বিএসএফ বাংলাদেশে এসে ‘বাহাদুরি’ করেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯ অক্টোবর ২০১৯
গত বৃহস্পতিবার বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্তে প্রবেশ করে ‘বাহাদুরি' দেখিয়েছে৷ এতে বিজিবি বাধ্য হয়েই গুলি করেছে বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলি এবং এক বিএসএফ সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো যেসব তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷ এই ঘটনার জন্য তিনি বিএসএফকেই দায় দিয়েছেন৷
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১ টায় জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, ‘‘তারাই (বিএসএফ) আমাদের এখানে এসেছে এবং এসে তারা বাহাদুরিও করেছে৷ আমাদের ছেলেদের (বিজিবি) তাদের লাস্ট জব হিসেবে বাধ্য হয়ে গুলি করতে হয়েছে৷''
এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা ওয়ান ইনসিডেন্ট (একটা ঘটনা)৷ একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন ঘটেছে৷''
গত দশ বছরে ৩০০ এর বেশি বাংলাদেশী মারা গেছে বিএসএফের গুলিতে এমন তথ্যের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী বলেন, আগে বিএসএফ বছরে অনেকজনকে মেরে ফেলত আমরা তখন কেবল দু:খ করেছি৷ কিন্তু গতবছর মাত্র তিনজনকে মেরে ফেলেছে৷ একজনের মৃত্যুও অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগে কখনও মামলা করিনি৷ ভারত এখন নতুন করে করেছে৷ কোনো ‘পন্ডিতও’ আমাদেরকে আগে মামলা করার কথা বলেননি৷ আগামীতে বাংলাদেশও এই পথে হাঁটতে পারে বলে জানান তিনি৷
ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফর, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি, রোহিঙ্গা ইস্যু ও প্রবাসী প্রসঙ্গেও৷
ভারত বাংলাদেশ যত চুক্তি
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পেয়েছে অন্য এক মাত্রা৷ দুই দেশের সরকারের মধ্যে বেড়েছে পারস্পরিক যোগাযোগ, হয়েছে নানা চুক্তি, আর একে অপরকে দিয়েছে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশের’ মর্যাদা৷
ছবি: AFP/P. Singh
১০০ কোটি ডলার ঋণ ও ১৪ প্রকল্প
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার একবছর পর ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ভারত সফরে যান৷ সেসময় ১০০ কোটি ডলারের এলওসি বা ঋণরেখা অনুমোদন করে ভারত৷ এই অর্থে জনপরিবহন, সড়ক, রেলপথ সেতু আর অভ্যন্তরীন নৌপথের ১৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হয়৷
ছবি: Getty Images/G. Crouch
বন্দী বিনিময়
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি হয়৷ ২০১১ সালের ১৩ই জানুয়ারি তা কার্যকর হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশের নাগরিক অন্য দেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকে অনুরোধক্রমে ফেরত পাঠাতে পারবে৷ তবে এর আগেই অনুপ চেটিয়াসহ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি নেতাদের গ্রেপ্তার করে দেশটিতে পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমে খবর বেরোয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barreto
ছিটমহল বিনিময়
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হয়৷ যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের জুলাইতে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময় হয়৷ ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সাথে৷ একইভাবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও হয়ে যায় ভারতের অংশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
নদীর পানি বন্টন
বাংলাদেশের ভারতের অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪ টি৷ এর মধ্যে শুধু গঙ্গা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি আছে৷ যদিও পানি বন্টনের ক্ষেত্রে এই চুক্তি ভারত মানছে না বলে অভিযোগ আছে৷ অন্যদিকে পাঁচ দশক ধরে তিস্তা চুক্তির চেষ্টা চললেও তা সম্ভব হচ্ছে না দেশটির উদাসীনতার কারণে৷ যার ফলে এখন একতরফাভাবে নদীটির পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
ভারসাম্যহীন বাণিজ্য
১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷ ২০১৫ সালে স্বাক্ষর হয় এ বিষয়ে নতুন চুক্তি৷ এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত হাটসহ আরো কিছু বাণিজ্য সম্পর্কিত চুক্তি হয়েছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের আকার ছিল ৯১৪ কোটি ডলার৷ যার সিংগভাগই ভারতের অনুকূলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
উন্নয়ন সহযোগিতার কাঠামো
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে একটি উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ যার মধ্যে আছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ; বিদ্যুৎ; শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ইত্যাদি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.U. Zaman
দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এই চুক্তি সম্পর্কে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক দেশ অন্য দেশের ভূখণ্ড থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রক্ষার লক্ষ্যে এ চুক্তি হয়েছে৷ ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরকে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশ’-এর মর্যাদা দিয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
বাংলাদেশ ভারতের পণ্য পরিবহন
দুই দেশের মধ্যে হওয়া বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী এক দেশ আরেক দেশের জল, স্থল ও রেলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা নিতে পারে৷ ২০১৬ সালে মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে বহুমাত্রিক ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ৷ সড়কপথে ট্রানজিট দিতে ২০১৫ সালে আখাউড়া অগরতলা সীমান্ত দিয়ে পরীক্ষামূলক চালান পাঠানো হয়৷ যা পরবর্তীতে নিয়মিত হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারতের রেল যাবে বাংলাদেশ হয়ে
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুড়ি যাবে৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এ বিষয়ক একটি চুক্তি হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী এজন্য দুই দেশকে তাদের অংশের রেলপথ নির্মাণ করতে হবে৷ বাংলাদেশ অংশের সাত কিলোমিটার রেলপথ আগামী বছরে জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা৷
ছবি: DW/P. Mani
সাবরুমের মানুষে জন্য ফেনীর পানি
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সাতটি সমঝোতা সই ও চুক্তি হয়েছে৷ একটি সমঝোতার আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত৷ ওই পানি তারা ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে৷
ছবি: AFP/P. Singh
বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত আটটি রুটে তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোদে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে৷ এজন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা পদ্ধতি কী হবে, তা নির্ধারণে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে৷
ছবি: DW/U. Danisman
চুক্তি থাকলেও হত্যা থেমে নেই
সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে ২০১১ সালে বিজিবি-বিএসএফ একটি চুক্তি করে৷ নেয়া হয় সীমান্ত পারাপারে অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত৷ তবে সীমান্তে দেশটির আচরণে তার প্রতিফলন নেই৷ গত ১০ বছরে ২৯৪ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
12 ছবি1 | 12
ভারতকে বাংলাদেশ দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছে
প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের উষ্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার করা৷ এবং তা অর্জন হয়েছে৷ মোমেন বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক আমরা আবার দাড় করিয়েছি৷ উনিও নতুন ভাবে জয়লাভ করেছেন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীও জয়লাভ করেছেন, (এরপর) এটা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর৷ বিভিন্ন ধরণের সমঝোতা হয়েছে৷ এগুলো হবে তা আমরা আশা করেছি কিন্তু আসল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে টু ডেভেলাপ দিস ওয়ার্ম রিলেশনশিপ৷’’
ভারত এবং বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু দিয়েই যাচ্ছে কীনা এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু ডাহা মিথ্যাই না, অনেকে নানা কথা বানিয়ে যাচ্ছেন যারা বিষয়টি পছন্দ করছে না৷ ‘‘আমরা দিয়েছি কিছু এবং সেই সাথে পেয়েছিও কিছু,’’ বলেন তিনি৷ সম্পর্কের স্থিতিশীলতাই বড় পাওনা বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই বড় অর্জন৷
মন্ত্রী বলেন, বাহবা দেখানোর জন্য একসময় গঙ্গার ইস্যু আমরা জাতিসংঘে নিয়ে গেলাম৷ সাতাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত ভারত এ নিয়ে এক পয়সার দামও দেয়নি বাংলাদেশকে৷
ফেনী নদীর পানি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৪ টি অভিন্ন নদী আছে৷ এর মধ্যে বড় নদী সাতটি৷ তিস্তা নদীর বিষয় ভারত স্বীকার করেছে বন্টন হবে৷ কিছু সমস্যা থাকায় তারা ২০১১ সালের সেই ওয়াদা রাখতে পারেনি৷ ফেনীতে যে পানি দেয়া হচ্ছে তা খুবই সামান্য৷ ১২৬ কিউসেকের মধ্যে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক ১ ভাগেরও কম৷ মানবিকতার জন্যই বাংলাদেশ এই পানি দিচ্ছে৷ ‘‘তারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পাম্প নিয়ে পানি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল৷ এমনকি অধিক পানি নিয়ে যাচ্ছিল৷ এখন একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে৷ (যার কারণে) তারা দায়বদ্ধ হয়েছে৷ তারা কিন্তু এখন ১ দশমিক ৮২ কিউসেকের বেশি নিতে পারবে না৷’’ এর মাধ্যমে ভারতকে বাংলাদেশ একটি দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়ায় ট্রানজিট প্রস্তাবে সায় দেয়নি বাংলাদেশ, বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইলিশ রপ্তানি৷ প্রধানমন্ত্রী সেই কূটনৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসেছেন কীনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাউকে খুশি করার জন্য কিছু করেন না৷ ইলিশের পরিমান অনেক বেড়ে গেছে সেইজন্যই দুর্গাপূজার সময় ভারতে ইলিশ পাঠানো হয়েছে৷
