1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবশেষে মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ জানুয়ারি ২০১৯

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ নানা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ হয়েছে৷ বিক্ষোভের সময় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷

Fabrikarbeiter Bekleidungsfabrik Bekleidung Bangladesch Protest
ছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি করা হয়েছে ৮ হাজার টাকা৷ আর তা গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা৷ মালিকরা বলছেন, মজুরি নিয়ম মেনে বাড়ানো হয়েছে৷ কিন্তু শ্রমিকরা বলছেন,মালিকরা ফাঁকি দিচ্ছেন৷

গত তিনদিন ধরে শ্রমিকরা ঢাকাসহ পোশাক শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ করছেন৷ তাঁরা সড়ক অবরোধ ছাড়াও যানবাহন ভাঙচুর এবং যানবাহনে আগুন দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন৷ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা এড়াতে পোশাক শ্রমিক নেতা এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রমভবনে বৈঠক করেছেন বণিজ্যমন্ত্রী ও শ্রমপ্রতিমন্ত্রী৷

’হাসপাতালে আনার আগেই সে মারা যায়’

This browser does not support the audio element.

এরইমধ্যে সাভারে মঙ্গলবার বিকেলের দিকে আনলিমা নামে একটি পোশাক কারখানার একজন শ্রমিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ ওই শ্রমিকের নাম সুমন মিয়া (২২)৷ শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা শামিমুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘একজন শ্রমিকের মুত্যুর খবর শুনেছি৷ তবে আমি নিশ্চিত নই৷'' তবে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আমাজাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান,‘‘বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিহত এক শ্রমিককে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ শ্রমিক এবং শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাঁকে নিয়ে আসে৷ হাসপাতালে আনার আগেই সে মারা যায়৷ এরপর তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যান সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷ ওই শ্রমিক কিভাবে নিহত হলেন তা ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে৷ তবে তাঁর শরীরে জখমের চিহ্ন আছে৷''

সাভারের গেন্ডা এলাকায় শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ গুলি চালায় বলে পোশাক শ্রমিকরা অভিযোগ করেন৷ ওই অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়৷ পুলিশ এক পর্যায়ে গুলি ছোঁড়ে বলে শ্রমিকদের দাবি৷

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে মঙ্গলবারও, অর্থাৎ তৃতীয় দিনের মতো সাভারের শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন৷ সাভারের হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি, আশুলিয়ার খেজুরটেক, পুকুরপাড়, কাঠগড়া, সাভারের উলাইল, রাজাবাড়ি, গেন্ডা এলাকায় সড়ক অবেরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন৷ কমপক্ষে ১৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভে অংশ নেন৷ কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়৷

ঢাকা ও গাজীপুরেও শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে৷ ঢাকার উত্তরা , আজমপুর ও এয়াপোর্ট রোড এলাকায় শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন৷

শ্রমিকরা বেতন নিতে গিয়ে অবস্থা দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন৷

This browser does not support the audio element.

বিমানবন্দর সড়কে নীপা গার্মেন্টস, চৈতি গার্মেন্টস, ফ্লোরা ফ্যাশন, অ্যাপারেলস গার্মেন্টসসহ কয়েকটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা অবরোধের চেষ্টা করেন৷

এর আগে শ্রমিকরা নীপা গার্মেন্টসে আগুন লাগিয়ে দেন৷ চৈতি গার্মেন্টসের শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছোঁড়ে৷

আজমপুর রেলক্রসিংয়ের কাছে পুলিশের সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে৷ উত্তরা জসীমউদ্দিন রোডের কাছে রবিবার থেকে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকরা৷ তাঁদের অবরোধ ও বিক্ষোভের কারণে রবিবার সকাল ৯টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিমানবন্দর থেকে উত্তরা আজমপুর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল৷

কেন শ্রমিক অসন্তোষ?

গত নভেম্বরে পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়৷ তাতে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি করা হয় ৮ হাজার টাকা৷ এই বেতন ৭ম গ্রেডের জন্য৷ এর ফলে ২০১৩ সালের তুলনায় ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা৷ এর মধ্যে মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা৷ ২০১৩ সালে সর্বনিম্ন মজুরি ছিল ৫৩০০ টাকা৷ ৭ নম্বর গ্রেডটি হলো এন্ট্রি গ্রেড৷ অন্যান্য গ্রেডে এই সময়ের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগ হারে মূল বেতন বেড়েছে৷ ফলে মজুরি বাড়ায় অন্য গ্রেডের শ্রমিকরা লাভাবান হননি৷

এক মাসের মধ্যে বেতন বৈষম্যের সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে৷

This browser does not support the audio element.

