ইদানিং ‘বিকল্প দ্যাখান’ কথাটা বেশ শোনা যায়৷ বাংলাদেশ সরকার হুট করে জ্বালানি তেলের দাম এত বাড়িয়ে দিয়েছে যে সবাই দৃশ্যত হতভম্ব৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারে জ্বালানি তেলের দাম এতটা আগে কখনো বাড়েনি৷ এর কি বিকল্প ছিল না?
বিজ্ঞাপন
জ্বালানি তেলের এই বিপুল দাম বৃদ্ধি নিয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সরকারের কাছ থেকে এখনো পাওয়া যায়নি৷ তবে তিনটি কারণ বলা হচ্ছে:
০১. আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এটা করা হয়েছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সম্প্রতি বেশ কমেছে৷ ফলে এখন কোন মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে স্পষ্ট নয়৷
০২. দ্বিতীয় কারণটি বলা হচ্ছে যে জ্বালানি তেলের পাচাররোধে এই উদ্যোগ৷ কিন্তু ভারতে তেল পাচারের শঙ্কা নতুন কিছু নয়৷ তবে ঠিক কতটা পাচার হয় সেটা নিয়ে প্রকৃত তথ্য নেই৷আর সেই পাচাররোধে সীমান্তে নজরদারির বাড়ানোর বদলে সাধারণ মানুষের পকেটে হাত দেয়াটা খুব দুর্বল যুক্ত মনে হয়৷
০৩. আরেকটি কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোর লক্ষ্যে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে৷ এক্ষেত্রেও বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত রয়েছে৷ কারণ অতীতে দেখা গেছে বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার পরও স্থানীয় বাজারে দাম না কমিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে৷ গত সাত বছরে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা৷ ফলে সেই মুনাফা দিয়ে বর্তমানের লোকসান কেন সমন্বয় করা যাচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য অন্য একটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন৷ তারা মনে করছেন, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফের) কাছে থেকে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেতে ইতোমধ্যে তাদের শর্ত পূরণ শুরু করেছে৷ সেসব শর্তের একটি হচ্ছে জ্বালানি তেলের উপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেয়া৷ গতরাতে তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার কার্যত সেই ভর্তুকি তুলে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ কেন সরকারের এখন নিতে হচ্ছে সেটা নিয়েও আসলে খুব স্পষ্ট বয়ান পাওয়া যাচ্ছে না৷ তবে, সেই আলাপে এখন যেতে চাই না৷ বরং বিকল্প দেখানোর বিষয়ে যাই৷
জার্মানি যে বিকল্প দেখাচ্ছে
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরাসরি ক্ষতির শিকার দেশগুলোর একটি জার্মানি৷ ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশটি অনেকটাই রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর নির্ভরশীল৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক সমাজের নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা আর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের হুমকিধামকির কারণে বিপাকে পড়েছে জার্মানি৷ রুশ গ্যাসের সরবরাহ কমতে শুরু করায় জার্মানদের মধ্যে নানাবিধ শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ আগামী শীতে পরিস্থিতি কী হতে পারে তা নিয়ে রয়েছে৷ এই উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যেও কিছু বিকল্প দেখাচ্ছে জার্মানি৷
০১. ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি খাতে অস্থিরতা শুরুর পর তিনমাসের জন্য জার্মানির গণপরিবহণ ব্যবহারের খরচ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে জার্মানি৷ সব আঞ্চলিক গণপরিবহণ মাসিক নয় ইউরো খরচায় আগস্ট অবধি ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ পাশাপাশি জ্বালানি তেলের উপর থেকে কর কমিয়ে দিয়েছে সরকার৷ ফলে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পর তা ক্রমশ আবার আগের অবস্থার কাছাকাছি ফিরে গেছে৷ এভাবে গণপরিবহণ ও জ্বালানি তেলের খরচ কয়েকমাসের জন্য কম রেখে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার স্থির হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছে জার্মানি৷ পাশাপাশি জ্বালানির বিকল্প উৎস কী হতে পারে সেটাও খুঁজেছে৷
০২. রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে আবার কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে জার্মানি৷ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউরোপের দেশটি কয়লা থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছিল৷ ২০৩৮ সাল নাগাদ তারা পুরোপুরি কয়লামুক্ত হতে চায়৷ কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে কয়লায় আবার ফিরছে ওলাফ শলৎসের সরকার৷ এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে কয়লার জন্য জার্মানির অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভরশীল হতে হবে না৷ অর্থাৎ এক্ষেত্রে জার্মানি পুরোপুরি স্বনির্ভর৷ আগামী দুই বছর জার্মানি কয়লা দিয়ে জ্বালানি ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা করছে৷ এটা করার পরও ২০৩৮ সালের মধ্যে কয়লা থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন জার্মান বিশেষজ্ঞরা৷