আসামে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে
02:02
আসামের নাগরিকপঞ্জির প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না
ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি তৈরি নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের প্রক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সফরে বিষয়টি তুলে ধরেছেন৷ ‘‘আমরা বলেছি, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি৷ আমরা আর নতুন উদ্বাস্তু চাই না৷ তারা বলেছে যেগুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো একান্ত আমাদের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়৷ এটা নিয়ে আপনাদের কোনো ধরণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই৷ এটার প্রভাব আপনাদের উপর পড়বে না৷ আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই৷’’
১৯৮৫ সালে ভারত সরকার এই নাগরিকত্ব যাচাই বাছাইর সিদ্ধান্ত নেয়৷ তখন যারা সরকারে ছিল তারা এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
রাডার স্থাপন বিষয়ে কিছু নির্ধারণ হয়নি
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে৷ যার অধীনে ভারত বাংলাদেশের উপকূলে যৌথভাবে রাডার স্থাপন করতে পারবে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে৷ এর ফলে চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হবে কীনা এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চীন থেকে সাবমেরিন কিনেছিলাম৷ তখন ভারত যদি সাবমেরিন দিত আমরা ভারত থেকেও কিনতাম৷ ভারত তখন সাবমেরিন দিতে পারেনি, আমরা তাই চীন থেকে কিনেছি৷’’
রাডারের যে সমঝোতা হয়েছে তার ভিত্তিতে কী করা হবে সে বিষয় এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ‘‘একটি প্রিন্সিপাল আমরা গ্রহণ করেছি যে, আমাদের অংশগুলো (সমুদ্রসীমা) আমরা দেখভাল করব৷ প্রতিবেশী ভারতের সাথেও জায়গাগুলোর সম্পৃক্ততা আছে সমুদ্রের৷ একসাথে যৌথভাবে আমরা জায়গাগুলো দেখভালের জন্যেই এই সমঝোতা৷ কীভাবে সেটা পরে বিশেষজ্ঞরা ঠিক করবেন,’’ বলেন তিনি৷
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ৷ তবে দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হওয়ায় তা রোহিঙ্গাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/A. Islam
মূল ভূখন্ড থেকে দূরে
বিশ বছরেরও কম সময় আগে ভাসান চর জেগে উঠেছিল৷ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/A. Islam
যাওয়া সহজ নয়
ভাসান চরে যেতে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো বাহন নেই৷ ঐ দ্বীপের কয়েকজন দোকানি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্ষার সময় সাগর উত্তাল থাকায় সাধারণ মাছ ধরার নৌকায় করে ভাসান চরে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
তিন মিটার উঁচু বাঁধ
উঁচু ঢেউ ও বন্যার হাত থেকে ভাসান চরকে বাঁচাতে সরকার ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে৷ এক দোকানি জানালেন, মাসে দু’বার বাঁধের বাইরের দিকে থাকা বাজার এক মিটার পর্যন্ত ডুবে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
একইরকম ভবন
রোহিঙ্গাদের জন্য ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি ভবনে ১৬টি ঘর রয়েছে৷ ১২x১৪ ফুটের একেকটি ঘরে একটি পরিবারের অন্তত চার জন সদস্যকে থাকতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
সৌরশক্তি
ভবনগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সেগুলোতে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য দুটি ডিজেল জেনারেটর ও বিশাল এক মাঠে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ খাবার পানির জন্য রয়েছে নলকূপ৷ আরও আছে বৃষ্টির পানি থেকে খাবার পানি পাওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/A. Islam
ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে ২০০২ সালে প্রথম এই দ্বীপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ এরপর কয়েকবার এটি স্থান পরিবর্তন করেছে৷ ভূমিক্ষয় ঠেকাতে সরকার চরটিতে তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
দ্বীপটি কি বাসযোগ্য?
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বীপটি এখনও বসবাসের উপযোগী নয়৷ তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করছেন, বাঁধের উচ্চতা যদি সাড়ে ছয় থেকে সাত মিটার করা যায় তাহলে দ্বীপটি বসবাসযোগ্য হতে পারে৷ তবে ভাসান চরে ফসল ফলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গাদের ভয়
কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা মারা যেতে পারেন৷ তবে প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘‘চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য এক স্বর্গ৷’’
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গারা কি ভাসান চরে যাবেন?
