পাবনার বেড়া উপজেলার শহরবানু৷ ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পরই সাভারে ছুটে আসেন তার মেয়ের খোঁজে৷ এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও তিনি সাভারেই আছেন৷ তার মেয়ে শেফালী রানা প্লাজার ৪ তলার নিউ ওয়েভ গার্মেন্টস-এ কাজ করতেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রথমে শহরবানু আশায় বুক বেধে ছিলেন হয়তো তার মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা যাবে৷ সে আশা নিভে গেছে৷ আর এখন তিনি আশায় আছেন যদি লাশটি পাওয়া যায়৷ তাই নতুন কোনো লাশ উদ্ধার হলেই তিনি ছুটে যান৷ ছুটে যান অধরচন্দ্র হাইস্কুল মাঠে, হাসপাতাল মর্গে৷ কিন্তু লাশও মিলছেনা৷ শেষ পর্যন্ত শহরবানু মেয়ের লাশ পাবেন কিনা তাও এখন অনিশ্চিত৷ কারণ এখন যে লাশ উদ্ধার হচ্ছে তা গলে-পঁচে বিকৃত হয়ে গেছে৷ চেনার কোনো উপায় নেই৷ আর এই শহরবানুর মতো শত শত মানুষ এখন হাতে ছবি আর ঠিকানা নিয়ে স্বজনের লাশের অপেক্ষা করছেন৷
রানা প্লাজা ধসের ১০ম দিনে শুক্রবার আরো ৪০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে৷ এপর্যন্ত মোট লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৫০৭টি৷ তার মধ্যে আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৪৩১টি লাশ৷ জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২,৪৪৬ জনকে৷ লাশ আর জীবিত মিলিয়ে এপর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ২,৯৫৩ জনকে৷ আর রানা প্লাজা ধসের সময় ভবনে ৩,২০০ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ ৫,০০০ মানুষ ছিলেন৷ সেই হিসেবে এখনো দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ আছেন৷ আর এখন পর্যন্ত ধসে পড়া ভবনের ৩০ ভাগের মতো অপসারণ সম্ভব হয়েছে৷ উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন এখনো ধ্বংসস্তূপের নীচে অনেক লাশ রয়েছে৷ উদ্ধার অভিযান যতই এগোচ্ছে ততই লাশ বেরিয়ে আসছে৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
ঢাকা জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন ডয়চে ভেলেকে জানান, এখন শুধু বিকৃত লাশ নয়, লাশের অংশ বিশেষও পাওয়া যাচ্ছে৷ তাই সাধারণভাবে লাশ শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷ তাই তারা স্বজনদের কাছে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ হস্তান্তর করতে চাইছেন না৷ এক্ষেত্রে লাশের একটি নম্বর দিয়ে সেই নম্বর অনুযায়ী ডিএনএ নমুনা রেখে আবার সেই নম্বর চিহ্ন দিয়েই আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সহায়তায় জুরাইন কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করছেন তারা৷ এরপর নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজনের ডিএনএ নমুনা নিয়ে তা মিলিয়ে লাশ শনাক্ত করা হবে৷ নয়তো একজনের লাশ অন্যজনের লাশ হিসেবে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে - যা জটিলতার সৃষ্টি করবে৷ তারা শোকার্ত আত্মীয় স্বজনকেও বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছেন৷
তিনি জানান সাভারের তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের ঘটনায় তারা মোট ৫২টি বিকৃত লাশ এভাবে দাফন করেন৷ পরে এপর্যন্ত ৩৯টি লাশ ডিএনএ'র মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে৷