০৩. যদি কয়লা দিয়েও ঘাটতি পূরণ অনেকটাই সম্ভব না হয়, তাহলে পরমাণু শক্তির দিকেও পুনরায় ঝুঁকতে পারে জার্মানি৷ জ্বালানি উৎপাদনের এই খাতটিও নিরাপত্তা বিবেচনায় বন্ধ করে দিয়েছিল ইউরোপের দেশটি৷ কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে জনগণের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনে এক্ষেত্রেও নীতি পরিবর্তনে আগ্রহী বার্লিন৷ তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুনরায় শুরু করাটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার৷ ফলে রাতারাতি এখাত থেকে সুবিধা নাও পেতে পারে জার্মানি৷
এছাড়া এলএনজি ও ডিজেলের মজুত বাড়ানোসহ বিকল্প কিছু উৎসও খুঁজে পেয়েছে জার্মানি৷ গ্যাস সরবরাহকরী একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বড় অংশও কিনে নিয়েছে৷ নানাখাতে ভর্তুকি দিচ্ছে৷ মোদ্দাকথা হচ্ছে জনগণের ভোটে নির্বাচিত দেশটির সরকার কঠিন সময়ে জনগণকে সন্তুষ্ট রাখতে যা যা করা সম্ভব সবই করতে শুরু করেছে৷
বাংলাদেশের জন্য বিকল্প
তেল-গ্যাস সংকট কাটাতে জার্মানি কী করছে তা সাংবাদিক হিসেবে জানানো সহজ৷ কারণ ইউরোপের এই দেশটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদানে তেমন রাখঢাক রাখে না৷ বাংলাদেশেরক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন৷ সরকার নানাভাবে প্রকৃত তথ্য গোপনের চেষ্টা করে বলে সাংবাদিকদের পক্ষে অনেক কিছুই জানানো কঠিন৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থপাচার ও অপচয় কমাতে আরো মনোযোগী হওয়া৷ পাশাপাশি বর্তমান সংকট কাটাতে আরো কী করা উচিত সেটা জানাতে অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন৷ সেই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে জনগণকে স্বচ্ছভাবে বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে বিকল্প উদ্যোগ খোঁজা উচিত৷
সেটা না করে হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের উপর ব্যাপক চাপ দেয়া হলো৷ এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সর্বত্রই পড়বে৷ বিশেষ করে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সবচেয়ে বেশি৷ তারা যাতে দেউলিয়া হয়ে না যান সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের সর্বাত্মক উদ্যোগ জরুরি৷
জনবান্ধব হতে চাইলে জনগণের উপর থেকে চাপ কমানোর বিকল্প নেই৷ জার্মানি সেটা ভালোভাবেই বোঝে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কি আদৌ জনবান্ধব হওয়ার তাগাদা অনুভব করে?
লোডশেডিংয়ে রাজধানীর জনজীবন
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল ও গ্যাস সংকটে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চাহিদার সমন্বয় করতে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করেছে সরকার৷ এই লোডশেডিংয়ের কেমন প্রভাব পড়ছে জনজীবনে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং
সরকার দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের এলাকা এবং সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে৷এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘এলাকাভিত্তিক আমরা ঠিক করেছি৷ আগে থেকে আমরা গ্রাহকদের জানিয়ে দেবো৷ প্রথম সপ্তাহে দেখবো৷ আমরা মনে করছি যে, এক থেকে দুই ঘণ্টার মতো মেজার নেবো লোডশেডিংয়ের জন্য৷ তা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘চুরি ঠেকাতে হবে সবার আগে’
ঢাকার পীরেরবাগের ভোলা হেয়ার ড্রেসারের মালিক কার্তিক শীল বলেন, ‘‘শুনছি সারা দুনিয়াতেই সমস্যা চলতেসে৷ এখন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকলে কী আর করা? সরকার চেষ্টা তো করছে৷ কিন্তু আসল কথা হইল, চুরি-দুর্নীতি ঠেকাইতে হবে সবার আগে৷ সরকারি লোক যে কাজেরই দায়িত্ব পায়, সেই কাজেই চুরি করে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কারেন্ট গেলে সবারই অসুবিধা, তয় গরম বাড়লে বেচা-বিক্রিও বাড়ে’
ঢাকার গাবতলি এলাকায় শরবত বিক্রেতা আবদুর রহিমা বলেন, ‘‘আমরা যে বস্তিতে থাকি, সেখানে দিনে কয়বার কারেন্ট যায় হিসাব নাই৷ কারেন্ট গেলে সবারই তো অসুবিধা৷ তয় গরম বাড়লে আমার বেচা-বিক্রিও বাড়ে৷ একদিক দিয়া যেমন অসুবিধা হইসে, অন্যদিকে সুবিধাও হইসে কারো কারো৷ সেই হিসাবে আমি খুশি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘খালি সরকারের দোষ দিয়ে লাভ আছে?’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সবুর মিয়া বলেন, ‘‘লোডশেডিং এই এলাকায় নতুন কিছু না৷ ২৪ ঘণ্টায় কতবার কারেন্ট যায় তার কোনো হিসাব নাই৷’’ তিনি জানান, শুধু কারওয়ান বাজারেই কতশত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তার কোনো হিসাব নেই৷ তাই তিনি একতরফাভাবে শুধু সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারাজ৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ব্যবসা করা কঠিন’
