাড়ি চালানো বেশ সমস্যাকর৷ মোটরওয়েতে নেওয়া যায় না, গাঁয়ের দিকের রাস্তায় চালাতে হয়৷ তবুও ড্রাইভটা উপভোগ করা যায়, লোকজন হাত নাড়ে৷''
বাভারিয়াকে ভালোবাসার দশটি কারণ
বাভারিয়া হচ্ছে জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট৷ প্রতি বছর সাড়ে সাত মিলিয়ন বিদেশি অতিথি বাভারিয়া ভ্রমণ করেন৷ টুরিস্টদের কাছে জার্মানির এই রাজ্যটির জনপ্রিয়তার দশটি কারণ পাবেন এখানে:
ছবি: picture-alliance/dpa
নয়শোয়ানস্টাইন দুর্গ
বাভারিয়ার এই রোমান স্থাপত্যশিল্পটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ৷ প্রতিবছর ১৪ লাখের মতো মানুষ দুর্গটি দেখতে যান৷ ১৮৬৯ সালে এটি তৈরি করেন রাজা দ্বিতীয় লুডভিশ৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber
অক্টোবরফেস্ট
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিয়ার উৎসব অক্টোবরফেস্ট৷ প্রায় ষাট লাখের মতো মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন৷ এখন অবশ্য শুধু বাভারিয়া নয়, গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে গেছে অক্টোবরফেস্ট৷ ১৮১০ সালে মিউনিখে এই উৎসবের শুরু হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Felix Hörhager
এশীয়দের প্রিয়
ফ্রাঙ্কোনিয়া অঞ্চলের ছোট শহর রোটেনবুর্গ এশিয়ানদের কাছে বেশ প্রিয়৷ শহরটিতে এখনো কাঠের ঘরবাড়ি রয়েছে৷ একসময় যুদ্ধের কারণে দীর্ঘ সময় এই অঞ্চলের তেমন কোন উন্নতি হয়নি৷ আর এখন সেই পুরনো বাড়িঘরই সম্পদে পরিণত হয়েছে৷ কেননা পর্যটকরা এলাকাটিতে বেশ রোমান্টিক মনে করেন৷
ছবি: Fotolia/World travel images
মিউনিখ – বাভারিয়ার রাজধানী
বাভারিয়া রাজ্যের রাজধানী মিউনিখ জার্মানির অন্যতম সুন্দর মহানগরী৷ এখানে থাকা বিভিন্ন প্রাসাদ, পার্ক এবং মিউজিয়াম পর্যটকদের আকৃষ্ট করে৷
ছবি: Fotolia/sborisov
বায়ার্ন মিউনিখ ফুটবল ক্লাব
জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় সম্ভবত বায়ার্ন মিউনিখ ফুটবল ক্লাব৷ এমনকি বাংলাদেশ, ভারতেও এই ক্লাবের অনেক ভক্ত রয়েছেন৷ মিউনিখে বায়ার্নের খেলাগুলো হয় ‘আলিয়ানৎস আরেনা’ স্টেডিয়ামে৷
ছবি: imago/Imagebroker
‘সুগস্পিৎসে’
জার্মানির সবচেয়ে উঁচু চূড়া বাভারিয়ার অবস্থিত৷ বাভারিয়ান আল্পসের এই চূড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৯৬৩ মিটার উপরে৷ তবে সেখানে যেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়না৷ দুটো কেবেল কার এবং ‘ট্র্যাক রেল’ রয়েছে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে৷
ছবি: DW
কিং-স লেক
বাভারিয়ার দু’শো লেকের রাজা হচ্ছে এই লেক৷ লেকের পানি একেবারেই স্বচ্ছ৷ সেখানে গেলে মনে হতে পারে বুঝি রূপকথার কোন এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছেন৷ পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রনিক বোটে করে লেক পেরিয়ে বিখ্যাত এক গির্জায়ও যাওয়া যায়৷
ছবি: Fotolia/AndreasEdelmann
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য
বাভারিয়ার সাতটি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে বায়রয়েট-এর মার্গ্রেভাইন অপেরা হাউস৷ ১৭৪০ সালের দিকে তৈরি এই অপেরা হাউসটি ইউরোপে সবচেয়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত বারক থিয়েটার৷
ছবি: dapd
ন্যুরেমবার্গের ক্রিস্টকিন্ডেলসমার্কট
বাভারিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ন্যুরেমবার্গ৷ অন্তত বিশ লাখ মানুষ ডিসেম্বরে শহরটির ক্রিসমাস মার্কেট দেখতে যান৷ বিশ্বের অন্যতম পুরাতন মার্কেট এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Daniel Karmann
বাভারিয়ার আতিথেয়তা
বাভারিয়ার রয়েছে ৮০০ বিয়ার গার্ডেন, ৬০০ বিয়ার উৎপাদক এবং চার হাজার পানশালা৷ বিয়ারের রাজ্য বলা যায় বাভারিয়াকে৷ তবে সেখানকার ‘ব্রোটসাইট’ বা ‘ব্রেড টাইম’ খাবারও বেশ জনপ্রিয়৷