1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিকল্প খামার, নতুন সম্ভাবনা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ জানুয়ারি ২০১৯

হাঁস-মুরগি পালন, গরুর খামার বা মাছের খামার করে ভাগ্য বদলে যাওয়ার গল্প বাংলাদেশে এখন আর নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ তবে সম্ভাবনার এই দেশে এরকম অধ্যায় পার হয়ে বিকল্প খামারের দিকে ঝুঁকছেন বাংলাদেশের তরুণরা৷ কেমন সেগুলো?

Afghanistan Kabul Erster Straußenzuchtfarm in Herat
ছবি: DW/S. Tanha

প্রচলিত ধারার বাইরে বাংলাদেশে টার্কি চাষে নতুন সম্ভানার দুয়ার খুলে গেছে৷ মুরগির মাংসের পরিবর্তে টার্কির চাহিদাও বাড়ছে৷ তাছাড়া এই চাষ করে অনেকেই সাবলম্বী হয়েছে, হচ্ছেন৷ হতাশার মাঝে আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন তাঁরা৷ বেকারত্ব ঘুঁচিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন৷ এর বাইরেও কুমির চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে৷ আছে সাপের খামারও৷ এমনকি কচ্ছপের খামার করারও চেষ্টা করছেন কেউ কেউ৷ আর ব্যাঙের চাষ করে তা রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন কোনো কোনো তরুণ৷

সরকার এরইমধ্যে টার্কি খামারকে প্রচলিত খামারের মধ্যে এনে ঋণ সুবিধা দেয়ার চিন্তা করছে৷ সাপের বিষ রপ্তানির অনুমতি পাওয়ারও চেষ্টা করছেন কেউ কেউ৷ কুমির চাষের অনুমতি আছে, তবে রপ্তানির জন্য প্রয়োজন আলাদা অনুমতি৷ সেটা কেউ পেয়েছেন, কেউ আবার পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন৷

ঝিনাইদহের শৈলকুপার দেলোয়ার হোসেন ইংরেজি সাহিত্যে ২০১৪ সালে মাস্টার্স পাশ করেন৷ এরপর চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেই কিছু করার চিন্তা করেন৷ সেখান থেকেই ৬০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলেন টার্কি ফার্ম৷ শুরুতে ৩-৪টি টার্কি দিয়ে তিনি তাঁর স্বপ্নের খামার শুরু করেন৷ কিন্তু এখন তাঁর ফার্মে প্রায় এক হাজার টার্কি আছে৷ তিনি ইনকিউবেটরে ডিম ফুটিয়ে টার্কির বাচ্চাও বিক্রি করছেন আজকাল৷

সেই দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘‘এখন বাংলাদেশের মানুষ টার্কির মাংসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে৷ একটি টার্কিতে মাংস হয় ৬-৭ কেজি৷ প্রতি কেজির দাম প্রায় ৩০০ টাকা৷ আর প্রতিটা বাচ্চা বিক্রি করা হয় ৩শ' থেকে ৪শ' টাকায়৷ এছাড়া টার্কি পোষা যেমন সহজ, এর মাংসও সুস্বাদু৷''

‘অনেকেই টার্কির দিকে ঝুঁকছেন’

This browser does not support the audio element.

দেলোয়ার বলেন, ‘‘বিদেশি এই টার্কি এখন বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়৷ প্রথমে দেশের বাইরে থেকে ডিম ও বাচ্চা আনা হলেও, এখন আর আনতে হয় না৷''

এই টার্কির খামার করে দেলোয়ারের এখন মাসিক আয় ৩০-৪০ হাজার টাকা৷ দেলোয়ার জানান, ‘‘এখনো টার্কি চাষে ব্যাংক ঋণ পাওয় যায় না৷ তবে প্রধানমন্ত্রী আমাদের এক যুব সমাবেশে বলেছেন যে টার্কি চাষে সরকার সহায়তা করবে৷''

সাভারের আমির হোসাইন একজন ‘ল্যান্ড' ব্যাবসায়ী৷ তিনি আসলে শখের বসে চার বছর আগে টার্কির খামার শুরু করেন মাত্র দুই বিঘা জমির ওপর৷ আধুনিক টার্কি খামার নামের এই খামার এখন তাঁর আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে৷ তাঁর খামারে এখন তিন হাজারেরও বেশি টার্কির বাচ্চা রয়েছে৷ বড় টার্কি সব বিক্রি হয়ে গেছে৷ তাই বাচ্চাগুলোই তিনি এখন বড় করছেন৷''

তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশে টার্কি পালন সহজ৷ ফলে অনেকেই টার্কির দিকে ঝুঁকছেন৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় টার্কি চাষের আগ্রহ বাড়ছে৷ দু-তিন লাখ টাকা হলেই একটি টার্কির খামার শুরু করা যায়৷ তাছাড়া টার্কির মাংসের প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে৷ অবশ্য বাংলাদেশের পাঁচতারা হোটেলসহ বড় বড় হোটেল রোস্তারাঁয় টার্কির মাংসের প্রচলন আগে থেকেই ছিল৷''

বাংলাদেশে এখন টার্কি চাষের কতগুলো খামার আছে তার কোনো সুনিদিষ্ট হিসেব নেই৷ তবে দেশের প্রতিটি জেলাতেই এখন টার্কি পালন করা হচ্ছে৷ আমির হোসেইন জানান, ‘‘ভৈরব, নরসিংদী ও গাজীপুরে অনেক টার্কির খামার আছে৷''

বাংলাদেশে সাপের খামারও আছে আলোচনায়৷ দেশের বিভিন্ন এলকায় সাপের কিছু খামারের খবর পাওয়া যায় ঠিকই৷ কিন্তু সাপের বিষ রপ্তানির অনুমতি না থাকায় এখনো তা লাভজনক ব্যবসা হয়ে ওঠেনি৷ তার ওপর খামারের অনুমতিও ঝুলে আছে৷ ফলে অনেকে সম্ভাবনার কথা বললেও তা বাস্তবের মুখ দেখছে না৷ বাংলাদেশের পটুয়াখালী, কুঁড়িগ্রাম, রাজবাড়ি, গাজীপুরে, ধামরাই ও সাভার এলাকায় কয়েকটি সাপের খামার থাকার কথা জানা গেলেও, তা এখনো ব্যবসা সফল হয়ে ওঠেনি৷

তবে টার্কির আগে বাংলাদেশে কোয়েলের (কোয়েল পাখি) চাষ জনপ্রিয় হয়৷ বাংলাদেশে কোয়েলের মাংস এবং ডিমের ভালো চাহিদা আছে৷ ফার্মের পাশাপাশি কেউ কেউ ঘরেও কোয়েল পোষেন৷

গাজীপুরের কাপাশিয়ার বরুণ গ্রামে এরকম একটি সাপের খামারের মালিক প্রদীপ চন্দ্র দাস৷ প্রদীপের বন্যপ্রাণির প্রতি আগ্রহ অনেক আগে থেকেই৷ তিনি সাপ ধরতেও বেশ ওস্তাদ৷ এমনকি মেছো বাঘ, শিয়ালও ধরেছেন অনেক৷ ধরে আবার বনে ছেড়েও দিয়েছেন৷ তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি সাপের খামার গড়ে তোলেন ২০১৭ সালে৷ এইচএসসি পাশের পর কিছু একটা করার নেশাতেই এই সাপের খামার করা৷ ইন্টারনেট ঘেঁটে এবং আগের আগ্রহের সমন্বয় থেকেই তিনি শুরু করেন ‘বরুণ সাপের খামার'৷

‘অনুমোদন পেলে আকার বড় করব’

This browser does not support the audio element.

সাভারের বেদে পল্লির সাপুড়েদের কাছ থেকে সাপ কিনে তিনি প্রথম সাপের খামার শুরু করেন৷ পরে সাপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সক্ষম হন তিনি৷ প্রদীপ চন্দ্র দাস ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সাপের বিষ রপ্তানির কথা মাথায় রেখেই আমি সাপের খামার শুরু করি৷ আমি সাপের বিষ সংগ্রহ এবং তা সংরক্ষণ করতে পারি৷ তবে বাংলাদেশে এই বিষ পাউডার করা সম্ভব নয়৷''

প্রদীপ অবশ্য এখনো এই খামারের অনুমতি পাননি৷ আসলে বাংলাদেশ থেকে সাপের বিষ রপ্তানির অনুমতি নেই৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি বন বিভাগে অনেক আগেই সাপের খামারের জন্য আবেদন করেছি৷ কিন্তু আমার আবেদনটি এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে৷ তবে আমাকে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে৷''

প্রদীপের খামারে শুরুতে অজগর, দাঁড়াস, কেউটে, গোখরা, বালিঘোরা, লাউডগাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪০-৫০টির মতো সাপ ছিল৷ এখন আছে ২০টি গোখরা সাপ৷ প্রদীপ জানান, ‘‘আমি যাদের কাছ থেকে সাপ কিনেছি, তাদের কাছে কিছু সাপ আবার কম দামে বিক্রিও করে দিয়েছি৷ এক বিঘা জমির ওপর ফার্ম শুরু করলেও এখন আকার অর্ধেক করেছি৷ কারণ অনুমতি না পাওয়ায় আপাতত আমাকে ফার্ম ছোট করে ফেলতে হয়েছে৷ অনুমোদন পেলে আবারো আকার বড় করব৷''

