1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএসএফ বাংলাদেশে এসে ‘বাহাদুরি’ করেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৯ অক্টোবর ২০১৯

গত বৃহস্পতিবার বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্তে প্রবেশ করে ‘বাহাদুরি' দেখিয়েছে৷ এতে বিজিবি বাধ্য হয়েই গুলি করেছে বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷  

Berlin | Außenminister Bangladeschs Abdul Momen im Interview mit Khaled Muhiuddin
ছবি: DW/A. Islam

বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলি এবং এক বিএসএফ সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো যেসব তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷ এই ঘটনার জন্য তিনি বিএসএফকেই দায় দিয়েছেন৷

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১ টায় জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, ‘‘তারাই (বিএসএফ) আমাদের এখানে এসেছে এবং এসে তারা বাহাদুরিও করেছে৷ আমাদের ছেলেদের (বিজিবি) তাদের লাস্ট জব হিসেবে বাধ্য হয়ে গুলি করতে হয়েছে৷''

এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা ওয়ান ইনসিডেন্ট (একটা ঘটনা)৷ একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন ঘটেছে৷''

গত দশ বছরে ৩০০ এর বেশি বাংলাদেশী মারা গেছে বিএসএফের গুলিতে এমন তথ্যের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী বলেন, আগে বিএসএফ বছরে অনেকজনকে মেরে ফেলত আমরা তখন কেবল দু:খ করেছি৷ কিন্তু গতবছর মাত্র তিনজনকে মেরে ফেলেছে৷ একজনের মৃত্যুও অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগে কখনও মামলা করিনি৷ ভারত এখন নতুন করে করেছে৷ কোনো ‘পন্ডিতও’ আমাদেরকে আগে মামলা করার কথা বলেননি৷ আগামীতে বাংলাদেশও এই পথে হাঁটতে পারে বলে জানান তিনি৷ 

ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফর, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি, রোহিঙ্গা ইস্যু ও প্রবাসী প্রসঙ্গেও৷

ভারতকে বাংলাদেশ দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছে

প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের উষ্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার করা৷ এবং তা অর্জন হয়েছে৷ মোমেন বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক আমরা আবার দাড় করিয়েছি৷ উনিও নতুন ভাবে জয়লাভ করেছেন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীও জয়লাভ করেছেন, (এরপর) এটা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর৷ বিভিন্ন ধরণের সমঝোতা হয়েছে৷ এগুলো হবে তা আমরা আশা করেছি কিন্তু আসল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে টু ডেভেলাপ দিস ওয়ার্ম রিলেশনশিপ৷’’

ভারত এবং বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু দিয়েই যাচ্ছে কীনা এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু ডাহা মিথ্যাই না, অনেকে নানা কথা বানিয়ে যাচ্ছেন যারা বিষয়টি পছন্দ করছে না৷ ‘‘আমরা দিয়েছি কিছু এবং সেই সাথে পেয়েছিও কিছু,’’ বলেন তিনি৷ সম্পর্কের স্থিতিশীলতাই বড় পাওনা বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই বড় অর্জন৷ 

মন্ত্রী বলেন, বাহবা দেখানোর জন্য একসময় গঙ্গার ইস্যু আমরা জাতিসংঘে নিয়ে গেলাম৷ সাতাত্তর থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত ভারত এ নিয়ে এক পয়সার দামও দেয়নি বাংলাদেশকে৷ 

ফেনী নদীর পানি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৪ টি অভিন্ন নদী আছে৷ এর মধ্যে বড় নদী সাতটি৷ তিস্তা নদীর বিষয় ভারত স্বীকার করেছে বন্টন হবে৷ কিছু সমস্যা থাকায় তারা ২০১১ সালের সেই ওয়াদা রাখতে পারেনি৷ ফেনীতে যে পানি দেয়া হচ্ছে তা খুবই সামান্য৷ ১২৬ কিউসেকের মধ্যে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক ১ ভাগেরও কম৷ মানবিকতার জন্যই বাংলাদেশ এই পানি দিচ্ছে৷ ‘‘তারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পাম্প নিয়ে পানি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল৷ এমনকি অধিক পানি নিয়ে যাচ্ছিল৷ এখন একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে৷ (যার কারণে) তারা দায়বদ্ধ হয়েছে৷ তারা কিন্তু এখন ১ দশমিক ৮২ কিউসেকের বেশি নিতে পারবে না৷’’ এর মাধ্যমে ভারতকে বাংলাদেশ একটি দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়ায় ট্রানজিট প্রস্তাবে সায় দেয়নি বাংলাদেশ, বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইলিশ রপ্তানি৷ প্রধানমন্ত্রী সেই কূটনৈতিক অবস্থান থেকে  সরে এসেছেন কীনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাউকে খুশি করার জন্য কিছু করেন না৷ ইলিশের পরিমান অনেক বেড়ে গেছে সেইজন্যই দুর্গাপূজার সময় ভারতে ইলিশ পাঠানো হয়েছে৷  

আসামে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে

02:02

This browser does not support the video element.