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৭ নম্বর গ্রেডে ন্যূনতম যে বেতন বাড়ানো হয়েছে তা অন্যান্য গ্রেডের আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি৷ সবচেয়ে বেশি শ্রমিক হলো ৪ এবং ৫ নম্বর গ্রেডে৷ তাঁদের বেতন তেমন বাড়েনি বললেই চলে৷আমরা হিসাব করে দেখিয়েছি, এই দু'টি গ্রেডে বেতন মাত্র ৭৯ টাকা বেড়েছে৷ কোথাও কোথাও শ্রমিকদের বেতন এখন নতুন গ্রেডে কম হয়ে গেছে৷ এটা বেসিকের হিসাব৷ মোট বেতনেও একই অবস্থা৷ ওইসব গ্রেডে মাত্র ৪-৫শ' বেড়েছে৷ আবার কোথাও কমেছে৷ শ্রমিকরা এখন বেতন নিতে গিয়ে বাস্তব অবস্থা দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন৷ আগে এটা তাঁরা বুঝতে পারেননি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আসলে ৭ নম্বর গ্রেডে যে বেতন বাড়ানো হয়েছে তা-ও অনেক কম৷ আমাদের দাবি ছিল ন্যূনতম ১৬ হাজার৷ তারপরও এখন যা ৭ নম্বর গ্রেডে বাড়ানো হয়েছে, আনুপাতিক হারে সব গ্রেডে একইভাবে বাড়ানো দরকার৷ তা না হলে এই সমস্যার সমাধান হবে না৷''

এক মাসের মধ্যে বেতন বৈষম্যের সমাধান?

এদিকে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শ্রম ভবন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসি ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের বৈঠক শেষ হয়৷ বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মালিক ও শ্রমিকদের ৫ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে বাণিজ্য ও শ্রম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ তাঁরা এক মাসের মধ্যে দেখবেন গেজেট অনুযায়ী মজুরিতে কোথায় সমস্যা হয়েছে৷ তাঁরা যে সুপারিশ দেবেন, তা বাস্তবায়ন করা হবে৷ এক মাসের মধ্যে বেতন বৈষম্যের সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আনুপাতিক হারে গেজেট অনুযায়ী সব গ্রেডের বেতন বাড়ানোর দাবি করেছি৷ যে বেতন কম দেয়া হয়েছে, তা আগামী মাসের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করে দিতে হবে৷ আর কিছু কারখানায় এখনো নতুন বেতন কার্যকর হয়নি৷ তাদেরও ডিসেম্বর মাস থেকে হিসাব করে সেই বেতন দিতে হবে৷''

একটি মহল নতুন সরকারকে ঝামেলায় ফেলতে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে৷

This browser does not support the audio element.

পোশাক শিল্পের মালিকরা যা বলেন:

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমই'র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও ছিলেন বৈঠকে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একমাসের মধ্যেই কমিটি তাদের মতামত দেবে৷ যদি ন্যূনতম মজুরির গেজেট বাস্তবায়নে কোথাও কোনো ব্যত্যয় তাঁরা পান, তাহলে তা চিহ্নিত এবং সমাধান করা হবে৷ আমরা কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে নেবো৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে দাবি করেন, ‘‘শ্রমিকদের বেতন একদম কম বেড়েছে বা কোথাও কোথাও কমেছে, এই কথা সত্য নয়৷ সর্বোচ্চ বেড়েছে শতকরা ৫১ ভাগ আর সর্বনিম্ন বেড়েছে ৪১ ভাগ৷ এটা গ্রেড অনুযায়ী বেড়েছে৷''

তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘একটি মহল নতুন সরকারকে ঝামেলায় ফেলতে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে৷ আমরা এরই মধ্যে তিনদিনের আনরেস্ট-এ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি৷ ক্রেতারা আস্থা হারাচ্ছেন৷''

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি আয় খাত তৈরি পোশাক৷ এই খাতে প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ নির্বাচনের আগেই শ্রমিকদের মধ্যে ন্যূনতম মজুরির ‘ফাঁক' নিয়ে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে৷ নির্বাচনের পর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷

শ্রম ভবনের বৈঠকের পর শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জাননো হয়েছে৷ আর পোশাক কারখানায় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