তাঁর মতে, ‘‘সাপের খাবারে খরচ কম হয়৷ কারণ সাধারণত সাপ সপ্তাহে একবার খায়৷ সাপের প্রধান খাবার ব্যাঙ, ডিম, ইঁদুর ইত্যাদি৷ বলা বাহুল্য, এখনও পর্যন্ত আমি যা করেছি তা থেকে কোনা আয় আসেনি৷ তবে অনুমোদর পেলে আয় করা সম্ভব৷''

প্রদীপ মনে কারেন, ‘‘বাংলাদেশে সাপের খামারের অনেক সম্ভাবনা আছে৷ এই খামারের মাধ্যমে অনেকেরই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব৷ প্রয়োজন শুধু সরকারি অনুমোদন৷''

এই ফার্মে তাঁর সঙ্গে আরো এক বন্ধু কাজ করেন৷ স্থানীয় প্রশাসনও তাঁর এই খামারকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে৷ তারাও চায় সরকার যেন এই ফার্মের অনুমোদন দেয়৷

এদিকে বাংলাদেশে কুমির চাষ ও তা রপ্তানি করে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে ময়মনসিংহের কুমির খামার৷ জেলার ভালুকার হাতিবের গ্রামে ২০০৪ সালে কুমিরের এই খামার গড়ে তোলা হয়৷ নাম ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড'৷ খামারটি এরই মধ্যে কুমির ছাড়াও কুমিরের মাংস, চামড়া, দাঁত, হাড় ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানি শুরু করেছে৷

জানা গেছে, ২০০৪ সালের মালয়েশিয়ায় ৭৫টি কুমির আমদানি করে এই ফার্ম শুরু হয়৷ এরপর এখানেই কুমির ডিম দেয় এবং তা থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়৷ বর্তমানে এই খামারে বাচ্চা ও বয়স্ক মিলিয়ে দেড় হাজারের মতো কুমির আছে৷ ২১ একর জমির ওপর এই খামারের পুকুরে কুমির চাষ করা হয়৷ খামারের ফলে স্থানীয় প্রায় অর্ধশত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে৷

খামার থেকে কুমির ছাড়াও কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা হয়৷ মাংস, দাঁত ও হাড়ও রপ্তানির শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে৷ কুমিরের মাংস ‘ড্রাইফিড' হিসেবেও রপ্তানি করার পরিকল্পনা আছে৷ খামারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব সোম আর ম্যানেজার আবু সায়েম মোহাম্মদ আরিফ৷ তাঁদের কারুর সঙ্গেই অবশ্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি৷ বরং ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা হয় ঐ খামার সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন করেছেন এমন একজন সাংবাদিকের সঙ্গে৷ তিনি চ্যানেল নাইন-এর ময়মনসিংহ প্রতিনিধি রিপন গোয়ালা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ফার্ম থেকে এখন বছরে কোটি টাকার ওপরে কুমিরের চামড়া, মাংস এবং বাচ্চা রপ্তানি করা হয়৷ প্রধান রপ্তানি বাজার হলো জাপান, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম৷ চামড়া এবং মাংস বিদেশে রপ্তানি হলেও দেশে কুমিরের হাড় এবং দাঁতের বাজার আছে৷ এছাড়া কুমিরও রপ্তানি করা হয়৷ বড় পুকুর আর ছোট ছোট অনেকগুলো ডোবায় এই কুমির চাষ করা হয়৷''

‘বছরে কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়’

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘স্থানীয় যারা এই খামারে কাজ করেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷ বেতনও ভালো দেয়া হয়ে থাকে৷ তবে কুমিরের খামার করতে খরচ অনেক৷''