ঢাকার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বৌবাজারের মুদি দোকানি শাহ আজম বলেন, ‘‘আমাগো এদিকে কারেন্ট একটু কমই যায়৷ তবুও এমনে নিয়ম কইরা লোডশেডিং হইলে সবার জন্য একটু সমস্যাই৷ তার উপর আবার রাত আটটা বাজতেই দোকান বন্ধ করন লাগে৷ জিনিসপত্রের দাম অনেক বাড়তি৷ সবমিলাইয়া আমরা ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাইতেসি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জরুরি সেবায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ একাধিক সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো লোডশেডিং নেই৷ সরকার ঘোষিত লোডশেডিং হাসপাতালে হয় কিনা জানতে চাইলে এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘‘শুধু এখন না, আমার গত ১০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি হাসপাতালে লোডশেডিং দেখিনি৷ এখানে অনেক মুমূর্ষু রোগী থাকেন, ইলেকট্রিসিটি না থাকলে তো অক্সিজেনের অভাবে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অলিগলিতে নিয়ম মানা হচ্ছে না
ঢাকার শেওড়াপাড়া-পীরেরবাগ রোডে রাত সাড়ে ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় প্রতিটি দোকানই খোলা৷ সরকারের বিধিনিষেধ না মেনে রাত ৮টার পর দোকান খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে এক দোকানি বলেন, ‘‘ব্যবসাপাতির অবস্থা ভয়াবহ৷ তার মধ্যে এত জলদি দোকানপাট বন্ধ করলে ব্যবসা করবো কীভাবে?’’ অনেকেই দাবি করেন, বিদ্যুৎচালিত ফ্যান-লাইট বন্ধ করে তারা রিচার্জেবল লাইট ব্যবহার করছেন যেন বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
উৎপাদন খরচ বেড়েছে
ঢাকার মিরপুর ১৩-র জকি গার্মেন্টসের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান রাসেল আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন থাকায় লোডশেডিং কম হয়৷ তবে যদি ১ ঘণ্টায় ইলেকট্রিসিটি না থাকে, আমাদের জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেল খরচ বাবদ ১৬ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়৷ এটা আমাদের উৎপাদন খরচকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার পর থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রিচার্জেবল ফ্যান-লাইটের মূল্য বৃদ্ধি করে অন্যায়ভাবে মুনাফা লাভের চেষ্টা করছেন৷ এ প্রচেষ্টা রোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতভাবে বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক এবং জরিমানা করছেন৷
ছবি: Consumer association for Bangladesh
লোডশেডিংয়ের শিডিউল না মানার অভিযোগ
ঢাকার তেজগাঁওয়ের আজিজ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা পুরাপুরি কারেন্টের সাথে সম্পর্কিত৷ কারেন্ট ছাড়া আমরা পুরা বসা৷ সরকার যে ঘোষণা দিসে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা কারেন্ট থাকবে না, সেই নিয়ম তো মানা হইতেসে না৷ তাছাড়া নির্ধারিত যে সময়ে কারেন্ট যাওয়ার কথা, সে সময়েও যায় না, যায় আগে-পরে কোনো এক সময়ে৷ আমরা প্রস্তুতি রেখেও লাভ হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঢাকার বাইরে ভয়াবহ লোডশেডিং
ঢাকার তালতলা কাঁচাবাজারের শাকসব্জি ব্যবসায়ী নুরুল আমিন জানান, ‘‘আমি গ্রামের বাড়িতে আমার মাকে প্রতিদিন ফোন দেই৷ ফোন দিলেই শুনি কারেন্ট নাই৷ এমনকি অনেক সময় ফোনে চার্জও দিতে পারে না কারেন্টের অভাবে৷ আবার আছে ভোল্টেজের সমস্যা, এই সমস্যার কারণে কারেন্টে চলা অনেক জিনিস নষ্ট হইয়া যায়৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সরকারি অফিস-আদালতে নির্দেশনা পালন
ঢাকার মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এয়ার কন্ডিশনার কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এর কারণ জানতে চাইলে এক কনস্টেবল বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর ওসি স্যার এই উদ্যোগ নিয়েছেন৷ এছাড়া প্রাকৃতিক আলো বাতাসের জন্য কক্ষে স্থায়ীভাবে লাগানো জানালাগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাম বাড়ানোর যুক্তি
ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, চকবাজারসহ একাধিক পাইকারি ও খুচরা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রিচার্জেবল সকল পণ্যের দাম বেড়েছে দুইশ থেকে হাজার টাকা৷ যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এটা বাজারের নিয়ম, চাহিদা বেশি থাকলে দাম বাড়বেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এ সমস্যা ক্ষণস্থায়ী’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী কিন্তু জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সংকট চলছে৷ কোভিড পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হওয়ায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আবার খুলেছে এবং তেল-গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে৷এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকট৷ আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ এই সংকটের অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে৷’’