কয়েকটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে, নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ তবে রোহিঙ্গারা সেখানে না গেলে গৃহহীন বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷
ছবি: DW/A. Islam
9 ছবি1 | 9
‘রোহিঙ্গাদের কোথায় নিব তা আমাদের এখতিয়ার’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের ভূমিকায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ বিষয়টি পুনর্ব্যাক্ত করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে যা করছে সেটি ভাল৷ কিন্তু তারা যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করছে না৷ যেখানে সমস্যা সেই রাখাইন প্রদেশে তাদের যাওয়া উচিৎ৷ সেখানে যাতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয় তাতে জোর দেয়া উচিৎ৷
মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের উপর (জাতিসংঘ) মাতব্বরি করার কোনো কারণ নাই৷ আমরা ওদের (রোহিঙ্গা) কোথায় নিয়ে যাব কী না যাব সেটা আমাদের এখতিয়ার, তাদের না৷ আমি তাদের (জাতিসংঘ) দেশ ছাড়ার জন্য বলিনি৷ আমি বলেছি আপনারা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারে গিয়ে বরং বেশি কাজ করেন৷ যাতে রোহিঙ্গারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারে৷ ...আমাদের অনেক উপদেশ দিয়েছেন৷ আমরা জানি আমরা কী করছি৷ আপনাদের উপদেশ আমরা চাই না৷’’
কিছু এনজিও যারা রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক মনোভাব প্রচার, জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি ও অস্ত্র দিচ্ছে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
রোহিঙ্গাদের সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এর ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে৷ নেতৃত্ব তৈরি হওয়া খারাপ না৷
বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাথে জার্মানির বরাবরই ভালো সম্পর্ক রয়েছে৷ চলতি সফরে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করেছেন৷ তাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে ভীষণ আগ্রহী৷ জার্মানি বাংলাদেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক রাষ্ট্র উল্লেখ করেন তিনি৷
এরইমধ্যে জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে গাড়ি তৈরির কারখানা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ এই বিষয়ে সরকারের কাছ থেকেও তাদের আহবান জানানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী৷ ‘‘আমরা সবক্ষেত্রেই তাদের উৎসাহ দিচ্ছি৷ তারা যাতে ফার্মাসিউটিক্যাল, গাড়ি শিল্পে বিনিয়োগ করে,’’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷
এফএস
এসব গাড়ি তৈরি হবে বাংলাদেশে?
ফ্রাঙ্কফুর্টে গাড়ি প্রদর্শনীর বাৎসরিক আয়োজন ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট অটো শো’৷ বাংলাদেশের অনেকেরই বাড়তি নজর থাকে এ আয়োজনের দিকে৷ এখানে প্রদর্শিত বিলাসবহুল গাড়িগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও তৈরি হতে পারে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
মার্সেডেস-বেনৎস ইকিউ সিলভার অ্যারো
ওপরের গাড়িটি জার্মানির মার্সেডেস-বেনৎস কোম্পানির৷ ইকিউ সিলভার অ্যারো মডেলের এই গাড়িসহ মার্সেডেস-বেনৎস এবং বিএমডাব্লিউর নতুন মডেলের অনেক গাড়ি আগামীতে বাংলাদেশেই তৈরি হতে পারে৷ সম্প্রতি জার্মানির ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল এমন প্রস্তাবই রেখেছে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালের কাছে৷
ছবি: Reuters/R. Orlowski
মার্সেডেস-বেনৎস ভিশন আরবানেটিক কনসেপ্ট কার
গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জার্মানির রাষ্ট্রদূত পেটার ফারেনহোলৎস ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালের সঙ্গে দেখা করেন৷ এ সময় তাঁরা বাংলাদেশে জার্মানির দুই বিখ্যাত গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান মার্সেডেস-বেনৎস এবং বিএমডাব্লিউর কারখানা করার প্রস্তাব দেন৷
ছবি: Reuters/R. Orlowski
বিএমডাব্লিউ ভিশন এম নেক্সট
প্রতিনিধি দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাড়ির কিছু যন্ত্রাংশ প্রস্তাবিত কারখানায় সরবরাহ করা হবে৷ বাকি যন্ত্রাংশ তৈরি করে পুরো গাড়ি অ্যাসেম্বল করা হবে বাংলাদেশের কারখানাতেই৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
মার্সেডেস-বেনৎস ভিশন ইকিউএস
জার্মান এশিয়া-প্যাসিফিক বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন এবং জার্মানির চেম্বার অব কমার্স-এর উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফরে আসে৷
জার্মানির ব্যবাসয়ীদের প্রতিনিধি দলে পোশাক শিল্প, ফার্নিচার এবং শিপিং খাতের ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন৷ দু-দেশের মধ্যে এসব সেক্টরেও ব্যবসা প্রসারে প্রতিনিধিরা আগ্রহী৷
ছবি: Reuters/R. Orlowski
মার্সেডেস-বেসৎস ইএসএফ ২০১৯
বিএমডাব্লিউ এবং মার্সেডেস বেনৎস-এর গাড়ি বাংলাদেশে অ্যাসেম্ব্লিংয়ের প্রস্তাবে সায় দিয়ে অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘‘ প্রস্তাবটি ভালো, কারণ, এখানে কারখানা হলে বাংলাদেশকে এমন দামি গাড়ি আর আমদানি করতে হবে না৷ ’’