বাংলাদেশের বান্দরবনের নাইখংছড়ির ঘুমধুম এলাকায় ২৯ একর এলাকায় ‘আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম' নামের খামারটি ১১ বছর ধরে কুমিরের চাষ করছে৷ এখন সেখানে দুই হাজারেরও বেশি কুমির আছে৷ ফার্মের ‘এক্সিকিউটিভ অফিসার' আরিফ ইসলাম সবুজ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের এখানে কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়৷ আমরা এখনো কুমির রপ্তানি করা শুরু না করলেও, রপ্তানির উদ্দেশ্যেই এই ফার্ম করা হয়েছে৷ আমাদের ‘টার্গেট' মাংস এবং চামড়া রপ্তানি করা৷ এছাড়া দাঁত ও হাড়ের চাহিদাও রয়েছে৷ তবে আমরা একটু সময় নিচ্ছি বড় আকারে রপ্তানি শুরু করার জন্য৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘এটি একটি কুমির উৎপাদন কেন্দ্র৷ আমরা শুরুতে মালয়েশিয়া থেকে কুমির আমদানি করে খামার শুরু করি৷ কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই কুমিরের ডিম এবং বাচ্চা উৎপাদন করি৷''

বাংলাদেশে কচ্ছপের খামার গড়ে তোলাও সম্ভব৷ কচ্ছপের মাংসের চাহিদা দেশে যেমন আছে, এই মাংস বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব৷ তিন বছর পরীক্ষামূলক একটি কচ্ছপের খামার চালিয়ে সরকারের অনুমতি না পেয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের কুঞ্জবন গ্রামের মনসুর সরকার৷ তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও বন্যপ্রাণী নিয়ে তাঁর আগ্রহ অনেক৷

মনসুর সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘‘কুঞ্জবন গ্রামীণ কচ্ছপ খামার' ছিল একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প৷ বন বিভাগের সহায়তায় তিন বছর ধরে পরিচালনা করে আমি খামারের কচ্ছপ আবার মুক্ত করে দিয়েছি৷ সরকার যদি এই খামার বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার অনুমতি দিত, তাহলে এটা লাভজনক করা সম্ভব ছিল৷ বাংলাদেশে আমার জানামতে কোনো বাণিজ্যিক কচ্ছপের খামার এখনো নেই৷ কাউকে সেই অনুমতিও দেওয়া হয়নি৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমি দেশি এবং বিদেশি কয়েক প্রজাতির কচ্ছপ চাষ প্রজনন করাতে সক্ষম হয়েছি৷ ডিম দিয়েছে, বাচ্চাও হয়েছে৷ কচ্ছপ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব৷ এর জন্য শুধু দরকার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা৷''

অবশ্য কাঁকড়া চাষ ও রপ্তানিতে সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ এখন কৃত্রিমভাবেই কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সক্ষম৷ কক্সবাজার ও খুলানাসহ অনেক এলাকাতেই এখন বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে৷ বাংলাদেশ থেকে এখন ২০টি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হয় বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়৷ এখনো এই খাতে আলাদাভাবে ব্যাংক ঋণ পাওয়া না গেলেও, কাঁকড়া রপ্তানির একটি নীতিমালা করা হয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে৷

‘সরকার অনুমতি দিলে বাণিজ্যিক করা যেত’

This browser does not support the audio element.

জানা গেছে কাঁকড়া চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক তরুণই বর্তমানে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন৷ স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই৷ এখন বক্সে করে মিঠাপানির কাঁকড়া চাষেরও পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশে৷

অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সামুদ্রিক কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে বহুবছর ধরেই৷ খুলনা এলকায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাঁকড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ‘শিপসা কাঁকড়া ডিপো'-র মালিক রনজিৎ মন্ডল৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লবণ পানির কাঁকড়া মূলত আসে সুন্দরবন থেকে৷ এর পোনাও সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়৷ তারপর পোনাগুলো পুকুরে রেখে বড় করা হয়৷ এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক কাঁকড়া ঘেরে রাখা হয়৷ এমনকি এখন তো ছোট ছোট বক্সে রেখেও কাঁকড়া বড় করা হয়৷ এই পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষে আগ্রহও বাড়ছে৷''

তিনি জানান, ‘‘কাঁকড়া রপ্তানি করতে হলে একটি কাঁকড়ার ওজন কমপক্ষে ১০০ গ্রাম হতে হবে৷ এর চেয়ে কম ওজনের কাঁকড়া পুকুরে রেখে বড় করা হয় রপ্তানির জন্য৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘বাংলাদেশ থেকে এখন অনেক দেশেই কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে৷ এরমধ্যে আছে হংকং, তাইওয়ার, জাপান ও মালয়েশিয়া৷ আর আমাদের দেশেও কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা আছে৷ তবে কাঁকড়ার দাম অনেক৷ একটি ১০০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়া আমরা কিনি প্রায় ৭০ টাকায়৷''

বাংলাদেশে ব্যাঙ চাষেরও সম্ভাবনা রয়েছে৷ তবে পরিবেশের কথা বিবেচনায় রেখে প্রাকৃতির ব্যাঙ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা নিষিদ্ধ৷