আসামের নাগরিকপঞ্জির প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না 

ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি তৈরি নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের প্রক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সফরে বিষয়টি তুলে ধরেছেন৷ ‘‘আমরা বলেছি, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি৷ আমরা আর নতুন উদ্বাস্তু চাই না৷ তারা বলেছে যেগুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো একান্ত আমাদের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়৷ এটা নিয়ে আপনাদের কোনো ধরণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই৷ এটার প্রভাব আপনাদের উপর পড়বে না৷ আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই৷’’

১৯৮৫ সালে ভারত সরকার এই নাগরিকত্ব যাচাই বাছাইর সিদ্ধান্ত নেয়৷ তখন যারা সরকারে ছিল তারা এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ 

রাডার স্থাপন বিষয়ে কিছু নির্ধারণ হয়নি

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে৷ যার অধীনে ভারত বাংলাদেশের উপকূলে যৌথভাবে রাডার স্থাপন করতে পারবে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে৷ এর ফলে চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হবে কীনা এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চীন থেকে সাবমেরিন কিনেছিলাম৷ তখন ভারত যদি সাবমেরিন দিত আমরা ভারত থেকেও কিনতাম৷ ভারত তখন সাবমেরিন দিতে পারেনি, আমরা তাই চীন থেকে কিনেছি৷’’

রাডারের যে সমঝোতা হয়েছে তার ভিত্তিতে কী করা হবে সে বিষয় এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ‘‘একটি প্রিন্সিপাল আমরা গ্রহণ করেছি যে, আমাদের অংশগুলো (সমুদ্রসীমা) আমরা দেখভাল করব৷ প্রতিবেশী ভারতের সাথেও জায়গাগুলোর সম্পৃক্ততা আছে সমুদ্রের৷ একসাথে যৌথভাবে আমরা জায়গাগুলো দেখভালের জন্যেই এই সমঝোতা৷ কীভাবে সেটা পরে বিশেষজ্ঞরা ঠিক করবেন,’’ বলেন তিনি৷ 


‘রোহিঙ্গাদের কোথায় নিব তা আমাদের এখতিয়ার’

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের ভূমিকায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ বিষয়টি পুনর্ব্যাক্ত করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে যা করছে সেটি ভাল৷ কিন্তু তারা যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করছে না৷ যেখানে সমস্যা সেই রাখাইন প্রদেশে তাদের যাওয়া উচিৎ৷ সেখানে যাতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয় তাতে জোর দেয়া উচিৎ৷ 

মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের উপর (জাতিসংঘ) মাতব্বরি করার কোনো কারণ নাই৷ আমরা ওদের (রোহিঙ্গা) কোথায় নিয়ে যাব কী না যাব সেটা আমাদের এখতিয়ার, তাদের না৷ আমি তাদের (জাতিসংঘ) দেশ ছাড়ার জন্য বলিনি৷ আমি বলেছি আপনারা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারে গিয়ে বরং বেশি কাজ করেন৷ যাতে রোহিঙ্গারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারে৷ ...আমাদের অনেক উপদেশ দিয়েছেন৷ আমরা জানি আমরা কী করছি৷ আপনাদের উপদেশ আমরা চাই না৷’’ 

কিছু এনজিও যারা রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক মনোভাব প্রচার, জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি ও অস্ত্র দিচ্ছে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ 

রোহিঙ্গাদের সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, এর ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে৷ নেতৃত্ব তৈরি হওয়া খারাপ না৷   


বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাথে জার্মানির বরাবরই ভালো সম্পর্ক রয়েছে৷ চলতি সফরে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করেছেন৷ তাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে ভীষণ আগ্রহী৷ জার্মানি বাংলাদেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক রাষ্ট্র উল্লেখ করেন তিনি৷  

এরইমধ্যে জার্মানির প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে গাড়ি তৈরির কারখানা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ এই বিষয়ে সরকারের কাছ থেকেও তাদের আহবান জানানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী৷ ‘‘আমরা সবক্ষেত্রেই তাদের উৎসাহ দিচ্ছি৷ তারা যাতে ফার্মাসিউটিক্যাল, গাড়ি শিল্পে বিনিয়োগ করে,’’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷ 


 এফএস 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