নিহত ব্যক্তির নাম কামাল হোসেন৷ তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার কুড়িয়াপাড়া গ্রামের ইদু মিয়ার ছেলে৷
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ১০ ব্যাটালিয়ন কুমিল্লার কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইফতেখার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে পত্রিকাটা লিখেছে, সোমবার সন্ধ্যায় পাহাড়পুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন কামাল৷ বিএসএফের গুলিতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন৷ পরে বিএসএফ তার মরদেহ নিয়ে যায়৷
জেডএ/এসিবি
সীমান্ত হত্যা: সাত বছরে বিএসএফ-এর হাতে নিহত দুই শতাধিক বাংলাদেশি
বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলি থামছে না৷ বন্ধ হচ্ছে না প্রাণহানি৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে সাত বছরে সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছে ২০১ জন বাংলাদেশি৷
ছবি: Dipa Chakraborty/NurPhoto/picture alliance
২০২৩
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে ২০২৩ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ হাতে মারা গেছেন ৩০ বাংলাদেশি এর মধ্যে চুয়াডাঙা, পঞ্চগড়ে পাঁচজন করে, ঠাকুরগাঁওয়ে চার, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাগঞ্জ, রাজশাহী সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন করে বাংলাদেশি৷ মারা গেছেন সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার সীমান্তেও৷ প্রাণহানি ছাড়াও ৩১ জন মারাত্মক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে আসক৷
২০২২ সালে বিএসএফ-এর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ বাংলাদেশি৷ এর মধ্যে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়, বাকিরা শারীরিক নির্যাতনে মারা যান বলে উল্লেখ করেছে আসক৷
ছবি: Ankita Mukhopadhyay/DW
২০২১
এই বছরটিতে ১৭ জন বাংলাদেশি বিএসএফ-এর গুলি ও নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন৷ এর মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ১৬জনকে আর শারীরিক নির্যাতনে মারা যান একজন৷ আরেকজন বিএসএফ-এর ধাওয়া খেয়ে নিহত হন৷ এছাড়া ২০২১ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তিন বাংলাদেশিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলেও জানিয়েছে আসক৷
ছবি: Dipa Chakraborty/NurPhoto/picture alliance
২০২০
২০২০ সালে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ৷ আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে বছর ৪৯ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ৪২ জন বিএসএফ-এর গুলিতে ও সাতজন শারীরিক নির্যাতনে মারা যান৷
ছবি: Dipa Chakraborty/NurPhoto/picture alliance
২০১৯
২০১৯ সালে ভারত সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারান৷ তাদের মধ্যে ৩৭ জন বিএসএফ-এর গুলিতে এবং ছয় জন নির্যাতনে মারা যান৷ এছাড়াও বিএসএফ-এর নির্যাতনে আহত হন ৪৮ জন ও অপহৃত হন ৩৪ জন৷
সেই সাত বছরের মধ্যে বিএসএফ-এর গুলিতে অপেক্ষাকৃত কম বাংলাদেশির মৃত্যু হয় ২০১৮ সালে৷ সে বছর ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে সীমান্তে৷ এর মধ্যে আট জন গুলিতে ও ছয় জন প্রাণ হারিয়েছেন নির্যাতনে৷
ছবি: Channi Anand/AP Photo/picture alliance
২০১৭
২০১৭ সালে মারা যান ২৪ জন৷ ১৮ জনকে গুলি করে হত্যা ও ছয়জনকে শারীরিক নির্যাতনে মারা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আসক৷
ছবি: AFP
১০ বছরে ২৯৪
২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদকে জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন৷ বছরওয়ারি হিসাবে ২০০৯ সালে ৬৬ জন, ২০১০ সালে ৫৫, ২০১১ সালে ২৪, ২০১২ সালে ২৪, ২০১৩ সালে ১৮, ২০১৪ সালে ২৪, ২০১৫ সালে ৩৮, ২০১৬ সালে ২৫, ২০১৭ সালে ১৭ এবং ২০১৮ সালে তিনজন বিএসএফের হাতে প্রাণ হারান৷
ছবি: DW
মারা যাচ্ছেন ভারতীয়ও
ভারতের মানবাধিকার সংস্থা ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’ (মাসুম) জানিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তারা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ-এর হাতে নিহত অন্তত ১০৫টি হত্যার তদন্ত করেছে৷ প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করে মাসুম৷
ছবি: Atiar Rahman
বাংলাদেশের উদ্বেগ
২০২০ সালে ঢাকায় দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সে বছরের প্রথমার্ধে ঘটা সীমান্ত হত্যায় উদ্বেগ জানান৷ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ এর বাইরে প্রতিবছর বিএসএফ-বিজিবির বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি তুলে থাকে বাংলাদেশ৷
ছবি: Saytajit Shaw/DW
ভারতের প্রতিশ্রুতি
বিএসএফ, ভারতের কূটনীতিক ও নীতিনির্ধারকিরা বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ ২০২১ সালে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার বলেন, ‘‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে যদি তাদের ওপর হামলার কোনো শঙ্কা না থাকে তবে যেন সীমান্তে কোনো অবস্থাতেই গুলি না চালায়৷’’ ২০২২ সালে দিল্লিতে হাসিনা-মোদীর শীর্ষ বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতেও ‘সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে’ আনার কথা বলা হয়৷
ছবি: Naveen Sharma/ZUMA/IMAGO
বিচার হয় না
এত মৃত্যুর পরও বিএসএফ-এর কোনো সদস্যের বিচারের তথ্য জানা যায় না৷ ২০২১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, তারা এমন কোনো মামলার কথা জানে না ‘‘যেখানে ভারত বিএসএফ সৈন্যদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে করা নির্যাতনের জন্য দায়বদ্ধ করেছে৷ এর মধ্যে জানুয়ারি ২০১১ সালে বিএসএফ গুলি করার পরে সীমান্তে তারের বেড়াতে আটকা পড়ে থাকা বাংলাদেশি ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনের বহুল প্রচারিত মামলা রয়েছে৷’’