ইরান মনে করে মাহসা আমিনি হত্যার বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইন্ধন দিচ্ছে৷ তাই ইরাকের উত্তরাঞ্চলের ঘাঁটিতে আবার হামলা চালিয়েছে রেভোল্যুশনারি গার্ড৷
বিজ্ঞাপন
মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদে এখনো বিক্ষোভ চলছে ইরানে৷ বিশ্বের অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে সেই বিক্ষোভ৷ ইরানে প্রতিদিন বাড়ছে গ্রেপ্তার হওয়া বিক্ষোভকারীর সংখ্যা৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় আহত, নিহতও হচ্ছেন অনেকে৷ নরওয়েভিত্তিক ইরানি মানবাধিকার সংস্থা আইএইচআর-এর তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন৷
এদিকে মাহসা আমিনি হত্যা ও হত্যার প্রতিবাদকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে অনেক দেশ৷ সোমবার বার্লিনে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে কড়া ভাষায় নিন্দা জানায় জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, মাহসা আমিনি হত্যা এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার যতটা কঠোর নিন্দা জানানো সম্ভব, ততটাই নিন্দা জানাচ্ছে তারা৷
তবে ইরান সরকার মনে করে, বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভ দমন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ রবিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলি ইরানে অহিংস বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানান৷ পরের দিনই তার জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং দাঙ্গাবাজদের সমর্থন করছে৷
মাহসা আমিনি হত্যা : বিক্ষোভ এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপে
ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন মাহসা আমিনি৷ সহি পোশাক না পরায় তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ আর জীবিত ফেরেননি মাহসা৷ তার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন দেশে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Yasin Akgul/AFP
মাহসা আমিনি
মাহসার বয়স মাত্র ২২৷ কুর্দি পরিবারে জন্ম৷ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের পাশ থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ মাহসার অপরাধ- ঠিকভাবে হিজাব পরেনি৷
ছবি: privat/UGC
তিনদিন পর সংবাদ শিরোনামে
ভোজারা ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরই নাকি অজ্ঞান হয়ে যান মাহসা৷ পুলিশের এমনই দাবি৷ তারপর নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ সেখানে তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যান তরতাজা তরুণী মাহসা৷ইরানের প্রায় সব খবরের কাগজে ছাপা হয় মাহসার রহস্যজনক মৃত্যুর খবর৷
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
মাথায় আঘাত করে হত্যা?
ইরানের নীতি পুলিশের দাবি, মাহসা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তারপরই নাকি তিনি কোমায় চলে যান৷ কিন্তু পরিবার বলছে, মাহসা পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন, তাই হৃদরোগে মারা যাওয়ার তথ্যটি তারা বিশ্বাস করছেন না৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নাদা আল-নাশিফ অবশ্য বলেছেন, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল অথবা কোনো গাড়ির সঙ্গে মাথা ঠুকে দিয়েছিল বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ছবি: Denis Balibouse/REUTERS
ইরানে প্রবল বিক্ষোভ
মাহসা আমিনির নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছে ইরান৷ নানা শহরে বিক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ৷ওপরের ছবিতে রাজধানী তেহরানের এক রাস্তার বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: UGC
এক থেকে হাজার মাহসা
মাহসা হত্যার প্রতিবাদ ইরান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে৷ বিভিন্ন স্থানে নারীরা মাহসার ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ ছবির নীচে লিখছেন, ‘‘আ অ্যাম মাহসা৷’’ ওপরে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ছবি, ইরানি বংশোদ্ভূত এক নারীর হাতেও দেখা যাচ্ছে মাহসার ছবিতে ‘‘আ অ্যাম মাহসা’’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: Paul Zinken/picture alliance/dpa
তুরস্কে বিক্ষোভ
ইস্তাম্বুলের রাস্তায় মাহসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ৷ এই নারীর মতো অনেকেই তুরস্ক থেকেই তুলেছেন হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি৷
ছবি: Francisco Seco/ASSOCIATED PRESS/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
হিজাবে চুল এবং মুখ না ঢাকার কারণে মাহসাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের সন্দেহ৷ তাই ইরানের অনেক নারীই হিজাব পোড়াচ্ছেন, কেটে ফেলছেন নিজের মাথার চুল৷ অন্যান্য দেশেও এভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে৷ ওপরে ইস্তাম্বুলে এক নারীর চুল কাটার মুহূর্ত৷
ছবি: Yasin Akgul/AFP
ফ্রাঙ্কফুর্টে বিক্ষোভ
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে বসবাসরত ইরানিরাও মাহসা হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন৷
ছবি: Boris Roessler/picture alliance/dpa
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ইরানের বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও একই বক্তব্য ইরানের৷ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও বিবৃতি দিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন নিন্দার জবাব দেয়ায় ব্যস্ত, তখন ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ড বাহিনী ব্যস্ত কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি ধ্বংস করায়৷ ইরান সরকার মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদ শুরুর পর থেকেই বলছে, বিক্ষোভে শুধু সমর্থনই নয়, বিক্ষোভকারীদের অস্ত্রও দিচ্ছে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা৷
তাই শনিবার প্রতিবেশী দেশ ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি কুর্দি ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালায় রেভোল্যুশনারি গার্ড৷ সোমবার আবার মুহূর্মুহু হামলা চালায় তারা৷ হামলার পর এর পেছনে যুক্তিও দেখিয়েছে ইরান৷
তাসনিম নিউজের খবর অনুযায়ী, রেভোল্যুশনারি গার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুর্দি ঘাঁটিতে হামলা আসলে কুর্দিরা যা করছে তার ‘উপযুক্ত জবাব'৷