এছাড়া বাংলাদেশে প্রজাপতির বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথাও বলছেন গবেষকরা৷ এক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাতি পার্ক সবচেয়ে আলোচিত৷ এর বাইরে গাজীপুরের সাফারি পার্ক, ভাওয়লি জাতীয় উদ্যান ও ডুলা হাজরা সাফারি পার্কে প্রজাপতি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে৷ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন জানান, পতেঙ্গায় গড়ে তোলা ‘ইন্টারন্যাশনাল বাটারফ্লাই পার্ক' বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে খুবই উজ্জ্বল করে তুলেছে৷

এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘‘‘স্টাফ' করা প্রজাপতির ‘অর্নামেন্টাল ভ্যালু' অনেক বেশি৷ এর অনেক দাম৷ সৌন্দর্য পিপাসুরা এগুলো নানাভাবে সাজিয়ে রাখেন৷ তাছাড়া উন্নত বিশ্বে সোলার প্যানেলে প্রজাপতি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এই যেমন কোরিয়া ও জাপান প্রজাপতির পাখার নীচের অংশ ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন অনেকটা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে৷''

‘অপ্রচলিত খামার হচ্ছে, এটা উৎসাহব্যাঞ্জক’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘পার্ক করেও বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব৷ সিঙ্গাপুরে বিমানবন্দরের পাশে যে পার্ক করা হয়েছে, তা বাণিজ্যিকভাবে সফল৷ তাই আমাদের দেশেও ইকো টুরিজম-এর আওয়তায় এ ধরনের পার্ক করে ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব৷''

অধ্যাপক মনোয়ার বলেন, ‘‘ফুলের পরাগায়ন বা প্রকৃতিতে সমতা বজায় রাখার জন্য প্রজাপতির ভূমিকা সবার জানা৷ প্রজাপতি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে৷''

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মনোয়ার প্রজাপতি নিয়ে কাজ শুরু করেন ২০১০ সাল থেকে৷ তখন এটা ছিল ‘বাটারফ্লাই রিচার্স সেন্টার'৷ তিন একর বাগানে এই গবেষণা কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়৷ ২০১৪ সালে এটাকে ‘বাটারফ্লাই পার্ক'-এ পরিণত করা হয়৷ অধ্যাপক মনোয়ার জানান, ‘‘এখানে আমরা প্রজাপতির বসবাস এবং প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছি৷ আমাদের তিনটি কৃত্রিম ড্যাম আছে, পানির ছরা আছে৷ প্রজপাতিদের পছন্দের ১০০টি বিরল গাছ আছে৷ এখানে আমরা প্রতিবছর প্রজাপতি মেলার আয়োজন করি৷''

তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশে তিনশ' প্রজাতির প্রজাপতি আছে৷ এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করতে পেরেছি৷ আমাদের বাগানে এবং ঝোপঝাড়েই তো আমরা চার হাজারের মতো প্রজাপতি ওড়াউড়ি করতে দেখি৷''

প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণীসম্পদ অর্থনীতিবিদ ডা. এ কে এম আতাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিকল্প খামার হিসেবে টার্কি চাষে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে৷ এখন আমরা টার্কি চাষকে আইনগত সুবিধা দেয়ার জন্য কাজ করছি৷ আইন করে টার্কি চাষকে প্রচলিত ফার্মি-এর আওতায় আনার কাজ চলছে৷ এটা হলে প্রচলিত খামারের সব সুবিধা খামারিরা পাবেন৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও টার্কির ব্যাপারে উৎসাহী৷ তিনি বলেছেন, তাঁর বাসাতেও টার্কি আছে৷''

আতাউর রহমান জানান, ‘‘আমি কুমিরের খামারে গেছি৷ সাপের খামারের অনুমোদন দেয়াও প্রক্রিয়াধীন আছে৷''

এই প্রাণীসম্পদ অর্থনীতিবিদের কথায়, ‘‘প্রচলিত খামারের বাইরে বাংলাদেশে অনেক নতুন এবং অপ্রচলিত খামার হচ্ছে৷ এটা উৎসাহব্যাঞ্জক৷ এতে অর্থনীতির নতুন দিক যেমন উন্মোচিত হচ্ছে, তরুণরা কাজের নতুন ক্ষেত্র নিজেরাই তৈরি করছে৷''

পাঠক বিকল্প খামার নিয়ে আপনার আগ্রহের দিকগুলো সম্পর্কে লিখতে পারেন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